asd
Friday, November 22, 2024

জন্মদিনে কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন এর প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা…

– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।

সৃষ্টিকর্তার মহানুভবের উপহারস্বরূপ অনেকেই সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী হয়ে থাকেন, যাকে আমরা ইংরেজিতে বলি গড গিফটেড! তেমনই সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী একজন হলেন বাংলাদেশের জীবন্ত কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী শ্রদ্ধেয় সাবিনা ইয়াসমিন। যার সুরেলা কণ্ঠের জাদুতে মুগ্ধ হয়ে আছেন বাংলাদেশের ভক্ত শ্রোতা থেকে শুরু করে দেশের বাইরের অগুণিত মানুষ। সম্প্রতি প্রয়াত কিংবদন্তি গীতিকার, সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক ও গায়ক শ্রদ্ধেয় আজাদ রহমান তাঁকে সব সময় গানের পাখি বলে ডাকতেন (কোনো এক সাক্ষাৎকারে দেয়া সাবিনা ইয়াসমিনের ভাষ্যমতে)। বাংলাদেশের মানুষ এই গানের পাখির সুরেলা কণ্ঠের গান শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকে।
আজকে (৪সেপ্টেম্বর) বিশ্বব্যাপী খ্যাতিমান কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিনের জন্মদিন। এই করোনার ক্রান্তিলগ্নে হয়তো অত বড় করে কোনো জন্মদিনের উৎসব হবে না! তবে ভক্ত শ্রোতাদের, তাঁর এই শুভ জন্মদিনের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা এবং শুভেচ্ছা যে কোনো ভাবে তাঁর কাছে পৌঁছে যাবে, আশা করছি। তিনি তাঁর দর্শক শ্রোতাদের উদ্দেশ্য বলেছেন, নতুন করে পাবার কিছু নেই, শুধু কিছু দিয়ে যেতে চাই জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত, আর সে দেওয়াটা কালজয়ী গানের মধ্যে মিশে থাক। এই দুঃসময়ে সবাই আমরা ধৈর্য, সুস্থ ও ভাল থাকি এই দোয়া করি।

সুরেলা কণ্ঠের অধিকারী জনপ্রিয় এই শিল্পীর পৈতৃক বাড়ি সাতক্ষীরায়। আমার পিতার নাম লুতফর রহমান ও মাতার নাম বেগম মৌলুদা খাতুন। তাঁর পাঁচ বোনের মধ্যে চার বোনই গান করেছেন। তাঁরা হলেন ফরিদা ইয়াসমিন, ফওজিয়া খান, নীলুফার ইয়াসমিন এবং সাবিনা ইয়াসমিন। জনপ্রিয় এই গায়িকার গান শেখা শুরু তখন থেকে যখন তাঁর বড় বোন ফরিদা ইয়াসমিন গান শিখতেন দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে তখন ছোট্ট সাবিনা ইয়াসমিনও উপস্থিত থাকতেন। পরবর্তীতে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩বছর তালিম নেন। প্রথমে ‘খেলাঘর’ নামে বেতার অনুষ্ঠানে ছোটদের গান করতেন। তাঁর গাওয়া প্রথম ছোটদের গান – ‘খোকন মনি সোনা, তোর দুটো রসগোল্লা থেকে একটা আমায় দে না!’ সাবিনা ইয়াসমিন ৭ বছর বয়সে স্টেজ প্রোগ্রামে অংশ নেন। ছোটদের সংগঠন খেলাঘরের সদস্য হিসেবে রেডিও টেলিভিশনে নিয়মিত গান করেছেন। বেতার ও চলচ্চিত্রে বড়দের গান করেন ১৯৬৭ সাল থেকে। ১৯৬৭ সালে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ এবং ‘মধুর জোছনা দিপালী’ গানটির মাধ্যমে তিনি প্লেব্যাক গায়িকা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন। তবে ‘নতুন সুর’ ছায়াছবিতে প্রথম গান করেন শিশু শিল্পী হিসেবে। দেশাত্মবোধক গানসহ বাংলাগানের বিভিন্ন ধারার নানান (উচ্চাঙ্গ ধ্রুপদ, লোকসঙ্গীত থেকে আধুনিক বাংলা গানসহ) মিশ্র আঙ্গিকের সুরে এই শিল্পীর অবাধ যাতায়াত। সাবিনা ইয়াসমিন; যিনি চার দশকেরও বেশি সময় ধরে গানের ভূবনে বিচরণ করছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে একমাত্র রুনা লায়লা ছাড়া তাঁর সমকক্ষ আর কেউ বোধহয় এত দীর্ঘ সময় ধরে আধিপত্য বজায় রেখে চলতে পারেন নাই।

গত কয়েক দশকে সাবিনা ইয়াসমিন কত সংখ্যক গান গেয়েছেন, তার হিসেব মনে হয় তিনি নিজেও দিতে পারবেন না। তবে মরমী শিল্পী সেই আব্দুল আলীম থেকে শুরু করে একালের কোনো কোনো উঠতি গায়কের সাথেও অবিরাম গেয়ে চলেছেন বিরামহীনভাবে এই শিল্পী। এই স্বনামধন্য শিল্পী সুযোগ পেয়েছেন এই উপমহাদেশের বরেণ্য সুরকার আর.ডি বর্মণের সুরে গান গাওয়ার। বিখ্যাত কিশোর কুমারের ও মান্না দের সাথেও ডুয়েট গান গাওয়ার। ১৯৮৫সালে গানের জন্য ভারত থেকে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রিও লাভ করেছেন। সাধারণত চলচ্চিত্রের গানেই তিনি বেশী কণ্ঠ দিয়েছেন।
চলচ্চিত্রে ১২হাজারের মতো গান করেছেন। এই জনপ্রিয় শিল্পীর ব্যক্তিগত ঝুলিতে আছে অসংখ্য পুরস্কার- তিনি ১৪বার জিতেছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, ৬টি বাচসাস পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে একুশে পদক, ১৯৯৬সালে স্বাধীনতা দিবসের পুরস্কার, ১৯৯১ সালে বিএফজেএ পুরস্কার। উত্তম কুমার পুরস্কার ১৯৯১, এইচ এম ভি ডাবল প্লাটিনাম ডিস্ক, বিশ্ব উন্নয়ন সংসদ থেকে সঙ্গীতে ‘ডক্টরেট’ ডিগ্রি লাভ করেছেন ১৯৮৪ সালে, ১৯৭৪ ও ১৯৭৫ সালে জহির রায়হান চলচ্চিত্র পুরস্কার, ১৯৯০ সালে শেরে বাংলা স্মৃতি পদক, ১৯৯২সালে অ্যাস্ট্রোলজির পুরস্কার, ১৯৯২সালে জিয়া স্মৃতি পদক এবং নিউইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস থেকে ‘বেস্ট সিঙ্গার’ পুরস্কার, ২০১২ সালে তাকে ‘বাংলা একাডেমি’ সম্মানসূচক ফেলোশিপ প্রদান করা হয় ও ২০১৭ সালে দশম স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড-দ্যা ডেইলি স্টার জীবনের জয়গান উৎসবে আজীবন সম্মাননা পান।

গান গাওয়ার জন্য তিনি বিভিন্ন দেশ ভ্রমণ করেছেন এবং বিভিন্ন দেশের ভাষায় গানও গেয়েছেন। এমনকি তিনি গাজী মাজহারুল আনোয়ারের ‘উল্কা’ নামক সিনেমাতে অভিনয়ও করেছেন। জীবন্ত কিংবদন্তি গায়িকা সাবিনা ইয়াসমিন অসংখ্য জনপ্রিয় গান দিয়ে শ্রোতাদের হৃদয় জুড়ে রয়েছেন শুরু থেকেই। ১৯৭১ সালে নঈম গহরের লেখা ও আজাদ রহমানের সুরে সাবিনা ইয়াসমিনের গাওয়া ‘জন্ম আমার ধন্য হল মাগো’ গানটি মুক্তিযোদ্ধাদের অসীম অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিল যুদ্ধক্ষেত্রে। তিনি চলচ্চিত্রের অসংখ্য কালজয়ী গানের শিল্পী যা লিখে শেষ করা যাবে না। বহুদিন আগে একটি টিভি অনুষ্ঠানে দেখেছিলাম, ঐ অনুষ্ঠানে সাবিনা ইয়াসমিনের কাছে গান নিয়ে কোনো একটি মজার ঘটনা জানতে চাওয়া হলে তিনি তখন একটি মজার ঘটনা বলেন, একদিন তাঁরা কয়েকজন মিলে গল্প করছিলেন তখন তাঁকে গান গাইতে বলা হলে তিনি গান গাইছিলেন। ঠিক তখনই বাসার পাশ দিয়ে এক লোক হেঁটে যাচ্ছিলেন। যেহেতু লোকটি সাবিনা ইয়াসমিনকে দেখতে পাচ্ছিলেন না! তাই লোকটি তখন তাঁর গান শুনে মন্তব্য করেছিলেন, ইস! সাবিনা ইয়াসমিন হইবার চায়। হা হা হা। আসলেই সাবিনা ইয়াসমিনের ভক্ত শ্রোতারাও জানেন, সাবিনা ইয়াসমিন একজনই আছেন। তাঁর মত শিল্পী আর হবেনা কোনদিনই।

জনপ্রিয় কন্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন জন্মদিন প্রসঙ্গে কোনো একসময় তার এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, জন্মদিনটা সবসময়ই আমার কাছে খুব ভালোলাগার। কিন্তু বয়স বাড়ছে, আর এ বিষয়টি যখন মনে পড়ে তখন মন খারাপ হয়ে যায়। তারপরেও এখনো বেশ ভালো আছি, সুস্থ আছি -এটাই আল্লাহ্‌র কাছে শুকরিয়া। আল্লাহ সবাইকে ভালো রাখুন, সুস্থ রাখুন। আমার জন্য দোয়া করবেন। ২০০৭ সালে সাবিনা ইয়াসমিন গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা ও দোয়ায় তিনি আবার সুস্থ হয়ে সবার মাঝে ফিরে আসেন। এর পর থেকে তিনি তাঁর শ্রোতা ও ভক্তদের নতুন নতুন গান উপহার দিয়ে যাচ্ছেন।

কিংবদন্তি ও বিশ্বখ্যাতিমান জনপ্রিয় শিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন-এর শুভ জন্মদিনে সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে রইল অনেক অনেক শুভকামনা ও ফুলেল শুভেচ্ছা। সুস্থ থাকুন,ভালো থাকুন এবং আপনার ভক্ত শ্রোতাদের নতুন নতুন গান উপহার দিন, এই দোয়া রইলো। আপনার জন্য শুভ জন্মদিনে শ্রদ্ধা ও ভালবাসা ।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles