এতো সুন্দর পৃথিবীতে আসার জন্য মানুষ হয়তো সৃষ্টি কর্তার কাছে কোন দরখাস্ত লিখতে হইনি, মালিকের ইচ্ছেতেই প্রতিটা মানুষ এই পৃথিবীর আলো দেখতে পারে। কিন্তু সেই মানুষটা পৃথিবীতে এসে হাজারো দরখাস্ত পেশ করে স্রষ্টার কাছে, মালিক আমাকে সুস্থ করে দাও। আমাকে আরো কিছুদিন পৃথিবীতে বেচেঁ থাকতো দাও। কিন্তু মালিকতো নির্দিষ্ট সময়েই সমন জারি করে দেন। হাজারো প্রার্থনা আর জীবন ভিক্ষা চাইলেও পৃথিবীতে যে আর থাকা সম্ভব হয়না। আর এটাই যে পৃথিবীর অপ্রিয় সত্যি কথা। ঠিক তেমনি আমাদের সঙ্গীতাঙ্গনে শোকের কালো ছায়া নামিয়ে শাফিন আহমেদের পর চলে গেলেন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে ক্যানসারের সঙ্গে যুদ্ধ চলিয়েছেন সঙ্গীতশিল্পী হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। আর আজ মৃত্যুর মাধ্যমে
সে যুদ্ধের অবসান ঘটলো। আজ বেলা ১১টা ৫৩ মিনিটে, না ফেরার দেশে, মরণ পালকিতে চড়ে, শেষ যাত্রা করেন আবিদুর রেজা জুয়েল। তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছেন তার ভাই মহিবুর রেজা জুয়েল। গণমাধ্যমকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে গায়কের স্ত্রী সংবাদ পাঠিকা সংগীতা আহমেদ বলেন “বেশ কয়েকদিন ধরেই লাইফ সাপোর্টে ছিলেন জুয়েল। তবে ধীরে ধীরে শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। শারীরিক সে উন্নতি নিয়ে আর ঘরে ফেরা হলো না তার”।
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকেই চির বিদায় নিলেন তিনি। তাঁর এই মৃত্যুতে পরিবারসহ সঙ্গীত মহলে নেমেছেন শোকের কালো ছাঁয়া। অল্প সময়ের ব্যবধানে দেশ থেকে হারিয়ে গেলো সঙ্গীতের দুই দুইটা তাঁরকা। দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করছেন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল। দেশে-বিদেশে কয়েকটি হাসপাতালে চলছিল তার চিকিৎসা। কিন্তু সেই চিকিৎসা যেনো তাকে পৃথিবীতে টিকিয়ে রাখতে ব্যার্থ হয়েছে। আজ গুলশানের আজাদ মসজিদে বাদ আসর জানাজা শেষে বাদ মাগরিব বনানী কবরস্থানে তাকে সমাহিত করা হয়। আর এমনি করে পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চিরদিনের জন্য চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল।
হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল একজন সঙ্গীত প্রেমী ছিলেন। মা-বাবার অনুপ্রেরণাতেই গানের জগতে পা রাখেন। প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিবেশী একজনের কাছে গান শিখেছিলেন। আর মঞ্চে প্রথম গান করেছিলেন তখন তিনি পড়েন চতুর্থ শ্রেণিতে। ১৯৮৬ সালে ঢাকায় চলে আসেন জুয়েল। এসেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি-কেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক তৎপরতায় জড়িয়ে পড়েন। তখনই বিভিন্ন মিডিয়ার সঙ্গে তাঁর যোগাযোগ ঘটতে শুরু করে। তারপর থেকে একে একে গানের সঙ্গে যুক্ত হয়ে পড়েন।
কুয়াশা প্রহর, এক বিকেলে, আমার আছে অন্ধকার, একটা মানুষ, দেখা হবে না, বেশি কিছু নয়, বেদনা শুধুই বেদনা, ফিরতি পথে, দরজা খোলা বাড়ি এবং এমন কেন হলো তার গানের এ্যালবাম। একটি করে গান নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে আরও দুটি এ্যালবাম তাতে কি বা আসে যায় এবং এই সবুজের ধানক্ষেত। সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে ‘এক বিকেলে’ এ্যালবামটি।
আমরা সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে তার শেষ বিদায়ী আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।