– মোহাম্মদ আমিন আলীফ।
দেশ বরেণ্য সঙ্গীতজ্ঞ আলাউদ্দীন আলী আর নেই। আজ ৯ই আগস্ট বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি অসুস্থ ছিলেন। গতকাল শনিবার ভোর পৌনে পাঁচটায় তাঁকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়লে এবং তার শরীরে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ায় ও তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে দেওয়া হয়।
৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পাওয়া বাংলাদেশের বরেণ্য সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গীতিকার আলাউদ্দিন আলী। ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার পুরস্কৃত হয়ে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি যেই রেকর্ড আজ পর্যন্ত কেউ ভাঙতে পারেনি। তাঁ মৃত্যুতে দেশের সঙ্গীত সমাজ একজন অভিভাবককে হারালেন।
শ্রদ্ধেয় আলাউদ্দীন আলী ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন। ২০১৫ সালের ৩ জুলাই প্রথমে আলাউদ্দীন আলীকে ব্যাংককে নেয়া হয়েছিল। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায়, তাঁর ফুসফুসে একটি টিউমার রয়েছে। এরপর তাঁর অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসাও চলছিল। তারও আগে বেশ কয়েক দফায় তাঁকে মহাখালীর ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায়ও ভুগছিলেন। দীর্ঘদিন বাংলাদেশ ও ব্যাংককে তাঁর চিকিৎসা হয়। সাভারে সেন্টার ফর রিহ্যাবিলিটেশন অব প্যারালাইজড কেন্দ্রেও চিকিৎসা করিয়েছেন। ২০১৫ সাল থেকেই আলাউদ্দিন আলীর পরিবার এবং সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকার পরিবারের মধ্যে নিয়মিত যোগাযোগ হয় উনার শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেওয়া হয়।
দেড় বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে ঢাকার মতিঝিলের এজিবি কলোনিতে চলে আসেন আলাউদ্দীন আলী। তিন ভাই ও দুই বোনের সঙ্গে সেই কলোনিতেই বড় হন এই গুণী শিল্পী। সংগীতে প্রথম হাতেখড়ি ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছে। পরে ১৯৬৮ সালে বাদ্যযন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রজগতে পা রাখেন। শুরুটা শহীদ আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে, পরে প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজের সঙ্গে কাজ করেন দীর্ঘদিন। গুণী মানুষটির জন্ম ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার বাঁশবাড়ি গ্রামে। তাঁর বাবা ওস্তাদ জাদব আলী। মায়ের নাম জোহরা খাতুন। তিনি একই সঙ্গে সুরকার, সংগীত পরিচালক, বেহালাবাদক ও গীতিকার।
তিনি দেশবিদেশের প্রতিভাবান শিল্পী, গীতিকার, ও মিউজিসিয়ানদের নিয়ে কাজ করেন। ওনার সহযোগীতায় সঙ্গীতাঙ্গনে আশ্রয় পেয়েছেন এদেশের অনেক স্বনামধন্য শিল্পী ও গীতিকবি।
আলাউদ্দিন আলী আমাদের উপহার দিয়েছেন এমন কিছু গান যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম মনে রাখবে। আলাউদ্দিন আলীর অসংখ্য গানের থেকে কিছু গান।
১. ও আমার বাংলা মা
২. সূর্যোদয়ে তুমি সূর্যাস্তেও তুমি
৩. আমায় গেঁথে দাওনা মাগো
৪. ভালোবাসা যত বড় জীবন তত বড় নয়
৫. তুমি এমন কোন কথা বলো না
৬. ভালোবাসা আমাদের প্রানের বাঁধন
৭. শত জনমের স্বপ্ন তুমি
৮. ভেঙ্গেছে পিঞ্জর
৯. বাবা বলে গেলো আর কোনদিন
১০. একবার যদি কেউ
১১. দু:খ ভালোবেসে প্রেমের খেলা খেলতে হয়
১২. জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো
১৩. এই দুনিয়া এখন তো আর
১৪. এমনও তো প্রেম হয়
১৫. কেউ কোনদিন আমারে তো কথা দিল না
১৬. সবাই বলে বয়স বাড়ে
১৭. চোখের নজর এমনি কইরা
১৮. হায়রে কপাল মন্দ
১৯. আছেন আমার মুক্তার
২০. যেটুকু সময় তুমি থাকো পাশে
২১. সুখে থেকো ও আমার নন্দিনী
২২. যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়
২৩. হয় যদি বদনাম হোক আরো
২৪. বন্ধু তিন তোর বাড়ি গেলাম
২৫. প্রথম বাংলাদেশ আমার শেষ বাংলাদেশ
২৬. কিছু কিছু মানুষের জীবনে ভালোবাসা চাওয়াটাই ভুল
২৭. আমার কবরে তুমি দিওনা ফুল
২৮. বন্ধু এ অন্ধ হৃদয়
২৯. আকাশের সব তারা ঝরে যাবে
৩০. একটা কথা জানে আমার মন
৩১. এ জীবন তোমাকে দিলাম
৩২. কারো আপন হতে পারলিনা অন্তর
৩৩. দু:খ চির সাথীরে সুখ তো আসে যায় রে।
৩৪. হারানো দিনের মতো।
৩৫. শত জনমের স্বপ্ন তুমি আমার জীবনে এলে।
৩৬. আমার মনের ভিতর অনেক জ্বালা
৩৭. কিবা যাদু জানো
৩৮. চিটি এলো জেল খানাতে অনেক দিনের পর।
৩৯. সুন্দর সন্ধ্যায় এ গান দিলাম উপহার।
এছাড়াও রয়েছে আলাউদ্দিন আলীর সুরে অনেক জনপ্রিয় গান। বাংলা গানের সোনালী গানের সুরকার বলা হয় আলাউদ্দিন আলীকে।
সুর সাধনার মধ্যদিয়ে তিনি মিশে আছেন এবং বেঁচে থাকবেন এদেশের মানুষের অন্তরে।
সঙ্গীতাঙ্গন পরিবার ও দেশের সঙ্গীত সমাজ তাঁকে চিরজীবন মনে করবেন ও তাঁর বিদেহী আত্নার শান্তি কামনা করছি। আমাদের সকলের দোয়া আল্লাহ্ তাকে বেহেস্থ নসীব করুন।