– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।
বাংলাদেশের দেশাত্মবোধক গানের কথা বললেই যে গানগুলো হৃদয়পটে উঁকি দেয়, মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি, এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে, লেফট রাইট লেফট রাইট, হুঁশিয়ার হুঁশিয়ার, পদ্মা মেঘনা যমুনা, চলো বীর সৈনিক, হুঁশিয়ার, হুঁশিয়ার বাংলার মাটি গানগুলো যেন আমাদের রক্তের সাথে মিশে আছে। দেশের এই অতি অনুপ্রেরণা প্রদানকারী গানগুলোর যিনি গীতিকার গোবিন্দ হালদার মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি রচনা করেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতারে সম্প্রচারিত তার লেখা গানসমূহ মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করতো।
১৯৩০ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁয়ে গোবিন্দ হালদার জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বাঙালি গীতিকার। তার রচিত প্রথম কবিতা ছিল ‘আর কতদিন’। প্রায় সাড়ে তিন হাজার কবিতা ও গান লিখেছেন। তার প্রকাশিত প্রথম কাব্যগ্রন্থ ‘দূর দিগন্ত’।
তিনি ভারতের আকাশবাণী বেতারের তালিকাভুক্ত গীতিকার ছিলেন।
আয়কর বিভাগে কর্মরত অবস্থায় বন্ধু কামাল আহমেদের অনুপ্রেরণায় এবং উৎসাহে তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর গান রচনা করেন। কামাল আহমেদ তাকে স্বাধীন বাংলা বেতারের কর্ণধার কামাল লোহানীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন এবং তার হাতে ১৫টি গানের একটি খাতা দেন। এ গানগুলোর মধ্যে স্বাধীন বাংলা বেতারে প্রথম প্রচারিত হয় সমর দাসের সুরারোপিত ‘পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে’ গানটি। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়েই তার আরও কিছু গান স্বাধীন বেতারে সম্প্রচারিত হয়। পাক বাহিনীর আত্মসমর্থনের খবর পাওয়ার পরপরই সন্ধ্যায় ১৬ই ডিসেম্বর প্রচারিত হয় ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে’ গানটি, যা সুর দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী আপেল মাহমুদ এবং মূল কণ্ঠ দিয়েছিলেন স্বপ্না রায়। আরও কণ্ঠ দিয়েছিলেন আপেল মাহমুদ এবং সহশিল্পীরা।
তিনি ২০১৫ সালের ১৭ই জানুয়ারি কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। আর আমরা হারাই এক উজ্জ্বল নক্ষত্র।
তার এই প্রয়াণ দিবসে ‘সঙ্গীতাঙ্গন’ এর পক্ষ হতে এই মহান গীতিকবি গোবিন্দ হালদারের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে তার আত্মার শান্তি কামনা করছি। তিনি বেঁচে থাকবেন চিরদিন তার অমর সৃষ্টিকর্মের মাঝে।