– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।
বাংলা ব্যাণ্ড সঙ্গীতের ধ্রুবতারা হয়ে যিনি চিরদিন অমলিন হয়ে থাকবেন তিনি হলেন আইয়ুব বাচ্চু। যাকে পরিচয় করিয়ে দেবার মত কিছু নেই। তিনি এমনই এক নাম। যার গানে গানপ্রিয়দের হৃদয়পটে সদা এক ভিন্নমাত্রায় রেখাপাত করে চলে…। আজ তাঁর ৬০তম জন্মদিন। অর্থাৎ, হীরক জয়ন্তীতে আইয়ুব বাচ্চু। তাঁর পুরো নাম আইয়ুব বাচ্চু রবিন।
১৬ আগস্ট, ১৯৬২ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং একজন বাংলাদেশী সঙ্গীতজ্ঞ, গায়ক-গীতিকার এবং গীটারবাদক ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু। তিনি রক ব্যান্ড এল আর বি এর গায়ক ও গীটারবাদক হিসেবে সমগ্র বিশ্বে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। তাকে বাংলাদেশের জনপ্রিয় সঙ্গীতের ধারায় অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিল্পী এবং গীটারবাদক হিসেবে মান্য করা হয়।
হৃদয়ের ভালোবাসা দিয়ে গড়ে তুলেছিলেন লাভ রানস ব্লাইন্ড (এলআরবি) ব্যান্ড। আইয়ুব বাচ্চু স্মরণে নির্মাণ করা হয়েছে বাচ্চুর জন্মস্থান চট্টগ্রাম নগরীর প্রবর্তক মোড়ে ‘রূপালী গিটার’ ভাস্কর্য। এই ভাস্কর্যের নামকরণ করা হয়েছে ১৯৯৬ সালের ‘ফেরারী মন’ অ্যালবামের ‘রূপালী গিটার’ গানের শিরোনাম অনুসারে।
এল আর বি’র সাথে সে ছয়টি মেরিল প্রথম আলো পুরস্কার এবং একটি সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস জিতেছেন। ২০০৪ সালে বাচসাস পুরস্কার জিতেছিলেন সেরা পুরুষ ভোকাল বিভাগে। ২০১৭ সালে সে টেলে সিনে আজীবন সম্মাননা পুরস্কার জিতেছিলেন।
বাচ্চু তার বান্ধবী ফেরদৌস চন্দনা’র সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন ১৯৯১ সালের ৩১শে জানুয়ারিতে। তাদের দু’টি সন্তান আছে। মেয়ে ফাইরুজ সাফরা আইয়ুব এবং ছেলে আহনাফ তাজওযার আইয়ুব।
১৯৭৭ সালে তার নিজের ব্যান্ডে কাজ করার পাশাপাশি সে ‘ফিলিংস’ নামের একটি রক ব্যান্ডে যোগ দেন গিটার বাদক হিসেবে, যেখানে তিনি কাজ করেছিলেন জেমস এর সঙ্গে। জেমস বলেছিল, সে বাচ্চুকে একটি চায়ের দোকানে গিটার বাজাতে দেখেছিল এবং বাচ্চুর গিটার বাজানো দেখেই সে তাকে ফিলিংসে যোগ করতে বলেন। বাচ্চু তার কথায় রাজি হয়ে যান এবং পরবর্তী তিন বছর, ১৯৮০ সাল পর্যন্ত ওই ব্যান্ডে কাজ করেন। এরপর কাজ করেন ‘সোলস’ এর সাথে। ‘মানুষ মাটির কাছাকাছি’ (১৯৮৭) এই অ্যালবামটিতেই বাচ্চুর সোলসের হয়ে গাওয়া প্রথম গান ‘হারানো বিকেলের গল্প’ প্রকাশ পায়। সোলসের সাথে তার শেষ অ্যালবামটি ছিল ‘ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট’ যা প্রকাশ পেয়েছিল ১৯৮৮ সালে।
১৯৯১ সালের এপ্রিল মাসে, এলআরবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের প্রথম কনসার্টটি করে। কনসার্টটি ‘বামবা’ দ্বারা পরিচালিত হয়েছিল, যা স্বৈরাচারী নেতা হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ এর পতনের উদ্যাপন করেছিল।
একনজরে দেখে নেয়া যাক তাঁর সঙ্গীত কর্মের উল্লেখযোগ্য কিছু নাম :
ব্যান্ড অ্যালবামের মধ্যে আছে-
‘এল আর বি ১’ ও ‘এল আর বি ২’ (বাংলাদেশের প্রথম ডাবল এলবাম ) (১৯৯২)
সুখ (১৯৯৩)
তবুও (১৯৯৪)
ঘুমন্ত শহরে (১৯৯৫)
স্বপ্ন (১৯৯৬)
আমাদের বিস্ময় (ডাবল এলবাম) (১৯৯৮)
মন চাইলে মন পাবে (২০০১)
অচেনা জীবন (২০০৩)
মনে আছে নাকি নাই (২০০৫)
স্পর্শ (২০০৭)
যুদ্ধ (২০১২) প্রভৃতি।
এরপর একক অ্যালবামে রয়েছে তাঁর উল্লেখযোগ্য কর্ম-
রক্ত গোলাপ (১৯৮৬)
ময়না (১৯৮৮)
কষ্ট (১৯৯৫)
সময় (১৯৯৮)
একা (১৯৯৯)
প্রেম তুমি কি! (২০০২)
দুটি মন (২০০২)
কাফেলা (২০০২)
প্রেম প্রেমের মতো (২০০৩)
পথের গান (২০০৪)
ভাটির টানে মাটির গানে (২০০৬)
জীবন (২০০৬)
সাউন্ড অব সাইলেন্স (২০০৭)
রিমঝিম বৃষ্টি (২০০৮)
বলিনি কখনো (২০০৯)
জীবনের গল্প (২০১৫)।
সোলস—
সুপার সোলস (১৯৮২)
কলেজের করিডোরে (১৯৮৫)
মানুষ মাটির কাছাকাছি (১৯৮৭) এবং ইস্ট অ্যান্ড ওয়েস্ট (১৯৮৮)।
নেপথ্য কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কণ্ঠ দিয়েছেন বেশ কিছু চলচ্চিত্রে। তার মধ্যে-
লুটতরাজ (১৯৯৬)
সাগরিকা (১৯৯৮)
লাল বাদশা (১৯৯৯)
আম্মাজান (১৯৯৯)
গুন্ডা নাম্বার ওয়ান (২০০০)
ব্যাচেলর (২০০৪)
রং নাম্বার (২০০৪)
চাঁদের মত বউ (২০০৯)
৮:০৮-এর বনগাঁ লোকাল (২০১২)
চোরাবালি (২০১২)
টেলিভিশন (২০১৩)
এক কাপ চা (২০১৪) উল্লেখযোগ্য।
পরিশেষে বলতে হয়, আইয়ুব বাচ্চু বাংলা ব্যাণ্ড সঙ্গীতে যে অনস্বীকার্য অবদান রেখে গেছেন, তা কোনোদিনও মানুষ তাঁকে ভুলতে তো পারবেই না বরং তিনি শ্রদ্ধার সাথে চিরদিন বেঁচে থাকবেন তাঁর সমগ্র ভক্ত হৃদয়ে।
সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে জন্মদিনের হীরক জয়ন্তীতে এই গুণী শিল্পী আইয়ুব বচ্চুর প্রতি জানাই শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন।
ছবি – বায়েজিদ ওয়াহিদ