asd
Friday, November 22, 2024

জন্মদিনে হাসানের উক্তি ‘আমি গানেই আছি’…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

সৈয়দ হাসানুর রহমান যিনি গায়ক হাসান হিসাবে পরিচিত সবার কাছে। ১৯৮৪ সালের ১৯ এপ্রিল লালমাটিয়া তার জন্ম। শুভ জন্মদিন।
জন্মদিন উপলক্ষে কী আয়োজন থাকছে জানতে চাইলে হাসান বলেন, নিজের জন্মদিন উদযাপনে আমি অভ্যস্ত নই! তাই অন্যান্য দিনের মতোই আজকের দিনটি কাটাব। বিশেষ কোনো আয়োজন নেই। জনপ্রিয় এ সঙ্গীতশিল্পী দীর্ঘদিন ধরে গানে নেই। সর্বশেষ গত ভালোবাসা দিবসে রাজশাহীতে একটি কনসার্টে গান গাইতে দেখা গেছে তাকে। কয়েক বছর ধরে ফিরছি বলে এখনও ফেরা হয়নি তার। তবে জন্মদিন উপলক্ষে শ্রোতাদের সুখবর দিয়েছেন তিনি।
হাসান বলেন, অনেকে হয়তো ভাবছেন আমি গান ছেড়ে দিয়েছি। আসলে এটি সত্যি নয়। আমি গানেই আছি। শিগগরিই নতুন কিছু নিয়ে শ্রোতাদের সামনে আসবো।
একজন ব্যান্ড সঙ্গীতশিল্পী। তাঁর মোট গানের সংখ্যা ২০০ এর বেশী। তিনি ১৯৯৩ সালে ব্যান্ডদল আর্কে ভোকালিস্ট হিসাবে যোগ দেন এবং ব্যান্ডে থাকা অবস্থায় জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। পরবর্তীতে ২০০২ সালে আর্ক ব্যান্ড ছেড়ে দিয়ে নতুন ব্যান্ড “স্বাধীনতা” গঠন করেন। ২০০৪ সালে তিনি “জন্মভূমি” নামের আরেকটি ব্যান্ড গঠন করেন। ২০১০ সালের শেষের দিকে তিনি আবার আর্কে যোগ দেন।

ছোট বেলা থেকেই হাসান হামদ, নাত ও কবিতা আবৃত্তিতে পারদর্শী ছিলেন। কবিতা লেখার অভ্যাসও ছিল কিছুটা। শিশু কবি হিসাবে তার বেশ পরিচিতি ছিল। অভিনয়েও তিনি পিছিয়ে ছিলেন না। স্কুলের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে, রবীন্দ্র ও নজরুল জয়ন্তীতে তিনি অভিনয়, স্বরচিত কবিতা আবৃত্তিসহ বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। পারিবারিক অনুমতি না থাকায় তিনি এগুলো একরকম লুকিয়ে লুকিয়েই করতেন। এই ধরনের কর্মকাণ্ড শুধুমাত্র তার স্কুলের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাইরের অন্য কোন সংগঠনের সাথে তার জড়িত হবার সুযোগ ছিল না। এমনকি গান শোনা, কবিতার বই পড়া বা সাংস্কৃতিক চর্চার ক্ষেত্রেও ছিল প্রতিবন্ধকতা। বড় বোন হুসনা আফরোজ রেডিও ও টিভিতে নাটক করতেন। শুটিং এ যাবার সময় মাঝে মধ্যে ছোট ভাই হাসানকে সঙ্গে নিতেন। মূলত সেখান থেকেই তিনি সংস্কৃতির দিকে ঝুঁকে পড়েন। ৫ম ও ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে পড়াকালীন তিনি নিজে গান লিখে সুরারোপ করার চেষ্টা করতেন।
১৯৮৯-৯০ সালের দিকে তিনি ইংরেজী গানের দিকে ঝুঁকে পড়েন। নিজেদের বাড়ীতে গান শোনা বা গাওয়ার সুযোগ না থাকায় স্কুলজীবনের শেষের দিকে বন্ধুদের বাসায় গিয়ে তিনি গান শুনতেন। প্রথম দিকে মাইকেল জ্যাকসন, জর্জ মাইকেল, স্কোরপিওন, মেইডেন প্রভৃতি শিল্পীদের গান শুনতেন। ১০ম শ্রেণীতে পড়াকালীন তিনি কিছুটা হাইগ্রেড এর গান শোনা শুরু করলেন। এই সময় তার গানের প্রতি প্রবল আগ্রহ জন্মায়। ১৯৮৯-৯০ সালের দিকে তিনি বুলবুল ললিতকলা একাডেমীতে পল্লীগীতির উপর একটি সার্টিফিকেট কোর্সে ভর্তি হন। শুদ্ধ বাংলা উচ্চারণ ও পল্লীগীতির সুর আয়ত্ব করতেই তার এই পল্লীগীতি কোর্সে ভর্তি হওয়া। ছোট বেলা থেকেই তিনি সুরের প্রতি আকৃষ্ট ছিলেন।

হাসানের বৈবাহিক জীবনের শুরু ২০০০ সালের আগস্ট মাসে স্ত্রী ফারহানা মজিদ এর সাথে, যিনি কুমিল্লায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের একমাত্র সন্তান হাসিন। পরিবারসহ এই লালমাটিয়ায় নিজস্ব বাড়ীতে বসবাস করেন।
হাসানের সঙ্গীত জীবনের উত্থান আকস্মিক। একদিন বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতাঙ্গনের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তিত্ব আশিকুজ্জামান টুলুর সাথে তার পরিচয় হয়। হাসানের গান শুনে তিনি মুগ্ধ হলেন এবং তাকে প্রস্তাব করলেন যে, বিভিন্ন শিল্পীর কণ্ঠে ইংরেজী গানের সুরে বাংলা গানের একটা কমার্শিয়াল ক্যাসেট বের করা হবে, এ জন্যে তাকে গান গাইতে হবে। হাসান প্রস্তাব মেনে নিয়ে গান গাইলেন। কিন্তু ক্যাসেটটি অপ্রত্যাশিতভাবে প্রচন্ড হিট হয়ে গেল। ক্যাসেটটির নাম ছিল কপি আর ২।
হাসানের প্রথম ব্যান্ড হচ্ছে আর্ক। পরবর্তীতে আর্ক থেকে বের হয়ে তিনি স্বাধীনতা নামে একটি ব্যান্ড তৈরী করেছেন। আর্কের সঙ্গে প্রায় নয় বছর ছিলেন তিনি। আর্কে যোগ দেয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মূলত টুলু এবং পঞ্চম এর ছত্রছায়ায় থেকে তিনি গানের প্রকৃত মর্যাদা অনুভব করেন।
১৯৯৬ সালে হাসান প্রথম তাজমহল নামে আর্কের একটি এ্যালবাম বের করেন। এই এ্যালবামে তার গাওয়া গানগুলি ছিলো নিজের লেখা এবং সুর। এই এ্যালবামটি সুপার হিট হওয়ার পর তিনি একজন ব্যান্ড সঙ্গীত শিল্পী হিসাবে পরিচিতি লাভ করলেন। এটি ছিল কিছুটা পশ্চিমা ধাঁচের গাওয়া গান। এখানে তিনি অনুসরণ করেছিলেন পশ্চিমাদের কণ্ঠ, ভাব, সুর ইত্যাদি যেটা তখনকার বর্তমান যুগের ছেলে মেয়েদের কাছে বেশ গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছিল। আর এই কারণেই হাসান খুব অল্প সময়ে অনেক বেশী পরিচিতি পেয়েছিলেন। আর্কের এ্যালবাম তৈরীর প্রায় দুই বছর পর ১৯৯৮ সালে তার ব্যান্ড আর্ক জন্মভূমি নামে আর একটি ক্যাসেট বের করলো। এই এ্যালবামটিও সুপার হিট হয়। এটি তাজমহলের চেয়ে অনেক বেশী দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছিল।
হাসান তার আর্কের সাথে শেষ ভলিউম স্বাধীনতা। তারপর বের করেন একক এ্যালবাম তাল। পরবর্তী ৪ মাস আমেরিকাতে থাকার পর সেখান থেকে ফিরে এসে আর্কের নাম পরিবর্তন করে সমস্ত লাইনআপটা নিয়ে ২০০২ সালে নতুন আর একটি ব্যান্ড করলেন “স্বাধীনতা”। স্বাধীনতার ব্যানারে প্রথম এ্যালবাম হচ্ছে কারবালা। হাসান মনে করেন তিনি তার গানের কথায় ও সুরে পুরাপুরি সন্তষ্ট না। তার মধ্যে অনেক ভুল রয়েছে। তিনি এমন কিছু গান করতে চান যেটা সাধারণ মানুষের হৃদয়ে স্থান করে নেবে, তখনই তিনি নিজেকে একজন স্বার্থক শিল্পী মনে করবেন। হাসানের একক এ্যালবাম হচ্ছে তাল। আর বাকীগুলি মিশ্রণ। তাঁর মোট গানের সংখ্যা ২০০ এর বেশী।

১৯৯৬ সালে আর্কে থাকাকালীন প্রথম ‘তাজমহল’ নামে আর্কের একটি এ্যালবাম বের করেন। এই এ্যালবামে তার গাওয়া গানগুলি ছিলো তার নিজের লেখা এবং সুর করা। দুই বছর পর ১৯৯৮ সালে তার ব্যান্ড আর্ক ‘জন্মভূমি’ নামে আরেকটি এ্যালবাম বের করে। যেটি জনপ্রিয় গানটি ছিল ‘জারে যা’। ২০০৪ সালে এলআরবির সাথে ‘বৃহস্পতি’ নামে মিশ্র একটি এ্যালবাম করেন। এর পরের এ্যালবামগুলি হল আপন কষ্ট, বেষ্ট অফ হাসান, ফেরারী, হ্যালো কষ্ট, কন্যা মন দিলি না, লাল বন্ধু নীল বন্ধু, তিনশ তিন। জন্মদিনে হাসানের জন্য সঙ্গীতাঙ্গন থেকে জানাই শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন শুভ জন্মদিন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles