– রহমান ফাহমিদা, সহকারী- সম্পাদক।
সঙ্গীতজগতের প্রায় সকল ক্ষেত্রে ছিল যার পদচারণা তিনি হলেন, বরেণ্য সুরকার, বেহালাবাদক, সঙ্গীতজ্ঞ, গীতিকার এবং সঙ্গীত পরিচালক শ্রদ্ধেয় আলাউদ্দিন আলী। তিনি সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে সাতবার এবং গীতিকার হিসেবে একবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। আজ ২৪ ডিসেম্বর তাঁর জন্মদিন।
আলাউদ্দিন আলী ১৯৫২ সালের ২৪ ডিসেম্বর মুন্সীগঞ্জের টংগীবাড়ি থানার বাঁশবাড়ি গ্রামের এক সাংস্কৃতিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম জাবেদ আলী ও মাতার নাম জোহরা খাতুন।
আলাউদ্দিন আলী তাঁর পিতা জাবেদ আলী ও ছোট চাচা সাদেক আলীর কাছ থেকে প্রথম সংঙ্গীত শিক্ষা গ্রহণ করেন। ১৯৬৮ সালে তিনি যন্ত্রশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্র জগতে প্রবেশ করেন এবং বিখ্যাত সুরকার ও সংঙ্গীত পরিচালক আলতাফ মাহমুদের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন। এরপর তিনি প্রখ্যাত সুরকার আনোয়ার পারভেজ সহ বিভিন্ন সুরকারের সহযোগী হিসেবে কাজ করেন।
আলাউদ্দিন আলী ১৯৭৫ সালে সঙ্গীত পরিচালনা করে বেশ প্রশংসিত হন। তিনি গোলাপী এখন ট্রেনে (১৯৭৯), সুন্দরী (১৯৮০), কসাই এবং যোগাযোগ চলচ্চিত্রের জন্য ১৯৮৮ সালে শ্রেষ্ঠ সঙ্গীতপরিচালক হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে তিনি শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়াও তিনি খ্যাতিমান পরিচালক গৌতম ঘোষ পরিচালিত ‘পদ্মা নদীর মাঝি’ চলচ্চিত্রে সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন। এরমধ্যে ১৯৭৮ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত টানা তিনবার পুরস্কৃত হয়ে সঙ্গীত পরিচালক হিসেবে রেকর্ড গড়েছিলেন তিনি। যে রেকর্ড আজও কেউ ভাঙতে পারেনি। তাঁর সুর করা গানের সংখ্যা পাঁচ হাজারেরও বেশী।
আলাউদ্দিন আলী’র জনপ্রিয় কিছু গান – যে ছিল দৃষ্টির সিমানায়, একবার যদি কেউ ভালোবাসতো, প্রথম বাংলাদেশ আমার, শেষ বাংলাদেশ, হয় যদি বদনাম হোক আরো, সুখে থাকো ও আমার নন্দিনী, আছেনা আমার মোক্তার আছেন আমার ব্যারিস্টার, বন্ধু তিনদিন তোর বাড়ি গেলাম দেখা পাইলাম না, আমায় গেঁথে দাওনা মাগো, একটা পলাশ ফুলের মালা, কেউ কোনোদিন আমারে তো কথা দিল না, জন্ম থেকে জ্বলছি মাগো, পারি না ভুলে যেতে, স্মৃতিরা মালা গেঁথে, প্রভৃতি।
আলাউদ্দিন আলী নজরুলসঙ্গীত শিল্পী সালমা সুলতানাকে (মৃত্যু -২০১৬) বিয়ে করেন। তাদের মেয়ে আলিফ আলাউদ্দিন একজন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী।
আলাউদ্দিন আলী ফুসফুসের প্রদাহ ও রক্তে সংক্রমণের সমস্যায় ভুগছিলেন দীর্ঘদিন। তাকে প্রথমে ২০১৫ সালের ৩ জুলাই ব্যাংকক নেওয়া হয়েছিল। সেখানে পরীক্ষার পর জানা যায়, তাঁর ফুসফুসে একটি টিউমার রয়েছে। এরপর তার অন্যান্য শারীরিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যানসারের চিকিৎসাও চলছিল। পরবর্তিতে শারীরিক অবস্হার অবনতি হলে ৮ আগস্ট ২০২০ শনিবার তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং লাইফ সাপোর্ট দেয়া হয়। লাইফ সাপোর্টে থাকাকালীন ৯ আগস্ট ২০২০, রবিবার বিকাল সাড়ে ৫টায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তার এই মৃত্যুতে সংগীত জগতের অনেক বড় ক্ষতি হয়ে গেল! যা আর পুরণ হওয়া সম্ভব নয়। যুগ যুগ ধরে আলাউদ্দিন আলীর মত মানুষরা একবারই আসে।
সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে এই বরেণ্য সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক শ্রদ্ধেয় আলাউদ্দিন আলীর প্রতি রইল বিশেষ শ্রদ্ধান্জলী।