– নোমান ওয়াহিদ।
বাংলা গানের কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার ও সংগীত পরিচালক আলম খান আর নেই (ইন্না লিল্লাহি… রাজিউন)। ঢাকার শ্যামলীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ বেলা ১১টা ৩২ মিনিটে মারা গেছেন। খবরটি নিশ্চিত করেছেন তার পুত্র-সংগীত পরিচালক আরমান খান।
৭৭ বছর বয়সী আলম খান ২০১১ সালে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন।
খুরশিদ আলম খান বাংলাদেশের একজন প্রখ্যাত সঙ্গীত ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তিনি একাধারে গীতিকার, সুরকার এবং সঙ্গীত পরিচালক ছিলেন। চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি শ্রেষ্ঠ সঙ্গীত পরিচালক ও সুরকার বিভাগে সাতবার বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক প্রদত্ত জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন।
আলম খান ১৯৪৪ সালে তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের সিরাজগঞ্জের বানিয়াগাতি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সেক্রেটারিয়েট হোম ডিপার্টমেন্ট এর এডমিনিস্ট্রেটিভ অফিসার ও মা জোবেদা
খানম ছিলেন গৃহিণী। তার মা জোবেদা খানম ছিলেন নবাব সিরাজউদ্দৌলার দরবারের এক শিল্পীর বংশধর। সিরাজগঞ্জে কয়েক বছর থাকার পর বাবার চাকরি সুবাদে কলকাতায় চলে যান। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর বাবার সাথে ফিরে আসেন ঢাকায়। তারপর ঢাকাতেই স্থায়ী হন এবং সিদ্ধেশ্বরী স্কুলে ভর্তি হন। এই স্কুল থেকেই মেট্রিক পাস করেন। স্কুলে থাকাকালীন তার গানের প্রতি ঝোঁক সৃষ্টি হয়। বাবা আফতাব উদ্দিন প্রথমে অনাগ্রহ দেখালেও মায়ের উৎসাহে গানের চর্চা চালিয়ে যান। পরবর্তীতে তার বাবাই তাকে ওস্তাদ ননী চ্যাটার্জীর কাছে গানের তালিমের জন্য নিয়ে যান। পাঁচ ভাই তিন বোনের মধ্যে আলম খান মেজো। বাংলাদেশের প্রখ্যাত পপ সঙ্গীত শিল্পী আজম খান ছিলেন তার ছোট ভাই।
আলম খানের সুর ও সঙ্গীত পরিচালনায় অসংখ্য জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, কি জাদু করিলা, ওরে
নীল দরিয়া, তুমি যেখানে আমি সেখানে, সবাই তো ভালোবাসা চায়, ভালোবেসে গেলাম শুধু, চাঁদের সাথে আমি দেবো না, আমি একদিন তোমায় না দেখিলে, সাথীরে যেও না কখনো দূরে, কাল তো ছিলাম ভালো, চুমকি চলেছে একা পথে, তেল গেলে ফুরাইয়া ইত্যাদি।
আলম খান শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে ১৯৮২ সালে মহিউদ্দিন পরিচালিত ‘বড় ভালো লোক ছিল’ সিনেমার মাধ্যমে প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পান। এরপর তিনি ‘তিন কন্যা’ (১৯৮৫), ‘সারেন্ডার’ (১৯৮৭), ‘দিনকাল’ (১৯৯২) এবং ‘বাঘের থাবা’ (১৯৯৯), ‘এবাদত’ (২০০৯) ছবিগুলোতে একই পুরস্কারে ভূষিত হন। শ্রেষ্ঠ সুরকার হিসেবে ২০০৮ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন ‘কি জাদু করিলা’ ছবির জন্য।
শুক্রবার আসরের পর এফডিসিতে জানাজা শেষে শনিবার শ্রীমঙ্গলে আলম খানকে সমাহিত করা হবে বলে জানিয়েছেন তার পুত্র-সংগীত পরিচালক আরমান খান।