– শাহরিয়ার খান সাকিব।
আজ ২২শে শ্রাবণ (৭ অগাস্ট) বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮৩তম মৃত্যুবার্ষিকী। বাংলা ১৩৪৮ সনের এ দিনে কলকাতার জোড়াসাঁকোয় বর্ষণসিক্ত শ্রাবণে তিনি পরলোকগমন করেন। মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুরের কনিষ্ঠ পুত্র রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের সব শাখাতেই বিচরণ করেছেন। ‘গীতাঞ্জলি’ লিখে ১৯১৩ সালে জয় করেছিলেন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার। ১৯১৫ সালে তিনি ব্রিটিশ সরকারের ‘নাইট’ উপাধি লাভ করেন। তবে ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল জালিয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে ওই উপাধি ত্যাগ করেন।
প্রতিবারের মতো দেশে এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় রবীন্দ্রনাথের মৃত্যুবার্ষিকী পালিত। ঢাকায় বাংলাদেশ রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী সংস্থা, বাংলা একাডেমি, শিল্পকলা একাডেমি, ছায়ানট, বিভিন্ন টিভি চ্যানেল এবং সাংস্কৃতিক-সামাজিক সংগঠনগুলো নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালন করবে। এ উপলক্ষে সারা দেশে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও সামাজিক সংগঠন নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে।
তবে এবার কুষ্টিয়ার শিলাইদহ কুঠিবাড়িতে সরকারিভাবে তেমন কোনো আয়োজন না থাকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংস্কৃতিক কর্মী ও রবীন্দ্র প্রেমিরা। দেশের সার্বিক পরিস্থিতি খুব খারাপ। এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে তেমন করে কিছু করা হয়ে ওঠেনি।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর একাধারে কবি, নাট্যকার, কথাশিল্পী, চিত্রশিল্পী, গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, ছোট গল্পকার ও ভাষাবিদ। এক কথায় সার্বভৌম লেখক তিনি। বাংলা সাহিত্য-সংস্কৃতির বিকাশে যার অফুরন্ত অবদান। সেই কবি প্রকৃতিকে কাঁদিয়ে যখন ইহধাম ত্যাগ করেন সেদিন শোকার্ত বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্বকবির প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে লিখেছিলেন : ‘দুপুরের রবি পড়িয়াছে ঢলে অস্তপারের কোলে/বাংলার কবি শ্যাম বাংলার হৃদয়ের ছবি তুমি চলে যাবে বলে/ শ্রাবণের মেঘ ছুটে এলো দলে দলে।’
৮০ বছরের জীবনসাধনায় রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জন্ম এবং মৃত্যুকে একাকার করে তুলেছিলেন অমরতার শাশ্বত বার্তায়। কলকাতায় জন্ম হলেও পৈতৃক জমিদারি দেখভালের জন্য তিনি বাংলাদেশে এসেছেন বহুবার। কুষ্টিয়ার শিলাইদহ, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর ও নওগাঁর পতিসরে জমিদারবাড়ি আজও তার স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে।
বাংলাদেশের কৃষির সাথে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের আত্মিক সম্পর্ক। সমাজের অসঙ্গতি নিয়ে লিখেছেন প্রচুর। তার কবিতা, গান ও গল্প ছুঁয়ে গেছে পাঠকহৃদয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা ভাষাকে নিজস্ব ভঙিমায় উপস্থাপন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। তিনিই একমাত্র কবি, যিনি তিনটি দেশের জাতীয় সঙ্গীতের রচয়িতা (বাংলাদেশ, ভারত ও শ্রীলঙ্কা)।