asd
Thursday, November 21, 2024

পদ্মপাতায় বৃষ্টির ফোটার আওয়াজ থেকে বাদ্যযন্ত্রের উৎপত্তি…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

‘সারে গামা পা গান গেয়ে যা
মৃদঙ্গ বাঁজিয়ে,
প্রাচীন বাদ্যের তালে তালে
আসর সাঁজিয়ে।
গা রে গান, দিয়ে প্রাণ
সুরের খেঁয়া দেনা ভাসিয়ে…
সারে গামা পা গান গেয়ে যা
মৃদঙ্গ বাজিয়ে।’

ভাবতে হয়! ভাবা প্রয়োজন! আজকের বর্তমান সঙ্গীত কি শুরুটাই এমন ছিলো ? সবাই বলবে না। সত্যিই আগের দিনের সঙ্গীত আর আজতের সঙ্গীতের পার্থক্য আকাশ-পাতাল। তেমনি প্রাচীন সঙ্গীতের বাদ্যযন্ত্রের সাথে বর্তমান সময়ের বাদ্যযন্ত্রের অনেক ফারাক। তৎসময়টা ছিলো বাদ্যযন্ত্রের আবিষ্কার এর সময়। আর বর্তমান সময়টা হলো তা ব্যাবহারের সময়। উৎপত্তিগত কাঠামোকে কেন্দ্র করেই আজ নতুন যন্ত্রের সৃষ্টি। আগের প্রাচীন যন্ত্রটা আজ আধুনিকতার ছোঁয়ায় আরো নতুনত্ব ভাবে প্রকাশ হয়েছে। আজ প্রাচীন একটি বাদ্যযন্ত্রের উৎপত্তি সম্পর্কে কিছু জানবো।
মৃদঙ্গ একটি অতি প্রাচীন ঘাতবাদ্য বিশেষ। বিভিন্ন পৌরাণিক গ্রন্থে মৃদঙ্গের উল্লেখ পাওয়া গেলেও এর উৎপত্তি সম্বন্ধে স্পষ্ট ঐতিহাসিক প্রমাণ পাওয়া যায় না। শিবপুরাণ অনুসারে ত্রিপুরাসুর বধের পর শিব যখন তাণ্ডবনৃত্য শুরু করেন, তখন অসুরের রক্তে ভিজে যাওয়া মাটি দিয়ে ব্রহ্মা এক মৃদঙ্গের অনুরূপ বাদ্যযন্ত্র প্রস্তুত করেন যার আচ্ছাদন মৃত অসুরের চামড়া দিয়ে এবং বেষ্টনী ও গুলি অসুরের শিরা ও অস্থি দিয়ে তৈরী করা হয়। অপর একটি পৌরাণিক কাহিনীতে মৃদঙ্গের আবিষ্কর্তা হিসেবে ঋষি স্বাতির নাম পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, এক বৃষ্টির দিনে সরোবর থেকে জল আনার সময় সরোবরের জলে ছড়িয়ে থাকা পদ্মপাতায় বৃষ্টির ফোঁটার আওয়াজে মুগ্ধ হয়ে সেই শব্দকে বাদ্যে ধরে রাখার চেষ্টায় স্বাতি মৃদঙ্গের উদ্ভব করেন।
মহামুনি ভরতের নাট্যশাস্ত্র গ্রন্থে তিন প্রকার মৃদঙ্গের উল্লেখ পাওয়া যায় – আঙ্কিক অর্থাৎ যা অঙ্কে স্থাপন করে বা কোলে রেখে বাজানো হয়, ২) ঊর্ধ্বক অর্থাৎ যা ঊর্ধ্বে তুলে বাজানো হয় এবং ৩) আলিঙ্গ্য অর্থাৎ যাকে আলিঙ্গন করে বাজানো হয়। পরবর্তীকালে ঊর্ধ্বক এবং আলিঙ্গ্যের অবলুপ্তি ঘটে। এই গ্রন্থে মৃদঙ্গ, পণব, দর্দুর প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্রের পাশাপাশি মূরজ বা পুষ্কর নাম দুটির উল্লেখ পাওয়া যায়। পুষ্কর বা পদ্মপাতায় বৃষ্টি পড়ার শব্দ থেকে মৃদঙ্গ, পণব ও দর্দুর এই তিন বাদ্যের জন্মকাহিনী অনুযায়ী এই তিন বাদ্যকে ত্রিপুষ্কর বলা হয়ে থাকে। পরবর্তীকালে পণব ও দর্দুর বাদ্যযন্ত্রগুলি মৃদঙ্গের সঙ্গে একাত্ম হয়ে যায়। মৃদঙ্গ কথাটির আক্ষরিক অর্থ মৃৎ অঙ্গ বা মাটির অঙ্গ, কিন্তু ত্রয়োদশ শতকে লেখা শাঙ্গর্দেবের সঙ্গীত রত্নাকর গ্রন্থে এই যন্ত্র কাঠ দ্বারা নির্মিত বলে জানা যায়। আমরা সঙ্গীতকে ভালোবাসবো। সঙ্গীতের পাশে থাকবো। সুস্থধারার সঙ্গীতকে সম্মাণ করবো। বাংলা ভাষা ও বাংলা সঙ্গীত বেশি বেশি শুনবো। সেই কামনায় সঙ্গীতাঙ্গন।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles