asd
Saturday, November 16, 2024

কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শ্বশুর বাড়ী থেকে ‘দক্ষিনডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ হয়ে ওঠার গল্প…

– কৃষ্ণ সেন (সংগীত শিল্পী)।

খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলায় অবস্থিত দক্ষিনডিহি গ্রামের ‘দক্ষিণডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ নামটির সাথে আমার জীবনের অনেক কিছু জড়িয়ে আছে। উদ্বোধনের দিনটির কথা আজও মনে আছে, সম্ভবত ১৯৯৫ সালের ঘটনা। আমার সৌভাগ্য হয়েছিল সেই উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে গান করার। যদিও উদ্বোধনের নির্ধারিত প্রথম তারিখটি পরিবর্তন হয়েছিল দুর্যোগপুর্ন আবহাওয়ার কারনে। এরপর থেকে প্রায় প্রতিবছর অনুষ্ঠোনেই আমি অংশগ্রহন করেছি ও গান করেছি। প্রথমে সাধন ঘোষ স্যার এসে আমাদের সকল অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নিতে তালিম দিতেন। ফুলতলা আসাদ-রফি গ্রন্থাগারে এই আসর জমত। পরবর্তীতে কায়কোবাদ স্যারের বাড়ীতে সকল অনুষ্ঠানের মহড়া হত। প্রতি বছর ২৫শে বৈশাখ ও ২২শে শ্রাবন অন্তত দু’বারতো অনুষ্ঠান হতই। ২০০৬ বা ২০০৭ সালের পরে নিয়মিত এই অনুষ্ঠানে আর অংশগ্রহন করা হয়নি আমার পেশাগত ব্যস্ততার কারনে। যদিও এই দিনগুলোতে আমার মন এখনো পড়ে থাকে দক্ষিনডিহিতে। অফিসের কাজের ফাকেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেইদিনগুলোর কথা।

অবশ্য আমার অনুপস্থিতির আরও একটি কারন আছে, সেটি হলো আমার বাবা। বাবা ২০০৮ সাথে মৃতূবরন করার পরে রবীন্দ্র কমপ্লেক্সের সাথে আমার দুরত্ব একটু বেড়ে যায় কারন আমার বাবার জীবনেও এই রবীন্দ্র কমপ্লেক্স এর ভুমিকা প্রকটভাবে ছিল। তার অনুপস্থিতির প্রভাবেও খুব বেশি আর যাওয়া হত না।

আমার জানা মতে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শশুরবাড়ীর পুনরুদ্ধার এবং এই রবীন্দ্র কমপ্লেক্স প্রতিষ্ঠার পেছনে যারা কাজ করেছে তাদের মধ্যে আমার বাবাও অন্যতম একজন ছিলেন। আমার মনে আছে বাবার সাংবাদিক বন্ধু অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা সিন্দাইনী আমাদের বাড়ীতে আসতেন এবং আমাদের দোতলার ঘরে বসেই রচনা হত অসংখ্য পত্রপত্রিকার লেখালেখি। এই রবীন্দ্র কমপ্লেক্স উদ্বোধনের অনেক আগে থেকেই এগুলো হয়েছে। এরপর খুলনার ততকালীন ডিসি জনাব কাজী রিয়াজুল হক স্যারের উদ্যোগেই চুড়ান্ত কাজটি ১৯৯৫ সালে সম্পন্ন হয়েছিল। এরপর থেকে প্রতিবছর অনুষ্ঠানগুলো আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথি হয়েছেন দেশ ও বিদেশের অসংখ্য কবি, সাহিত্যিক, সংগীত শিল্পী। এসেছেন ড: সানজিদা খাতুন, রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা, পাপিয়া সারওয়ার, সাদী মুহাম্মদ, মিতা হক, শিবলী মাহ্‌মুদ, নীপা সহ অনেক স্বনামধন্য শিল্পীবৃন্দ।

পরবর্তীতে প্রতিষ্ঠা হল ‘সংগীত নিকেতন’ নামের একটি সংগীত বিদ্যালয়। রবি ঠাকুরের শশুরবাড়ীর ভগ্নাবিশেষ ভবনে ২য় তলায় এই সংগীত বিদ্যালয়টির ক্লাস হত। আমিই ছিলাম তার প্রথম শিক্ষার্থী। শুরুতে অধ্যাপক সাধন রঞ্জন ঘোষ স্যার সংগীত আচার্য্য হিসেবে শুরু করেন, সাথে ছিলে সবুর খান চৌধুরী। উনি আবৃত্তি শেখাতেন। কিছুদিন পরে সাধন স্যারের ব্যস্ততার কারনে তরুন মজুমদার স্যারই গান শেখাতেন। সার্বিক তত্তবধায়ন করতেন আবুল বাসার টিটো। খুলনা ডিসি স্যারের দপ্তরের নির্দেশে ফুলতলা উপজেলা নিবাহী অফিসার এর তহবিল থেকেই এটি পরিচালিত হত। যতদুর জানি এই স্কুলটি এখন আর চলমান নেই। আমার গানশেখা সেই ভাঙ্গাচোরা ভবনের ২য় তলাতেই। এখন ভবনটি অনেক সংস্কার করা হয়েছে দেখতেও আর আগেরমত লাগে না।

তবে, উদ্বোধন পরবর্তী সময়ে দক্ষিনডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্সকে নিয়ে অনেক বড় পরিসরে একটি পরিকল্পনা প্রনয়ন করা হয়েছিল। যেখানে শান্তি নিকেতনের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালয়ও হওয়া কথা ছিল। জানিনা সেই পরিকল্পনা আজও আছে কিনা। ‘দক্ষিনডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ এখন প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর থেকে দেখাশোনা করা হয়। সরকারের উদ্যোগে রবীন্দ্র কমপ্লেক্স আরো সামনে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ তৈরী হয়েছে। সরকারের দৃষ্টি আর্কষন করছি এখানে শান্তি নিকেতনের আদলে একটি বিশ্ববিদ্যালিয় হওয়ার সুযোগ এখনো আছে। বাঙ্গালীত্বে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আমরা সবসময়ই এগিয়ে, তারা পারলে আমরা কেন পারবনা।

‘দক্ষিনডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স’ নামটিও আমার বাবার দেওয়া। আমার বাবা পায়গ্রাম কস্‌বা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ততকালীন প্রধান শিক্ষক দেব রঞ্জন সেন। শুরু থেকেই কয়েক বছর দক্ষিনডিহি রবীন্দ্র কমপ্লেক্স সদস্য সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। দেব রঞ্জন সেন সহ এই উদ্যোগের পেছনে যাদের সক্রিয় ভুমিকা ছিল তাদের নাম না বলেলই নয় যেমন দক্ষিনডিহির ততকালীন চেয়ারম্যান আব্দর রাজ্জাক রাজা, কাজী খেলাফত হোসেন বাচ্চু, বিধান দাশগুপ্ত, অচিন্ত্য কুমার ভৌমিক, লুৎফর রহমান, বরুন মিত্র, অধ্যাপক কায়কোবাদ, অধ্যাপিকা মুক্তি মজুমদার, অধ্যাপক সাধন রঞ্জন ঘোষ, অধ্যাপক শফিউল্লাহ, মিনা মিজানুর রহমান, নওরোজ হোসেন, খুলনার ততকালীন ডিসি জনাব কাজী রিয়াজুল হক, ততকালীর ফুলতলা উপজেলা নিবাহী অফিসার শামীমা সুলতানা, ততকালীর ফুলতলা উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) অমিতাভ সরকার। এছাড়াও আরও অনেকের নাম এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না, তারা ক্ষমা করবেন। আমার মনে হয় পুরাতনদের স্বীকৃতি দেওয়ার মাধ্যমে নতুন উদ্যোগী মানুষেদের আরো ভালো ভালো কাজ করার প্রেরনা জোগাবে।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles