– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।
গান তো গানই। কত ধরণের গান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আমাদের দেশে। কিন্তু তা হারিয়ে গেছে বিবর্তনের ফেরে। যা এখনকার মানুষ চিনেনা। কেউ কেউ আছেন আজই প্রথম শুনেছেন এ গানের নাম। আর এটাই তো স্বাভাবিক। যে কালের মানুষ সে কালের সংস্কৃতিকে মনে রাখেন তারা। এমনই এক গানের সাথে পরিচিত হবো আজ যা একদমই অজানা অনেকের। আর সে গানের নাম হলো বিচার গান। আগে কখনো শুনেছেন এ গানের নাম ?
বিচার গান এক প্রকার লোকসঙ্গীত। নির্দিষ্ট একটি বিষয় অবলম্বনে দুটি পক্ষ কথা ও সুরসহযোগে প্রশ্নোত্তরের মাধ্যমে এ গান পরিবেশন করা হয়। বাংলা লোকসঙ্গীতের একটি বড় অংশ হচ্ছে বিচার গান। বিচার গান মূলত আধ্যাত্মসঙ্গীত এবং এ গান বাউলদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। বাউলদের মধ্যে সাধন-ভজন সংক্রান্ত মৌলিক কোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে গানের মাধ্যমে সেগুলির ব্যাখ্যা করা হতো। কালক্রমে এ ধারার বিস্তার ঘটে এবং অন্যমতের অনুসারী কবি-গায়েনরাও বিচিত্র বিষয়ে প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হতে থাকে। বিচার গানের আসর বসে সাধারণত দর্শক-শ্রোতাদের মাঝখানে। দুজন গায়ক বা বয়াতির মধ্যে গানের প্রতিযোগিতা হয়। প্রথমে বিষয় নির্বাচন করে পরে দুজন বয়াতির একজন পক্ষে এবং অন্যজন বিপক্ষে থেকে নিজ নিজ যুক্তিসহ গানের কথায় প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা করে। বিচার গানের বিষয় প্রধানত শরিয়ত, মারিফত, নবীতত্ত্ব, আদমতত্ত্ব, রসতত্ত্ব, সৃষ্টিতত্ত্ব, নারীতত্ত্ব, যৌবনতত্ত্ব প্রভৃতি। এছাড়া নারী-পুরুষ, গুরু-শিষ্য প্রভৃতি বিষয় নিয়েও এ গানের প্রতিযোগিতা হয়। বিচার গান দীর্ঘসময় ধরে পরিবেশিত হয়। গান পরিবেশনকালে মূল গায়েন দাঁড়িয়ে গান করেন
এবং দোহাররা তাঁর সঙ্গে ধুয়া ধরে।
বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় বিচার গান ভিন্ন ভিন্ন নামে পরিচিত এবং এর পরিবেশনের ধরণও ভিন্ন। ঢাকা ও পূর্ব সিলেটে বাউল গান, টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহে ‘ফকিরালি গান’, যশোরে ধুয়া গান, খুলনায় ‘শব্দ গান’, কুষ্টিয়ায় ‘ভাবগান’ এবং চট্টগ্রামে কবিগান নামে পরিচিত। বর্তমানে মানিকগঞ্জ ও ফরিদপুরের বিভিন্ন এলাকায় বিচার গান পরিবেশিত হয়। এ হলো বিচার গানের প্রেক্ষাপট। আমরা আমাদের অতীত সংস্কৃতির সঙ্গে যাতে পরিচিত হতে পারি সেই উদ্দ্যেশই আমাদের বিভিন্ন ধরণের গানের আলোচনা। সবার সুস্থ্য ও সুন্দর জীবন কামনা করি। ভালো থাকুন সুখে থাকেন সঙ্গীতাঙ্গন এর সাথে থাকুন।