– সালমা আক্তার।
অধরাকে ধরতে বাউল সম্রাট লালন শাহ দিনের পর দিন, রাতের পর রাত খুঁজে ফিরেছেন তারে তার, চলে গেছেন তিনি রেখে গেছেন সাধনা মন্ত্রধ্বনি। শক্তির সৃজন শক্তিতে হয় এমনি করে ভেবেছেন মহা সাধক লালন ফকির।
গানে গানে মনের প্রকৃত তরলরূপ তিনি তুলে ধরেছেন,
“শুধু মন তোমায় বলি
তুই আমারে ডুবাইলি
পরের ধনে লোভ করিলি
সে ধন আর কয়দিন খাবি।।”
একমাত্র সাধক মন বোঝে কী আকুতি, কী আবেদন মিশে আছে কথার গভীরে!
পথে পথে অচীন রথে ছুটেছেন তিনি পরম প্রিয় নবীজ্বীর প্রেমানুরাগের ছোঁয়া পেতে। রসিক অন্তর ছাড়া কখনো সে অনুভবের নাগাল পাওয়া সম্ভব না। সাধনায় মগ্ন ফকির লালন বলে গেছেন অপার প্রেমের অপার লীলার কথা,
“অপারের কান্ডার নবীজ্বী আমার
ভোজন সাধন বৃথা গেল নবী না চিনে।
নবী আউল আখের বাতেন জাহের
কখন কোন রূপ ধারন করেন কোনকানে।”
দমের খেলা কী চমৎকার রূপ ধরে তাঁর তালাশে মগ্ন হয়ে পথ হারারে পথ দেখিয়েছেন তিনি ভাবের সুর তুলে, প্রাণে কথা ফুটিয়ে। সংসারের মায়াজালে বন্ধ মন যেদিন খোঁজ পাবে সে ধনের, সেদিন তারই মত বলে উঠবেন,
“অসার ভেবে সার দিন গেল আমার
সার বস্তু ধন এবার হলামরে হারা
হাওয়া বন্ধ হলে সব সাবে বিফলে
দেখে শুনে লালচ গেল না মারা।।”
নূরেতে নূর আছে ঘেরা সাধক মন ছাড়া কেউ তা অনুধাবন করতে পারে না, নূরের সেই ভেদ অভেদের সমুদ্দুর পাড়ি দিতে লালন শাহ বারবার ছুটে গিয়েছেন গুরুধন সিরাজ সাঁইয়ের কাছে। অনেক ভাগ্যের ফলে সে ধন মেলে,
লালন ভক্তরা সে ধনের সন্ধানে অপার আনন্দে গেয়ে উঠে –
“সিন্ধু মাঝে বিন্ধুবারি
মাজখানে তার স্বর্ণগিরি
অধরচাঁদের স্বর্গপুরী
তিল পরিমান জায়গায়।।”
যোগ্য পাত্র না হলে সে ধন ধারন করা সম্ভব না কোন কালে, সে ধনের অনুসন্ধানি বাউল সম্রাট লালন শাহ বলনে, চলনে, ভাবে, ছন্দে তাই তুলে ধরেছেন। আজ ১৭ অক্টোবর সংসার মায়া ত্যাগ করে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। স্মৃতিময় তারকা চিরকাল জ্বলজ্বল করে জ্বলবে সাধকের মনে, আত্মতত্ত্ব জ্ঞানে। সকল অনুরাগী মন ও সঙ্গীতাঙ্গনের অপার দোয়া যুগ যুগ ধরে রবে ফকির লালনের আত্মার শান্তি কামনায়।