– মোশারফ হোসেন মুন্না।
শোকাবহ ১৫ আগস্ট আজ। ১৯৭৫ সালের এই দিনে কতিপয় বিপথগামী সেনা সদস্যের হাতে সপরিবারে নির্মমভাবে শাহাদাত বরণ করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সেদিন দেশে না থাকায় প্রাণে বেঁচে গিয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা। শোকসন্তপ্ত জাতি আজ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে চিরঞ্জীব বঙ্গবন্ধুকে বিশেষভাবে স্মরণ করছে। যাঁর গৌরবময় নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, সেই মহান নেতাকে সপরিবারে হত্যা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক ঘটনা। ঘাতক দল ভেবেছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধুর নাম পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে ফেলবে। কিন্তু তাদের সে স্বপ্ন সফল হয়নি। বঙ্গবন্ধু বাঙালীর প্রেরণা। তাকে ঘিরে রচিত হয়েছে বহু গান ও কবিতা। বাংঙ্গালী মনে রেখেছেন তার কথা বিভিন্ন ভাবে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনেক গান। সেই একাত্তর থেকে শুরু করে এখনো রচিত হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গান তৈরির এই প্রয়াস শুরু হয়েছে ১৯৭১ সালেই। ১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান লিখেছিলেন ওপার বাংলার প্রখ্যাত কবি, ছড়াকার কাহিনিকার ও গীতিকার লক্ষ্মীকান্ত রায়।
‘স্বাধীনতাকামী বাংলাদেশের
পরিত্রাতা কে?
সাড়ে সাত কোটি বাঙালির
আজ ভাগ্য বিধাতা কে ?
একটি সুরেতে কে দিয়েছে
বেঁধে বাঙালির অন্তর?
সে তো শেখ মুজিবুর!
ধন্য হে মুজিবুর’।
একই সময়ে গোরী প্রসন্ন মজুমদার লিখলেন সেই গান, যা সুর করলেন অংশুমান রায়। সেই এক গান আকাশ-বাতাস ছাপিয়ে এতবেশি জনপ্রিয় হয়ে গেল, আজ এই সময়ে এসেও সব বয়সী বাঙালিকে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ করে এই গান। মনে করিয়ে দেয় জাতির মহা নায়কের কথা । সেই তুমুল জনপ্রিয় গানের প্রতিটা শব্দ যেন সবার মুখস্থ শোন একটি মুজিবরের থেকে লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি প্রতিধ্বনি, আকাশে বাতাসে ওঠে রণী, বাংলাদেশ আমার বাংলাদেশ। এ দেশের ইতিহাসের সঙ্গে যাঁর নাম ওতপ্রোতভাবে জড়িত, দেশের মানুষের হৃদয়ের মণিকোঠায় যাঁর স্থান, কোন হুকুম বা ফরমান দিয়ে তাঁর নাম মুছে ফেলা যায় না, তাঁর অবদানকে খাটো করা যায় না।
দেশকে তিনি ভালবেসেছেন অকৃত্রিমভাবে, দেশের মানুষও তাঁকে দিয়েছে হৃদয় উজাড় করা ভালবাসা। তাই খুনী ঘাতকচক্র ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের সব চক্রান্ত, চেষ্টা, তৎপরতা ব্যর্থ হয়ে গেছে। বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন সোনার বাংলা গড়ার। সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করার মাধ্যমেই তাঁর প্রতি সর্বোৎকৃষ্ট শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব। সেই শ্রদ্ধার আবেগ ভরা অনুভূতি প্রকাশ হয় তার জন্য লেখা আরেকটি জনপ্রিয় গানের মাধ্যমে। সেই ১৯৯০-র দিকে এসে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তৈরি আরও একটি গান জনপ্রিয় হয়ে যায়। সেই গান মানুষের হৃদয়কে আবেগে আক্রান্ত করে দেয়। হাসান মতিউর রহমান লিখলেন সেই কালজয়ী গান, নিজের সুরে সেই গান গাইলেন মলয় কুমার গাঙ্গুলী। গানের কথা যদি রাত পোহালে শোনা যেত বঙ্গবন্ধু মরে নাই। এভাবে অসংখ গানের মাঝে বেচেঁ আছেন এই মহান নেতা।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার মহান স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গান লিখেছেন সিডি চয়েস মিউজিকের কর্ণধার এমদাদ সুমনও। গানের শিরোনাম ছিল ‘বঙ্গবন্ধু হে মহান নেতা’। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন আওয়ামী যুব মহিলা লীগের কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সঙ্গীতশিল্পী বর্ষা চৌধুরী। গানটির সুর করেছেন এফ এ প্রীতম। নতুন প্রজন্ম গানটির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর চেতনায় জাগ্রত হবে বলে প্রত্যাশা ছিল তার। এই মহান মানুষটিকে নিয়ে গেয়েছিলেন
জনপ্রিয় শিল্পী এস আই টুটুল ও। গেয়েছেন ফাহমিদা নবী, সুফিয়া কাঙ্গালিনী, এন্ড্রোকিশর, সুবীর নন্দী, আব্দুল জাব্বার সহ আরো অনেকে। সবার গানের মাঝে বেচেঁ আছেন জাতীর পিতা বঙ্গবন্ধু।
যে বাড়িতে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে শহীদ হয়েছেন সেই ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটি এখন জাতির অন্যতম আবেগময় স্মৃতিচিহ্নে পরিণত হয়েছে। আর বঙ্গবন্ধু বাঙালী জাতির প্রেরণা হয়ে দাঁড়িয়েছেন। ঘাতকরা বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশের সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়ার যে পথ সৃষ্টি হয়েছিল সে পথ থেকে দেশকে সরিয়ে বিপরীতমুখী করার উদ্দেশ্য ছিল তাদের বড় একটি লক্ষ্য। তাদের লক্ষ্য ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভুলিয়ে দেয়া। মুক্তিযুদ্ধের অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর অবদানকে খাটো করা এবং যে অসাম্প্রদায়িক চেতনার মধ্যে বাংলাদেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই চেতনাকে নস্যাত করে দেয়া।