– মোশারফ হোসেন মুন্না।
আজ ৩রা অক্টোবর উপমহাদেশের প্রখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ ওস্তাদ বারীন মজুমদারের মৃত্যুবার্ষিকী। ২০০২ সালের আজকের এই দিনে দীর্ঘ রোগভোগের পর ঢাকার হলি ফ্যামিলি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমান প্রজন্মের অত্যন্ত জনপ্রিয় শিল্পী বাপ্পা মজুমদার ও সঙ্গীতজ্ঞ ও সুরকার পার্থ মজুমদার এর পিতা ওস্তাদ বারীন মজুমদার। ১৯১৯ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারী পাবনা শহরের রাঁধানগর অঞ্চলের বিখ্যাত মজুমদার জমিদার পরিবারে তিনি জন্মগ্রহন করেছিলেন। পিতা নিশেন্দ্র মজুদার ছিলেন একজন অভিনেতা। শৈশবেই তিনি কলকাতার সঙ্গীতগুরু ভীষ্মদেব চট্টোপাধ্যায়ের কাছে সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। সেখানে তিনি শেখেন রাগ ভূপালি। তারপর আবার পাবনায় ফিরে আসেন বারীন মজুমদার এবং সঙ্গীতে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে তিনি লক্ষ্মৌ যান। সেখানে প্রথমেই তাঁর পরিচয় হয় ওস্তাদ উদয় শংকর, রবি শংকর এবং চিন্ময় লাহিড়ির মত বিখ্যাত জনদের সাথে। সেখানে মরিস কলেজ অব মিউজিকে ভর্তি হন তিনি। লক্ষ্মৌয়ের ওস্তাদ রঘুনন্দন গোস্বামীর কাছেও সঙ্গীত শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪৩ সালে লক্ষ্মৌ ‘মরিস কলেজ অব মিউজিক’ থেকে সঙ্গীত বিশারদ ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত তিনি পণ্ডিত শ্রীকৃষ্ণ রতনজনকর, অধ্যাপক জে এন নান্টু, ওস্তাদ হামিদ হোসেন খাঁ, চিন্ময় লাহিড়ী, ওস্তাদ ফৈয়াজ খাঁ ও ওস্তাদ খুরশীদ আলী খাঁর কাছে স্বতন্ত্রভাবে তালিম নেন।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর ফিরে আসেন জন্মভূমি তৎকালীন পূর্ববাংলায়। জীবিকার হিসেবে কিছুদিন বেছে নেন ফটোগ্রাফি। কিন্তু সঙ্গীতের নেশায় বেশি দিন ফটোগ্রাফি করতে পারেন নি। ১৯৫৭ সালে উচ্চাঙ্গ সঙ্গীতের অধ্যক্ষ হিসেবে যোগ দেন বুলবুল একাডেমীতে। এ সময়ে তিনি ঢাকা বোর্ডের সঙ্গীত সিলেবাস প্রণয়ন করেন এবং ঢাকা রেডিওতে বিশেষ শ্রেণীর শিল্পী হিসেবে রাগসঙ্গীত পরিবেশন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে ‘কলেজ অব মিউজিক’ নামে এ দেশের প্রথম সঙ্গীত কলেজ প্রতিষ্ঠা করেন। যা শুরু হয়েছিল ১৬ জন শিক্ষক ও ১১ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে। ১৯৭২ থেকে ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশ বেতারের অডিশন ও গ্রেডেশন বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। অবশ্য এর অনেক আগে থেকেই তিনি বিশেষ শ্রেণীর রাগ সঙ্গীতশিল্পী ছিলেন ঢাকা বেতারের। ১৯৮৬ সালে ওস্তাদ বারীণ মজুমদার ‘মণিহার সঙ্গীত একাডেমী’ প্রতিষ্ঠা করেন। এ সময় তিনি সঙ্গীতের পাঠ্যপুস্তক ‘সঙ্গীতকলি’ ও ‘সুর লহরী’ প্রণয়ন করেন।
তিনি একুশে পদক, স্বাধীনতা পদকসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভুষিত হয়েছেন। মৃত্যুদিনে তাকে স্মরন করছি গভীর শ্রদ্ধায়। সঙ্গীত চর্চায় ও সঙ্গীত শিক্ষায় অসামান্য ও গৌরবোজ্জ্বল অবদানের জন্য প্রয়াত ওস্তাদ বারীণ মজুমদার পেয়েছেন অসংখ্য সম্মাননা ও পুরস্কার। ১৯৮৩ সালে তাঁকে একুশে পদকে ভূষিত করা হয়। বেগম জেবুন্নেসা ও কাজী মাহবুবউল্লা ট্রাস্ট পুরস্কার পান ১৯৮৮ সালে। ছায়ানট ১৯৯০ সালে তাঁকে সিধু ভাই পুরস্কার দেয়। বারীন মজুমদার ১৯৯৭ সালে পাবনা পদক ও ১৯৯৮ সালে জনকণ্ঠ গুণীজন সম্মাননা পদক পান। ১৯৯৯ সালে অর্জন করেন বাংলা একাডেমী ফেলোশিপ। ২০০২ সালে তাঁকে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হয়।