– ফারহানা মারিয়া।
মন আমার দেহ ঘড়ি
সন্ধান করি,
কোন মিস্তিরি বানায়াছে ?
গানটি শুনেনি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। গানটি এখনো সমান তালে জনপ্রিয়। গানটির শিল্পী দেশবরেণ্য খ্যাতিমান শিল্পী আব্দুর রহমান বয়াতী। আমাদের দেশের অন্যতম সেরা শিল্পী ছিলেন আব্দুর রহমান বয়াতী। তার গানের নিজস্ব একটা স্টাইল ছিল।
দেশে-বিদেশে তার চাহিদা ছিল অনেক। বাউল গানেও আমরা অনেক ধরনের লোক দেখি। কিন্তু আব্দুর রহমান ছিলেন সত্যিকারের শিল্পী। তার গানের অরিজিন ছিল। কারো থেকে ধার করা না। নিজস্ব যে ভঙ্গিতে তিনি গাইতেন, সেভাবে গাওয়া তো কারো পক্ষে পাওয়া সম্ভব না।
যে নিদারুণ অভাব অনটনের মধ্যে তার জীবনাবসান হল, তা বলার ভাষা নেই। দেশের লোকসঙ্গীতে তার অবদানের মূল্যায়ন হয় নি। দেশে তার মত মানুষ জন্ম নিবে কি না জানি না।
আগামীতে কখনো তার মতো মানুষ কী খুঁজে পাওয়া যাবে এমন প্রশ্ন সঙ্গীত জগৎ এর অনেকের মনে। জীবনের পুরোটা সময় নানান ধরণের গান গেয়ে যিনি এ দেশের সঙ্গীতকে এত সমৃদ্ধ করেছেন, তার পাওনা পরিশোধ করার মত না। কিন্তু বেঁচে থাকার নূন্যতম প্রাপ্য সুবিধাও পায়নি আব্দুর রহমান বয়াতী। সরকার সহ বড় মানুষদের কাছে আহবান করেও আব্দুর রহমান বয়াতীর মত শিল্পীদের তেমন কিছু পাওয়া হই নি এর চেয়ে বড় দুঃখজনক আর হতাশার কি হতে পারে ?
মাঠের গানকে আমাদের নাগরিক জীবনে নিয়ে এসেছেন আব্দুর রহমান বয়াতী। তাকে দেখে অনেকে শিখেছেন। একজন ক্ষণজন্মা গুণী শিল্পী ছিলেন আব্দুর রহমান বয়াতী। হাজার বছর পর এমন দু-একজন মানুষের জন্ম হয়।
এমন দরাজ, মায়াভরা, আবেদনময় কণ্ঠ আর কয়টা আছে ? সঙ্গীতে তার একাডেমীক শিক্ষা ছিল না, কিন্তু একাডেমীক ওস্তাদদের চেয়েও অনেক বেশি জানতেন। তার সবচেয়ে বড় গুণ ছিল অহংকার না করা। এমন নিরহংকারী মানুষ কম আছে পৃথিবীতে। রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটা বাচ্চা ছেলে সালাম দিলেও হাত উঁচিয়ে জবাব দিতেন।
কিংবদন্তি শিল্পী ছিলেন আব্দুর রহমান বয়াতী। নকল বাউলদের প্রচারণার আড়ালে পড়েছিলেন অনেকটাই। আজ তার ১১তম মৃত্যুবার্ষিকী। ২০১৩ সালের ১৯শে অগাস্ট ঢাকায় তিনি মৃত্যু বরণ করেন। তার তার বিদায়ী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।