ফিরোজা বেগম বাংলাদেশের স্বনামধন্য নজরুলসঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশে তিনি নজরুল সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত হয়ে আছেন। ভারতীয় উপমহাদেশে পরবর্তী প্রজন্মের কাছে তাঁকে বাংলা সঙ্গীতের প্রতীকিরূপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
আজ ফিরোজা বেগম এর জন্মদিন।
ফিরোজা বেগমের জন্ম ১৯৩০ সালের ২৮শে জুলাই ফরিদপুরের গোপালগঞ্জ মহকুমার (বর্তমান জেলা) রাতইল ঘোনাপাড়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম জমিদার পরিবারে। তাঁর বাবার নাম খান বাহাদুর মোহাম্মদ ইসমাইল এবং মায়ের নাম বেগম কওকাবুন্নেসা। শৈশবেই তাঁর সঙ্গীতের প্রতি অনুরাগ জন্মে। ১৯৫৪ সাল থেকে কলকাতায় বসবাস করতে শুরু করেন। ১৯৫৫ সালে সুরকার, গায়ক ও গীতিকার কমল দাশগুপ্তের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। ১৯৬৭ সালে ঢাকায় ফিরে আসেন। কমল দাশগুপ্ত ২০শে জুলাই, ১৯৭৪ তারিখে মৃত্যুবরণ করেন। এ দম্পতির তিন সন্তান – তাহসিন, হামীন ও শাফীন রয়েছে। হামিন ও শাফিন – উভয়েই রকব্যান্ড মাইলসের সদস্য।
১৯৪০-এর দশকে তিনি সঙ্গীত ভুবনে পদার্পণ করেন। ফিরোজা বেগম ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নকালে অল ইন্ডিয়া রেডিওতে গানে কন্ঠ দেন। ১৯৪২ সালে ১২ বছর বয়সে বিখ্যাত গ্রামোফোন কোম্পানি এইচএমভি থেকে ৭৮ আরপিএম ডিস্কে ইসলামী গান নিয়ে তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয়। কিছুদিন পর কমল দাশগুপ্তের তত্ত্বাবধানে উর্দু গানের রেকর্ড হয়। এ রেকর্ডের গান ছিল- ‘ম্যায় প্রেম ভরে, প্রীত ভরে শুনাউ’ আর ‘প্রীত শিখানে আয়া’। দশ বছর বয়সে ফিরোজা বেগম কাজী নজরুলের সান্নিধ্যে আসেন এবং তার কাছ থেকে তালিম গ্রহণ করেন। নজরুলের গান নিয়ে প্রকাশিত তাঁর প্রথম রেকর্ড বের হয় ১৯৪৯ সালে। কাজী নজরুল অসুস্থ হওয়ার পর ফিরোজা বেগম নজরুল সঙ্গীতের শুদ্ধ স্বরলিপি ও সুর সংরক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তিনি ৩৮০টির বেশি একক সঙ্গীতানুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন। নজরুলসঙ্গীত ছাড়াও তিনি আধুনিক গান, গজল, কাওয়ালি, ভজন, হামদ ও নাত-সহ বিভিন্ন ধরনের সঙ্গীতে কন্ঠ দিয়েছেন। জীবদ্দশায় তাঁর ১২টি এলপি, ৪টি ইপি, ৬টি সিডি ও ২০টিরও বেশি অডিও ক্যাসেট প্রকাশিত হয়েছে।
শিল্পচর্চায় অসাধারণ অবদানের জন্য ১৯৭৯ সালে ‘স্বাধীনতা পুরষ্কার’ লাভ করেন। এছাড়া অর্জন করেন নেতাজী সুভাষ চন্দ্র পুরষ্কার, নাসির উদ্দিন স্বর্ণপদক, সেরা নজরুল সংগীতশিল্পী হিসেবে একাডেমী স্বর্ণপদক, একাধিকবার নজরুল একাডেমী পদক, চুরুলীয়া স্বর্ণ পদক, মেরীল প্রথম আলো পুরষ্কার সহ আজীবন সম্মাননা পুরষ্কার অর্জন করেন। ২০১২ সালে তিনি ‘বঙ্গ সম্মান’ পুরষ্কার গ্রহণ করেন। সঙ্গীত সাধক ফিরোজা বেগম আজীবন গানের মাঝে তুলে ধরতে চেয়েছেন প্রাণের কথা। সঙ্গীতাঙ্গন পরিবারের পক্ষ থেকে বাংলার মহারত্ন ফিরোজা বেগমের জন্মক্ষণের শুভদিনে সীমাহীন শুভেচ্ছা ও নিরন্তন শ্রদ্ধা। কর্ম গুনেই তিনি অমর-অক্ষয় থাকুক, কর্মগুনেই তিনি উজ্জ্বল নক্ষত্র হয়ে বেঁচে থাকুক প্রাণে প্রাণে, গানে গানে।