asd
Friday, November 22, 2024

যদি রাত পোহালে শোনা যেত…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা জনপ্রিয় একটি গান ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত, বঙ্গবন্ধু মরে নাই’। চলুন জেনে নেই গানটি নিয়ে এর গীতিকার হাসান মতিউর রহমান এবং সুরকার ও প্রথম কন্ঠশিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলির কথা।

হাসান মতিউর রহমান –

১৯৯০ সালের কথা। আওয়ামী লীগের সম্মেলন হবে। সম্মেলনে পরিবেশনের জন্য বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনাকে নিয়ে দুটি গানের পরিকল্পনা করা হয়। আমার করা ‘আমি বন্দি কারাগারে’সহ কয়েকটি গান তখন বেশ জনপ্রিয়।
আওয়ামী লীগের এক নেতা আমাকে বলেন, আমি যেন মলয় কুমার গাঙ্গুলীর সঙ্গে যোগাযোগ করি। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগের পর রাতে গানটি লিখতে বসি। অনেক ভেবেও কোনো লাইন পাচ্ছিলাম না। ঠিক আজানের আগে একটা প্লট পেলাম। মনে হলো রাত তো শেষ হয়ে যাচ্ছে। ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই!’ সঙ্গে যোগ করলাম, ‘যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো বন্ধবন্ধুর মুক্তি চাই!’ এতে কল্পনায় বঙ্গবন্ধুকে যেমন বাঁচিয়ে রাখা হচ্ছে, তেমনি জেল থেকে তাঁকে মুক্ত করার কথা বলা হচ্ছে। এরপর পুরো গানটা শেষ করি। সকাল ১০টায় মলয় কুমার গাঙ্গুলীর কাছে নিয়ে যাই। লেখাটা পড়ে তিনি বলেন, ‘অসাধারণ হয়েছে। চলেন দুজন মিলে সুর নিয়ে বসে যাই।’ লেখার সময় সুরের একটা আইডিয়াও মাথায় ছিল। সেটা শেয়ার করার পর তাঁর জন্য কাজটা আরো সহজ হয়ে যায়। সম্মেলনে গানটি তিনি লাইভ পরিবেশন করেন। শেখ হাসিনাসহ উপস্থিত সবার বেশ প্রশংসাও কুড়ান। তবে গানটি আলোচনায় আসে ১৯৯১ সালে। নির্বাচনের সময় এই গানের সঙ্গে আরো কিছু গান ও বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ভাষণসহ ‘জনতার নৌকা’ নামে একটি এ্যালবাম বের করি আমার প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান চেনাসুর থেকে। এক দিনেই সারা দেশে ছড়িয়ে যায় গানটি। ক্যাসেটটি কেনার জন্য মানুষ মারামারি পর্যন্ত করেছে। ভেরিয়েশনের জন্য ১৯৯৭ সালে গানটি সাবিনা ইয়াসমীনকে দিয়ে আবার গাওয়ানোর সিদ্ধান্ত নেন নেত্রী। তাঁর সঙ্গে জীবনে যতবার দেখা হয়েছে ততবারই গানটির প্রশংসা করেছেন। বঙ্গবন্ধুভক্ত অসংখ্য মানুষের ভালোবাসাও পেয়েছি।

মলয় কুমার গাঙ্গুলী এই গানটি নিয়ে বলেন, বাঙালি সত্তার অধিকারের জন্য, একটি স্বাধীন দেশ প্রতিষ্ঠার জন্য, একটি দেশের জন্মের জন্য আমরা সৈনিক হয়েছিলাম, আমরা যুদ্ধ করেছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে আমরা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলাম। এই যুদ্ধ একদিনে হয়নি। অনেক ত্যাগ, আন্দোলন, সংগ্রামের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রাম, পূর্ণাঙ্গ একটি যুদ্ধে রূপলাভ করে। সেই যুদ্ধকালীন সময়ে আমি একজন শব্দসৈনিক হিসেবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে কাজ করেছি। অর্থাৎ যুদ্ধে অবধারিত মৃত্যু জেনেও আমি যুদ্ধে গিয়েছিলাম। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে আমরা যারা কাজ করেছি তাদের মধ্যে কোন ভয়-ভীতি কাজ করেনি।
শুধু একটি লক্ষ্য ছিলো, এ যুদ্ধে আমাদের জয়ী হতে হবে এবং স্বাধীনতা অজির্ত না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম চলছে, চলবে। স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছে, বাংলাদেশ নামে একটি দেশের জন্ম হয়েছে, আমি সেই দেশের প্রতিষ্ঠায় নিজেকে সম্পৃক্ত করতে পেরেছি -এটাই আমার অনুভূতি। এই সম্পৃক্ততার মধ্যে যে ভালো লাগা সেটা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না এবং এটাই আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া।

১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর আমার ভেতর প্রচন্ড জ্বালা-যন্ত্রণা হচ্ছিল। এ কথা সত্য যে, বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর কোন ধরনের প্রতিবাদ চোখে পড়েনি। কেউ প্রতিবাদ করতে পারেনি, প্রতিবাদ করতে দেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুর হত্যার পর আমার ভেতর এক ধরনের তীব্র যন্ত্রণা কাজ করতো, সেই যন্ত্রণারই বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে- ‘যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই’ এই সঙ্গীত। কারণ সে দিনের ঘটনায় বঙ্গবন্ধু যদি বেঁচে যেতেন তাহলে তিনি বিশ্ব নেতা হতেন – এটা আমার কল্পনায় এসেছে। আর আমরা আমাদের জাতির পিতাকে ফিরে পেতাম এবং আমাদের জাতির ভাগ্য অনেক রকম অপূর্ণতায় না থেকে পূর্ণতা লাভ করতো। এই গানটি আমি সুর করেছি এবং আমি নিজে গেয়েছি। লিখেছেন হাসান মতিউর রহমান। গানটি লেখার জন্য আমি তাকে অনুপ্রাণিত করেছি এবং বিষয়বস্তু সম্পর্কে তাকে ধারণা দিয়েছি। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে, একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে জাতির পিতার নির্মম হত্যাকান্ডের বিরুদ্ধে আমার এ গান প্রতিবাদের ভাষাস্বরূপ প্রতিধ্বনিত হবে। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার যতদিন পর্যন্ত সুসম্পন্ন না হবে ততদিন পর্যন্ত আমি এ গান গেয়ে যাব।

যদি রাত পোহালে শোনা যেত
কথা : হাসান মতিউর রহমান
সুর ও কণ্ঠ : মলয় কুমার গাঙ্গুলী

যদি রাত পোহালে শোনা যেত
বঙ্গবন্ধু মরে নাই
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই, মুক্তি চাই, মুক্তি চাই
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা
আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা
যদি রাত পোহালে শোনা যেত
বঙ্গবন্ধু মরে নাই

যে মানুষ ভীরু কাপুরুষের মতো
করেনি তো কখনো মাথা নত
এনে দিলে হায়েনার ছোবল থেকে
আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা –

কে আছে বাঙালি তাঁর সমতুল্য
ইতিহাস একদিন দেবে তাঁর মূল্য
সত্যকে মিথ্যার আড়াল করে
যায় কি রাখা কখনো তা –

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles