– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।
সারাবিশ্ব আজ ‘করোনা ভাইরাস’ -এর কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে আজ মানুষ অসহায়! ভেঙ্গে গেছে মানুষের অহমিকা ও দম্ভের বুনিয়াদ। চুরমার হয়েছে মানুষের অহংকারের মুখোশ। মানুষ আজ সব হারিয়ে, পশু যেমন খাঁচায় বন্দী হয়ে জীবনযাপন করেছে, আজ মানুষ লকডাউনের খপ্পরে পড়ে ঘরে বন্দী জীবনযাপন করছে। তার ফলে দিনের পর দিন ঘরে বন্দী থেকে মানুষের মধ্যে হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। তাই সব মানুষের মুখেই একটি কথা ‘ভাল্লাগেনা!’ হয়তো কোনো একসময় মানুষ এই হতাশা থেকে নিজের জীবনের কোনো একটা ভুল সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে! তাই আসুন আমরা যেভাবেই হোক ‘ভাল্লাগেনা!’ কথাটি নিজের মন থেকে প্রতিহত করার চেষ্টা করি। অনেকতো শুনলাম, জানলাম, দেখলাম করোনা ভাইরাস সম্পর্কে। এখন আমরা একটু চেস্টা করি স্বাভাবিক জীবনযাপন করার। মরার আগেই যেন আমরা না মরে যাই! তাই আশা করি শেষ পর্যন্ত লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়বেন। এবার চলুন দেখি কি করা যায়- যারা এই লকডাউনে ঘরে বসে বসে ‘ভাল্লাগেনা,ভাল্লাগেনা!’ রোগে ভুগছেন! তাঁদের জন্য বলছি। সময় নষ্ট না করে তাঁরা টিভি, ইউটিউব, ফেসবুক এর পাশাপাশি সময়মত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, কোরাআন পড়ুন তাহলে কিছুটা সময় না, দিনের অনেকখানি সময় পার হয়ে যাবে। যদি আপনার গান ভালো লাগে, তাহলে গান শুনুন। যে গানগুলো আপনার ভালো লাগে, সেগুলো। আবার যে গানগুলো জীবিকার তাগিদে শুনা হয়নি কিন্তু আপনি শুনতে চেয়েছিলেন! সেই গানগুলো শুনুন। পুরাতন শিল্পীদের সাথে সাথে নতুনদের গানগুলো শুনুন! হয়তো এমন কোনো শিল্পী পেয়েও যেতে পারেন, যার গান আপনার খুব ভালো লাগছে। আর আপনি যদি গান লিখেন তাহলে আপনি শুরু করতে পারেন বর্তমান পরিস্থিতির যে কোনো একটি বিষয় নিয়ে গান লিখতে। লিখতে পারেন, হামদ নাত-এর মত গানও। সেই সাথে যারা সুর করেন, তাঁদের হাতে নিশ্চয়ই অনেক গান জমা আছে! শুরু করুন আপনার সুরের ঝংকার। সেই সাথে যারা গান করেন, তাঁরা চর্চা করে যান গানের। তাহলে এই অস্থিরতা থেকে কিছুটা সময় আপনি স্বস্থি পেতে পারেন। সেই সাথে ‘ভাল্লাগেনা, ভাল্লাগেনা!’ কথাটিও আপনার মন থেকে উধাও হয়ে যাবে।
আপনি হয় তো শখ করে আপনার অনেক পচ্ছন্দের লেখকের বই, প্রতিবার বই মেলায় গিয়ে কিনেছেন এবং এমনও হতে পারে অনেকেই আপনাকে তাঁদের বই জোর করে গছিয়ে দিয়েছেন! সেই বইগুলো হয়তো ড্রইংরুমে আপনার বুকশেলফে সাজানো আছে। আপনি কাজের চাপে হয়তো আপনার পচ্ছন্দের বইগুলোও পড়তে পারেননি। সময় এসেছে বইগুলো পড়ার। পড়ে ফেলুন! দেখবেন কত ভালো ফিল করবেন নিজের মধ্যে। সেইসাথে ঘরে বসেই গল্প বা ভ্রমণকাহিনীর সাথে সাথে আপনিও ঘুরে বেরাচ্ছেন, বিভিন্ন জায়গায়। যারা লেখালখির সাথে যুক্ত আছেন, আমি জানি তাঁরা কিছুনা কিছু লিখে সময় পার করছেন। তাই, আপনিও কিন্তু লেখালেখি শুরু করতে পারেন! আপনার ভালোলাগার যে কোনো বিষয় নিয়ে অথবা বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে। দেখবেন সারাদিনের কিছুটা সময় কিভাবে যেন চলে গেল! আপনি নিজেও ভেবে পাবেন না।
যারা এতদিন অফিস, ব্যবসা, কনফারেন্স, বিদেশে ট্যুর বিভিন্ন কারণে পরিবারকে সময় দিতে পারেননি, তাঁদের জন্য বলছি-এই তো সুযোগ এসেছে, সন্তানদের সাথে সময় কাটানোর। সন্তানদের নিয়ে টিভিতে মজার মজার মুভি দেখুন। সেই সাথে ইউটিউবে বিখ্যাত মানুষদের জীবনিও দেখতে পারেন। তাহলে আপনার সন্তানরা অনেক কিছু জানতে পারবে, তাঁদের জীবনী থেকে। নিজের ছোটবেলার, স্কুলের, কলেজের বিভিন্ন সময়ের নানান রকম অভিজ্ঞতার কথা বলুন, যা কখনোই তাদের বলা হয়নি! সেখান থেকে হয়তো আপনার সন্তানরা অনেক কিছু শিখতে পারবে। আপনিও আপনার সঠিক ভুল কাজগুলো নতুন করে অনুধাবন করতে পারবেন। তাঁদের সাথে ক্যারাম, লুডু, দাবা এগুলো খেলবেন তাহলে সারাদিন ট্যাব আর মোবাইল নিয়ে বাচ্চারা পড়ে থাকবেনা বরং আনন্দ পাবে। সারাদিন টিভি, ট্যাব, মোবাইলে ইউটিউব এগুলো নিয়ে থাকলেতো মানুষের মাথা আর কাজ করবেনা! কেননা টিভি ইউটিউবেতো সারাক্ষণ করোনা ভাইরাসের খবরাখবর দেখাচ্ছে! সেটা সারাদিন না দেখে মাঝে মাঝে খবর দেখে নিলেই হয়। কারণ তাতে মানুষ ভিতরে ভিতরে ভয়েই অস্থির হয়ে যাচ্ছে আর ‘ভাল্লাগেনা, ভাল্লাগেনা!’ করছে। জন্ম যখন নিয়েছি, মৃত্যুতো হবেই! এটাই চিরসত্য। অতএব যত দিন বাঁচব, ততদিন চিন্তামুক্তভাবে বাঁচি। কারণ আমরাতো কেউ জানিনা! কে কখন, কিভাবে মারা যাব ? আমার কথাগুলো হয়তো আপনাদের সবার কাছে উপদেশ মনে হচ্ছে। নাহ! আমি উপদেশ দিতে আসিনি। আমি জানি, আমরা সবাই উপদেশ শুনার চেয়ে, উপদেশ দিতে ভালোবাসি। তবুও একটা কথা না বলে পারছিনা! অসুখের ভয়ই কিন্তু শরীরে অসুখের জন্ম দেয়। তাই আমরা ‘ভাল্লাগেনা। ভাল্লাগেনা!’ কথাটি নিজেদের মত করে প্রতিহত করার চেষ্টা করি। তাই ‘করোনা ভাইরাস’-কে নয়, আল্লাহকে ভয় করি এবং বিধিনিষেধ মেনে চলি। এই প্রসঙ্গে একটি গল্প মনে পড়ে গেল! যদিও কোথায় পড়েছি বা দেখেছি তা এখন মনে করতে পারছিনা। গল্পটি হল- কোনো এক দেশে এক দরবেশ দেখলেন, একটি ছাঁয়া এদিক ওদিক ঘুরঘুর করছে। তখন সে ছাঁয়াকে ডেকে বল্লেন, তুমি কে ? এদিক ওদিক ঘুরছো যে ? ছাঁয়া বললেন, আমি মউত। এদেশে মহামারী হবে, তাই আমি ১০০০ জন লোককে নিতে এসেছি। এরই মধ্যে সেই দেশে মহামারী হল এবং ৩০,০০০ জন মারা গেল! দরবেশ তখন মনে মনে চিন্তা করল, মানুষ মিথ্যা কথা বলে তা জানি কিন্তু সৃষ্টিকর্তার লোকও মিথ্যা বলে, তাতো জানা ছিলনা! যাই হোক, এর মধ্যে দরবেশের সাথে সেই ছাঁয়ার দেখা হল। তখন দরবেশ ছাঁয়াকে বললেন, এতদিন জানতাম মানুষ মিথ্যা কথা বলে কিন্তু সৃষ্টিকর্তার নিকটেরে লোকও যে, মিথ্যা কথা বলে তা জানা ছিল না। তখন ছাঁয়া বললেন, কিরকম ? দরবেশ বললেন, আপনি বলেছিলেন মহামারীতে ১০০০ জন লোক নিবেন কিন্তু মহামারীতে নিয়ে গেলেন ৩০,০০০ জন লোক। এটা কি করে সম্ভব! আপনি তো আমার সাথে মিথ্যা কথা বলেছিলেন। ছাঁয়া সব শুনে বল্লেন, আমি কোনো মিথ্যা বলি নাই! আমি মহামারীতে ১০০০ জন লোক নিতে এসেছিলাম এবং তা নিয়েওছি। বাকী ২৯,০০০ জন লোক মহামারীর ভয়েই মারা গেছেন।
তাই আসুন আমরা করোনা ভাইরাসকে ভয় না করে, আল্লাহকে ভয় করি। বেশী বেশী করে নামাজ কালাম পড়ি। আল্লাহ্র কাছে হাত তুলে মোনাজাত করে বলি, আল্লাহ যেন এই পৃথিবী থেকে করোনা ভাইরাস বিলুপ্ত করে দেন। যেহেতু আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়াশীল! বলা তো যায়না, আল্লাহ্ কার দোয়া কবুল করে নেন। আমরা সেই সাথে বিধিনিষেধ গুলো মেনে চলি। সাবধানে থাকি এবং ঘরেই থাকি।
সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে সকলের জন্য রইল আন্তরিক শুভকামনা।