asd
Friday, September 13, 2024

জাতির কাছে অবহেলিত ছিলো নজরুল…

– মারিয়া শেখ।

কবি কাজী নজরুল ইসলাম একজন বাঙালী কবি এবং আমাদের এই বাংলাদেশের কবি। কবির মৃত্যু হয়েছে আজ ৪৮ বছর। এখনো দেশের মানুষ কবিকে ভুলে যায় নি। প্রতি বছর তাকে স্মরণ করে সারাদেশে বিভিন্ন ভাবে পালন করা হয় তার জন্ম-মৃত্যুবার্ষিকী।
এটা কি সত্যি ওনার সম্মানে ? নাকি, নিজেদেরকে ওনার মাধ্যমে পরিচিত করার চেষ্ঠা ?
আয় ইনকামের একটা রাস্তা মাত্র। হয়তো এই আর্টিকেলটি পরলে তা স্পষ্ট হবে। কবি নজরুলকে ব্যবহার করেছেন সবাই।

পাকিস্তান বাংলাদেশ এমন কি ভারত-ও। শুধু ব্যবহার করে গেছেন। আর কবি নজরুল সহজ সরল বলে সবার কাছে ব্যবহৃত হয়েই গেছেন। ছোট বেলা থেকেই নজরুল খুব সাদাসিধা নৈতিকতার সাথে চলেছেন। তার কাছ থেকে স্বার্থ হাসিল করার জন্য এক প্রকাশনের মালিক তার মেয়ের সাথে বিয়ে দেবার চেষ্টা করেছিলো। যেনো তার সাথে বিয়ে দিয়ে কবির সব লেখা সে প্রকাশ করবে সেই অসাধুতা ছিলো তার প্রথম বিয়ে করতে যাওয়া নার্গিস আক্তারের বাবার মনে।

অনেকেই মনে করেন প্রমীলা দেবি তার দ্বিতীয় স্ত্রী। সেটা আসলে সত্যি নয়। নার্গিসের সাথে কবির বিয়ে হইনি। কারণ কাবিন নামায় লিখা ছিলো কবিকে ঘর জামাই থাকতে হবে। কিন্তু কবি কতটা বিচক্ষণ ছিলেন যে সেই কাবিন নামা পড়ে পরে স্বাক্ষর করবেন আর তখনই ধরা পরে এই বিষয়টা। আর তখনই সেখান থেকে বিয়ে না করেই চলে আসেন। কেউ কেউ ভাবেন যে সেদিন বিবাহ হয়ে ছিলো। সেই তথ্যটা ভুল।

কাজী নজরুল ইসলাম পরের বছর প্রমীলা দেবীকে বিবাহ করেন। প্রমীলা দেবীর আরেক নাম আশালতা। কিন্তু কবি তাকে প্রমীলা বলেই ডাকতেন। তাদের প্রথম সন্তান জন্মের অল্পদিনের মধ্যেই মারা যায়। তিনি প্রথম সন্তানের মৃত্যুর পর তার উদ্দেশ্যে গান লিখেছিলেন ‘শূন্য এ বুকে পাখি মোর আয় ফিরে আয় ফিরে আয়’। এরপর তাঁদের পরপর চারটি সন্তান হয়। প্রথম দুই সন্তান মারা যায়।

নজরুল ও প্রমীলার বিবাহিত জীবন ছিল দুঃখে দারিদ্র্যে ভরা। নজরুল নিজের প্রতিভাবলে প্রচুর অর্থ উপার্জন করলেও তা রাখার মতো বিষয়বুদ্ধি তাঁর ছিল না। খানিকটা ভোলাভালা ধরনের ছিলেন তিনি। তার কারণ হলো, নজরুল নিজে কোনো পারিবারিক জীবন পাননি। তিনি ছিলেন তাঁর বাবার দ্বিতীয় স্ত্রীর ষষ্ঠ সন্তান। শিশুকাল থেকেই তিনি বাড়ির বাইরে, কখনো অনাথ আশ্রমে কখনো চায়ের দোকানের কর্মী, এভাবেই কেটেছে তাঁর ছোটবেলাটা। তিনি যখন গানে অভিনয়ে কাব্যে সাহিত্যে খ্যাতির মধ্যগগনে ছিলেন তখন তাঁর বন্ধুবান্ধবের বৃত্তটিও ছিল বিশাল।

কিন্তু নজরুল যখন অসুস্থ হলেন ও মূক হয়ে গেলেন তখন তাঁর পাশে সেবা করার জন্য ছিলেন কেবল তাঁর স্ত্রী প্রমীলা দেবী। যেসব বন্ধুবান্ধব সব সময় তাকে ঘিরে থাকত, একসঙ্গে গানবাজনার আসর বসাত, চা-পান চলতো, তারা সবাই তাঁর দুর্দিনে তাকে ছেড়ে গেলেন। এমনকি তাঁর আত্মীয়স্বজনও তাঁর চিকিৎসার ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেননি। এইভাবে প্রায় দশ বছর কেটে গেল। ভারতের স্বাধীনতার পর শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর উদ্যোগে ‘নজরুল চিকিৎসা কমিটি’ নামে একটি কমিটি গঠন করা হয় ও অর্থ সংগ্রহ করে তাঁকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়। কিন্তু শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর যাবতীয় উদ্যোগ ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়। নজরুলের অবস্থার কোনো উন্নতি হয় না। লন্ডন ও ভিয়েনার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা তাঁকে পরীক্ষা করে বলেন নজরুল দুরারোগ্য ব্যাধিতে ভুগছেন।
এই রোগ সারার কোনো সম্ভাবনাই নেই। নজরুল তাঁর বাড়িতে ফিরে আসেন। এর মধ্যে প্রমীলা দেবী অসুস্থ হয়ে পড়েন। বিয়ের পরপর উপর্যুপরি সন্তান প্রসবের ধকল, দুটি সন্তানের মৃত্যুশোক এবং সর্বোপরি দরিদ্রতা তাঁর স্বাস্থ্য নষ্ট করে দিয়েছিল। তিনি অসুস্থ হয়ে একেবারেই শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন। দেহ মনের ওপর এতটা চাপ তাঁর শরীর নিতে পারেনি।

তিনি অসুস্থ হওয়ার পর নজরুলকে সেবা করার আর কেউই রইল না। তাঁর দুই সন্তান—সব্যসাচী আবৃত্তি করতেন আর অনিরুদ্ধ গিটার বাজাতেন। নজরুলের বইয়ের বিক্রি বাবদ বেশ মোটা অঙ্কের টাকা তাদের হাতে আসত। কিন্তু শুধু বই বিক্রির টাকায় তারা বেশ সচ্ছলভাবে চলত, তা কিন্তু নয়। যখন একাত্তরের যুদ্ধ শুরু হলো তখন জানা গেল পাকিস্তান সরকার নজরুলের খাওয়াপরা ও চিকিৎসা বাবদ মোটা অঙ্কের টাকা দিত। একাত্তরে নজরুলের ছেলেরা সেই টাকা নিতে অস্বীকার করেন।

ছেলেরা মাঝে মাঝে দর্শনার্থীদের নিয়ে এসে বাবাকে উত্যক্ত করত। একবার একজন অটোগ্রাফ শিকারিকে বাবার কাছে নিয়ে এসে কাজী সব্যসাচী বললেন, ‘বাবা একটা সই করে দাও’।
নজরুল ফ্যালফ্যাল করে তাঁর দিকে তাকালেন। কিছুই বুঝতে পারছেন না তাকে কী করতে বলা হচ্ছে। সব্যসাচী বললেন, ‘কী হলো সই করো’।
তাতেও কোনো কাজ হলো না। সব্যসাচী তাঁর হাতে জোর করে কাগজ-কলম গুঁজে দিয়ে চিৎকার করে বললেন, ‘বাবা সই বাবা সই করো।’ নজরুল কাঁপা কাঁপা হাতে কাগজ কলম নিয়ে অনেকক্ষণ ধরে লিখলেন।
কাগজ হাতে নিয়ে অটোগ্রাফ শিকারি হতভম্ব। আঁকাবাঁকা অক্ষরে এইভাবে লেখা-

প্রমীলা

দে
বী



লা

এর থেকে বোঝা যায় স্ত্রীর জন্য তাঁর মনে কত বড় জায়গা ছিল। নিজের নাম ভুলে গেছেন কিন্তু স্ত্রীর নাম ভোলেননি। প্রমীলা দেবীর মৃত্যুর পর তাঁকে অত্যন্ত অস্থির দেখা গিয়েছিল। তিনি কথা বলতে পারতেন না। প্রমীলা দেবীর বিছানায় শোয়ার জায়গাটিতে তিনি বারবার হাত দিয়ে চাপড়াতেন ও কাঁদতেন।

স্বাধীন হওয়ার পর বাংলাদেশে নজরুলকে নিয়ে আসা হলো। তাঁকে একটি বড় দোতলা বাড়িতে বেশ আরামেই রাখা হলো। নজরুলের আগমন নিয়ে সারা বাংলাদেশে বিশাল উন্মাদনা দেখা গিয়েছিল। তাঁকে যেন শোপিসের মতো প্রতিদিন প্রদর্শন করা হতো। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যেই সাধারণ মানুষ বুঝতে পারলেন-এই নজরুল তো সেই নজরুল নয়। এ তো মূক জড় একজন বৃদ্ধ। এরপর নজরুলকে নিয়ে মাতামাতি বন্ধ হতেই তাকে অন্য একটি ছোট বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছিলেন, নজরুল নাকি সেই দোতলা বাড়ি ছেড়ে যেতে চাননি। সিঁড়ির রেলিং আঁকড়ে ধরে আপত্তি জানিয়েছিলেন। এর কিছুদিন পরই তাঁর মৃত্যু হয়। তিনি ১৯৭৬ সালে মারা যান মাত্র ৭৭ বছর বয়সে। নজরুল চেয়েছিলেন তাঁর ও তাঁর স্ত্রীকে যেন মৃত্যুর পর পাশাপাশি একই জায়গায় সমাধিস্থ করা হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্য, তাঁর স্ত্রীর সমাধি চুরুলিয়ায় এবং তাঁর সমাধি ঢাকায়।

জাতি কত বড় বেইমান আর স্বার্থপর হলে একটা দেশের গর্বের সাথে এমন আচরণ করতে পারে ?
মৃত্যুর পর মানুষ তাকে নিয়ে যেমন মাতামাতি করে, আসলেই কি তার জন্য !
নাকি নিজেদের জন্য ?
কবি কাজী নজরুল ইসলাম এর ৪৮ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তার জন্য মাগফিরাত কামনা করি।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles