আমাদের দেশের সঙ্গীত তারকাদের অনেক অনেক মজার সব তথ্য বা তাদের পছন্দ, অপছন্দ নিয়ে তারকাদের তুলে ধরা হয় এই বিভাগে। আশাকরি আপনাদের পছন্দের প্রিয় তারকার এই সব তথ্য নিশ্চয়ই আপনাকে আন্দোলিত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। আসুন জেনে নেই এ সপ্তাহের প্রিয় তারকার সম্পর্কে –
নাম : রীনাত ফওজিয়া।
ডাক নাম : রিমি।
পিতার নাম : মোবারক হোসেন খান (বিশিষ্ট মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সাবেক মহাপরিচালক, সংগীত গবেষক, সংগীত গবেষণার জন্য একুশে পদকপ্রাপ্ত, স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্ত)।
মাতার নাম: ফওজিয়া খান (ষাট দশকের জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী, বোনেরা সবাই প্রখ্যাত কন্ঠশিল্পী, ফরিদা ইয়াসমীন, নীলুফার ইয়াসমীন, সাবিনা ইয়াসমিন)।
ভাই/বোন : আমি বড়। আমার পরে ভাই, ড.তারিফ হায়াত খান (রূপক)। পেশায় স্থপতি, আমেরিকার এ এন এম ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করে। সৌখিন বা এমেচার সরোদ এবং তবলাবাদক। তার পরে আরেক ভাই, তানিম হায়াত খান (রাজিত)। অস্ট্রেলিয়াতে এম বি এ করে সেখানেই শিক্ষকতা করছে। সরোদ শিল্পী হিসেবে ইদানিং বেশ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।
পড়াশুনা : এম.এস., হোম ইকনোমিক্স (ঢা.বি.), পোস্ট গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা (নেদারল্যান্ড), এম.ফিল., সংগীত (ঢা.বি.)। সংগীতে পিঁ.এইচ.ডি. শুরু করেছিলাম। কিন্রু সুপারভাইজার ড.মৃদুল কান্তি চক্রবর্তীর অকাল মৃত্যুর ফলে সেটা আর শেষ করা সম্ভব হয়নি।
পেশা : শিক্ষকতা, বিসিএস (শিক্ষা ক্যাডার)। বর্তমানে অধ্যাপক, গভঃ হোম ইকনোমিক্স কলেজ, ঢাকা।
অন্যান্য যোগ্যতা : সংগীত বিষয়ক প্রবন্ধ এবং গবেষণামূলক লেখা পত্রপত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হয়। জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের সংগীত বিষয়ক সিলেবাস তৈরী এবং পুস্তক রচনায় দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা রয়েছে। মাঝে মাঝে গান লিখি ও সুর করে থাকি।
বিয়ে, ছেলেমেয়ে : ১৯৮৫ সালে বিয়ে, ১৯৮৬ সালে একমাত্র সন্তান তাহসিন খানের জন্ম। তাহসিন খান প্রতিশ্রুতিশীল কন্ঠশিল্পী, বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত কন্ঠশিল্পী। পেশায় আইনবিদ এবং একটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের এসিস্ট্যান্ট প্রফেসর।
সঙ্গীতে কবে থেকে হাতেখড়ি : গান শেখা শুরু কবে থেকে বলতে পারি না, কারণ “যেদিন থেকে জ্ঞান সেদিন থেকে গান”। গান সম্ভবত জন্মের আগে থেকেই শিখে আসছি, কারণ মা হলেন কন্ঠশিল্পী এবং আমাদের জন্ম যে সময়ে সেই সময়ে তিনি নিয়মিত প্রতিদিন গলা সাধতেন এবং গান গাইতেন। ১৯৮২ সালে এস এস সি পরীক্ষা দিয়ে আমি বাজনা শুরু করি। হাতে খড়ি আমার চাচাতো ভাই বিশিষ্ট সরোদ শিল্পী ওস্তাদ শাহাদত হোসেন খানের কাছে। ১৯৮৪ সাল থেকে ফুফাতো ভাই বিশিষ্ট সেতার শিল্পী ওস্তাদ খুরশিদ খানের কাছে তালিম নেওয়া শুরু করি। তিনি ছায়ানটের সংগীত শিক্ষক ছিলেন। আমি ছায়ানটে ভর্তি হই এবং পাঁচ বছরের কোর্স সম্পূর্ণ করে সার্টিফিকেট লাভ করি। তবে উচ্চাঙ্গ সংগীত এত অল্প সময়ে শেখা যায় না। আমি গুরুশিষ্য পরম্পরায় সংগীতের নিবিড় তালিম নিয়েছি দীর্ঘ ২৬ বছর ওস্তাদ খুরশিদ খানের কাছে। মাঝে বড় চাচা ওস্তাদ আবেদ হোসেন খান সংগীতের কিছু কিছু কৌশল নিয়ে আমাকে তালিম দিয়েছেন।
সঙ্গীতে আসার পেছনে কার অনুপ্রেরণা দোলা দেয় : সবচেয়ে বড় অনুপ্রেরণার উৎস যিনি, তাঁর কোন স্মৃতি আমার নাই। তিনি আমার পিতামহ ওস্তাদ আয়েত আলী খান। বড় হয়ে ওঠার সাথে সাথে তাঁর অনেক অনেক গল্প শুনলাম বাবা মায়ের কাছে, সেই সাথে বাবার লেখা বই থেকে তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারলাম। সবকিছু আমাকে এমনভাবে নাড়া দিলো, আমি ঠিক করে ফেললাম আমি সেতার বাজাবো এবং উচ্চাঙ্গ সংগীতের সাধনা করবো।
প্রথম ব্যান্ড : যেহেতু উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী তাই ব্যান্ডের সাথে পরিবেশনা করা হয় না।উচ্চাঙ্গ সংগীত সাধারণত একক পরিবেশনা করা হয়। তবে শুধু উচ্চাঙ্গ সংগীতে সীমাবদ্ধ না থেকে কন্টেম্পরারি সংগীত নিয়েও কাজ করেছি।
দীর্ঘদিনের সংগীত ক্যারিয়ারে নানা এক্সপেরিমেন্টাল কাজ করেছি। তাঁর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো মহিলা যন্ত্রশিল্পীদের নিয়ে গঠিত একটি অর্কেস্ট্রায় বেশ কয়েক বছর বাজিয়েছি এবং সংগীত পরিচালনা করেছি। হাওয়াইন গিটার শিল্পী রেহানা মতলুব দলটির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। দলটির নাম ‘সুরসন্ধিকা’। বেশ কিছু উল্লেখযোগ্য অনুষ্ঠানে আমরা কয়েক বছর অর্কেস্ট্রা পরিবেশন করেছিলাম। এটাকে মহিলা যন্ত্রশিল্পীদের একটা ব্যান্ড বলা যায়।
গান করি : (যেমন আধুনিক, নজরুল, দেশাত্নবোধক, লোক সঙ্গীত ইত্যাদি)।
বাজাই : (যে যে যন্ত্র সঙ্গীত বাজাতে জানেন) সেতার বাজাই।
জন্ম তারিখ : ০৯.০৬.১৯৬৭।
জন্ম স্হান : ঢাকা।
রাশি : মিথুন।
প্রথম স্টেজ পারফর্ম : রমনা বটমূলে সেতার পরিবেশন। তখন ছায়ানটের ছাত্রী ছিলাম। ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দ।
প্রথম এ্যালবাম : ২০০২ সালে প্রকাশিত ‘এ টাচ অব লাভ’।
এই পর্যন্ত এ্যালবামের সংখ্যা : পাঁচটিঃ ১. এ টাচ অব লাভ ২. ট্রিবিউট টু গ্র্যান্ডফাদার ওস্তাদ আয়েত আলী খান ৩. হারামানিক ৪. রাগ অনুরাগ ৫. সুইট ড্রিমস।
সর্ব প্রথম মিডিয়ার সামনে : বিটিভিতে নারী শিল্পীদের নিয়ে একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে বাজাই ১৯৮৭ সালে।
নিজের প্রিয় গান : আমি যেহেতু গানের শিল্পী নই তাই গানের কথায় যাচ্ছি না। উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী হিসেবে বিভিন্ন রাগ পরিবেশন করে থাকি সেতারে। কয়েকটি প্রিয় রাগের নাম বলা যেতে পারে। যেমন, কিরওয়ানি, নন্দকোষ, মালকোশ, বাগেশ্রী, পিলু ইত্যাদি।
কোন পুরষ্কার : অনন্যা শীর্ষ ১০ পুরস্কার (২০১০ খ্রিস্টাব্দে)।
প্রিয় ব্যাক্তি : বাবা, মা।
প্রিয় ব্যাক্তিত্ত্ব : ওস্তাদ আয়েত আলী খান, সুরসম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খান।
প্রিয় শখ : কিছু সখের কাজ আছে, যেমন অলঙ্কার বানানো, কাপড় চোপড় সেলাই করা।
পছন্দের খাওয়া : জিলাপী, রসগোল্লা, চমচম।
প্রিয় পোশাক : শাড়ী।
প্রিয় পারফিউম : ব্যবহার করি না।
প্রিয় বই (দেশ/বিদেশ): গল্পগুচ্ছ।
প্রিয় শিল্পী : (দেশে) – উচ্চাঙ্গ সংগীত শিল্পী – ওস্তাদ খুরশিদ খান, ওস্তাদ শাহাদত হোসেন খান।
প্রিয় শিল্পী : (বিদেশে) ওস্তাদ আলী আকবর খান, পন্ডিত রবি শংকর, নিখিল বন্দ্যোপাধ্যায়।
প্রিয় গান : মেলোডি নির্ভর যে কোন আধুনিক বাংলা গান।
প্রিয় রং : লাল।
প্রিয় ফুল : বেলী।
প্রিয় বেড়ানোর জায়গা : কক্সবাজার।
আমার লক্ষ্য : শিল্পী হিসেবে অবদান রেখে যাওয়া।
অপূর্ণ ইচ্ছা : ভালো কিছু শিষ্য তৈরী করতে চেয়েছিলাম, কিন্তু তা হয় নি এখনও।
নতুনদের জন্য কোন উপদেশ : যারা সংগীত শিল্পী হতে চায়, তাদের জন্য এটুকু বলতে চাই, ভালো গাইয়ে বা বাজিয়ে হওয়ার কোন শর্টকাট রাস্তা নেই। কাজেই যথেষ্ট সময় নিয়ে যথেষ্ট মানসিক প্রস্তুতি নিয়ে চর্চা করে যেতে হবে। সাফল্য একদিন আসবেই। কিন্তু এই সাফল্য অর্জনের জন্য লিফটে ওঠার কোন উপায় নেই। প্রতিটি সিঁড়িতে এক পা এক পা দিয়ে উঠতে হবে।
আমার দুঃখ : অনেক কিছু করার ছিলো, কিন্তু এক জীবনে সম্ভব নয়।
ভয় পাই : মিথ্যে অপবাদ।
এড়িয়ে চলি : মিথ্যেবাদীদের।
আনন্দের স্মৃতি : অনেক আছে, যেমন আমেরিকা সফরকালে সেতার বাজানোর স্মৃতি, হংকং এ সেতার বাজানোর স্মৃতি, বেঙ্গল মিউজিক ফেস্টিভালে সেতার বাজানোর স্মৃতি ইত্যাদি।
বেদনার স্মৃতি : বাবার মৃত্য।
জীবনটা যেমন : জীবন কখনও থেমে থাকার নয়। কাজেই চলমান থাকতে হবে সব সময়। হতে পারে গতি কখনও বেশী কখনও কম।
বিশেষ কৃতজ্ঞতা : আমার মা বাবার প্রতি, কারণ খুব সুন্দর ডিসিপ্লিন বা নিয়মানুবর্তিতার মধ্য দিয়ে তাঁরা আমাকে মানুষ করেছেন।
গর্ব হয় : আমি একটি বিশ্বখ্যাত সংগীত পরিবারের সন্তান।
ভবিষ্যতে হবো : নতুন কিছু হবার সময় নাই। যে কাজ বা কাজগুলোতে হাত দিয়েছি তাতে সফল হতে চাই।
আবার জন্ম নিলে যা হতে চাইবো : এখন যা হয়েছি তাই হতে চাইবো।
এখন যাদের সম্ভাবনা বলে মনে হয় : নাম উল্লেখ না করে বলছি এখনকার সংগীত জগতে কিছু ছেলেমেয়ে এসেছে যারা শিখে এসেছে। তবে কন্ঠ সংগীতে এদের সংখ্যা বেশী, যন্ত্র সংগীতে কম।
ভক্তরা আমার সাথে যে ভাবে যোগাযোগ করবে : আমার একটা ওয়েবসাইট আছে, www.reenatfauzia.com, এখানে যে কেউ লিখতে পারে।
প্রথমদিন স্টুডির অনুভূতি : প্রথম অনুষ্ঠান করেছিলাম বিটিভির একটি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে সকল শিল্পী ছিলেন নারী শিল্পী। সেখানে আমি সবার সাথে অর্কেস্ট্রা বাজিয়েছি, আবার সলো সেতার বাদনও ছিলো আমার। এক অনুষ্ঠান করতে গিয়ে ঘন্টার পর ঘন্টা পার হয়ে গিয়েছিলো মনে আছে। তবে আমি বা আমরা আগে থেকেই প্রচুর রিহার্সাল করে গিয়েছিলাম বলে যন্ত্রচালিতের মত বাজিয়ে এসেছি। তেমন কোন অনুভূতি কাজ করে নি। বিটিভির অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান ধারণ করা হয়েছিলো। উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিবেশনের জন্য আমার কাছে বরং বেতারের স্টুডিওকে বেশী স্মৃতিবহ মনে হয়। পনের মিনিটের রেকর্ডিং, সুরলহরী অনুষ্ঠানের জন্য। উচ্চাঙ্গ সংগীতের অনুষ্ঠানে আসলে এটাই আমার প্রথম স্টুডিও রেকর্ডিং। আমার যেদিন প্রথম রেকর্ডিং ছিলো, কাকতালীয়ভাবে সেদিন আমার চাচাতো ভাই ওস্তাদ শাহাদত হোসেন খানেরও রেকর্ডিং ছিলো। তিনি আমার প্রথম সংগীত শিক্ষাগুরু। রেকর্ডিং এর সময় তিনিও স্টুডিওর ভেতরে বসেছিলেন। বাজনা শেষে তিনি প্রশংসা করেছিলেন, এখনও মনে পড়ে। প্রথম সেতারের রেকর্ডিং এর কথা বললাম। তবে ছোটবেলা থেকেই বেতারের ছোটদের অনুষ্ঠানে বিভিন্ন কার্যক্রমে অংশ নিয়েছি। তাই আমার কাছে নতুন কিছু মনে হয় নি বা কোন ধরণের মাইক্রোফোন ভীতি কাজ করে নি।
প্রিয় গানের দু’টি লাইন যা আপনাকে প্রেরনা বা দোলা দেয় : “যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চলো রে . . .”।
সবচেয়ে ভালবাসি : সংগীত চর্চা করতে।
সবচেয়ে ঘৃনা করি : মিথ্যেবাদীদের।
সবচেয়ে বড় বন্ধু : সংগীত।
সবচেয়ে বড় শত্রু : যে শত্রু অদৃশ্য।
আমার কাছে ভালবাসা : মা হিসেবে বলবো আমার সন্তান আমার সবচেয়ে ভালোবাসার জায়গা। শিল্পী হিসেবে সংগীতের প্রতি আমার ভালোবাসার শেষ নেই।
আমার কাছে সৌন্দর্য : যা মনকে ভালো করে দেয়।
দেশে আপনি কোন্ স্থানটি পছন্দ করেন কনসার্টের জন্য (শহরে/জেলা) : তেমন বিশেষ পছন্দের কোন স্থান নেই, সাউন্ড সিস্টেম ভালো হলেই আমি ভালো বোধ করি।
যেসব দেশে কনসার্ট করেছেন এবং ঘুরেছেনঃ যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, নেদারল্যান্ড, বেলজিয়াম, হংকং, ফিলিপিনস ইত্যাদি।