– মারজানা শেখ।
পৃথিবীর সৌন্দর্যে হার মানে প্রতিটা জীবন। পৃথিবীতে আসার জন্য যদিও উপরওয়ালার কাছে কেউ কোন দিন দরখাস্ত করেনি। তবুও ভালেবেসে উপরওয়ালা মানুষকে এই পৃথিবীতে পাঠায়। কিন্তু একটা সময় আসে যখন সে মানুষটি পৃথিবীতে আরো কিছুটা দিন বেচেঁ থাকতে চায়, উপরওয়ালার কাছে দরখাস্ত করে, কিন্তু তার দরখাস্ত মঞ্জুর হয় না। চলে যেতে হয় মৃত্যুর হাত ছানিতে সারা দিয়ে। চলে যাবে এটাই নিয়ম। তেমনি ভাবে সঙ্গীতাঙ্গনের আলোকিত সভাকে অন্ধকারাচ্ছন্ন করে চির দিনের জন্য চলে গেলেন সঙ্গীতের তুখোর জনপ্রিয় ব্যান্ড সঙ্গীত গুরু এলআরবি’র আইয়ুব বাচ্ছু। গানে গানে তারা গুণে তারার দেশেই চলে যান এই মহাগুরু। সে দিনটা সঙ্গীতাঙ্গন এর কাছে স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন।
আজ ১৬ আগষ্ট এই গুরুর জন্মদিন। পৃথিবীতে আগমনের দিনটাকে পেছনে ফেলেছে সার্থক জীবনের চলে যাওয়াটা। এসেছিলো নিরবে নিভৃতে থেকেছিলেন তেমনি কিছুদিন। তারপর সঙ্গীতে পা দিয়ে হলেন সঙ্গীতের গুরু। বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতকে যিনি অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আইয়ুব বাচ্চু। আশির দশক থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত গানে গানে মুগ্ধতা ছড়িয়েছেন এই কিংবদন্তি। তার গিটারের জাদুতে মোহিত হয়েছেন শ্রোতারা। গিটারের জাদুকর আইয়ুব বাচ্চুর জন্মদিনে তাকে মনে পরে। বেঁচে থাকলে তিনি পদার্পণ করতেন ৬২ বছরে। হয়তো বেঁচে থাকলে অনুরাগীদের শুভেচ্ছা আর বন্ধুদের সঙ্গে কেক কেটে দিনটি উদযাপন করতেন তিনি।
আইয়ুব বাচ্চুর শৈশব কাটে চট্টগ্রামে। কৈশোরের চঞ্চল সময় থেকেই পাশ্চাত্য রক ধাঁচের গানের প্রতি আকৃষ্ট হন। একসময় গড়ে তোলেন নিজের ব্যান্ড গোল্ডেন বয়েজ। পরে এর নাম পাল্টে রাখেন আগলি বয়েজ। বিয়েবাড়ি, জন্মদিন আর ছোটখাটো নানা অনুষ্ঠানে গান করতো তাদের এই ব্যান্ড।
তবে একসময় গিয়ে এই ব্যান্ডের সদস্যরা একেক দিকে ছড়িয়ে পড়েন। সত্তরের দশকের শেষ দিকে কাজ করেন ফিলিংস ব্যান্ডের সঙ্গে যা এখন ভক্তদের কাছে নগর বাউল নামে পরিচিত। এরপর আশির দশকের শুরুতে আইয়ুব বাচ্চু যোগ দেন সোলস ব্যান্ডে। এখানে ১৯৮৯ পর্যন্ত লিড গিটারিস্টের দায়িত্ব পালন করেন। এ সময় পর্যন্ত একের পর এক জনপ্রিয় এ্যালবাম উপহার দেন শ্রোতাদের।
নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে তিনি সোলস থেকে বের হয়ে এলআরবি গঠন করেন। তবে, এলআরবি নামের পেছনে ছোট্ট একটু ইতিহাস আছে। প্রথমে এর নাম রাখা হয়েছিল ইয়েলো রিভার ব্যান্ড। ব্যান্ড নিয়ে ভারতে ট্যুর করতে গেলে অনুষ্ঠানের উপস্থাপক তাদের ভুল করে লিটল রিভার ব্যান্ড নামে পরিচিত করান।
এই ভুল নামটিই পছন্দ হয়ে গেলে ব্যান্ডের নতুন নাম হয় এলআরবি। যদিও পরে এলআরবির অর্থ পাল্টে রাখা হয় লাভ রানস ব্লাইন্ড। মৃত্যুর আগে পর্যন্ত এই ব্যান্ডের সঙ্গেই ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। গান পাগল এই মানুষটি জীবনের অন্তিম মুহূর্ত পর্যন্ত সুরের সঙ্গেই ছিলেন।