প্রিয় পাঠক,
অভিনন্দন এবং ভালোবাসা নিবেদন করছি আপনাদের প্রতি। সঙ্গীতাঙ্গন এর উদ্দেশ্য সবসময়ই দেশের সকল সুরকার, গীতিকার, শিল্পী এবং সব ধরনের মিউজিসিয়ানদের পাশে থেকে আমাদের দেশীয় সঙ্গীতকে অনেক দুর এগিয়ে দুর নিয়ে যেতে। আমরা চাই সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে যেকোনো গানের আসল স্রষ্টা সম্পর্কে জানুক। এ জন্য আমরা সব সময় আপনাদের সহযোগীতা কামনা করছি।
কারণ দেশের একাধিক চ্যানেলে এ প্রজন্মের শিল্পীরা গানটির স্রষ্টাদের নাম না বলতে পেরে সংগ্রহ বলে থাকেন। এতে গানের মূল স্রষ্টা ব্যথিত হোন, এমন অনেক অভিযোগ প্রতিনিয়ত বাড়ছে। তাই একটি গানের মূল স্রষ্টাকে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে আমরা বহুদিন ধরেই কাজ করে যাচ্ছি, শুধুমাত্র সঙ্গীতকে ভালোবেসে। এবারের বিষয় ‘একটি গানের পিছনের গল্প’ আমাদের অনেক প্রিয় একজন সঙ্গীতপ্রেমী ভাই জনাব মীর শাহ্নেওয়াজ সঙ্গীতাঙ্গন এর মাধ্যমে জানাবেন আমাদের প্রিয় গানের পিছনের গল্প। এবং দেশের বরেণ্য সকল শ্রদ্ধাভাজন শিল্পীগন আপনারাও নিজ দায়িত্বে সঙ্গীতাঙ্গনের মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনার নিজ সৃষ্টি অথবা আপনার প্রিয় গানের গল্প। এতে আর এ প্রজন্মের শিল্পীরা ভুল করবেন না গানের স্রষ্টাকে চিনতে।
আসুন সবাই গানের সঠিক ইতিহাস জানতে একতা গড়ি। – সম্পাদক
– তথ্য সংগ্রহে মীর শাহ্নেওয়াজ…
নজরুল সঙ্গীতের এক কিংবদন্তী শিল্পী শ্রদ্ধেয়া ফিরোজা বেগম এর শুভ জন্মদিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি।
আসুন জেনে নেই কেন দেবদাস (১৯৭৯) ছায়াছবিতে “শাওন রাতে যদি, স্মরণে আসে মোরে” নজরুল সঙ্গীতটি প্লেব্যাক করার জন্য অনুরোধ করার পরও শিল্পী ফিরোজা বেগমের গাওয়া হয়ে ওঠেনি।
“শাওন রাতে যদি, স্মরণে আসে মোরে” – নজরুল-সঙ্গীত…
শুধু গান দিয়ে মান্না দে অনেকের ধারণা বদলে দিয়েছেন। ১৯৭৯ সালে দিলীপ রায়ের ‘দেবদাস’ ছায়াছবিতে মান্না দে দুটি নজরুল-সঙ্গীত গেয়েছিলেন – ‘শাওন রাতে যদি’, আর ‘যেদিন লব বিদায়’।
একজন বিশিষ্ট সঙ্গীত-সমালোচককে কেউ এই গানের রেকর্ডটি দিয়েছিলেন গানগুলো শোনার জন্য। তাঁর কিন্তু গান শুনতে মন চাইল না, যখন রেকর্ডে লেখা দেখলেন, ‘শাওন রাতে যদি’ গানটি গেয়েছেন মান্না দে।
আসলে জগন্ময় মিত্রের গাওয়া (শোনা যায় এই গানের সুর জগন্ময়বাবু ১৯৪১ সালেই বেসিক গান হিসেবে রেকর্ড করেছিলেন) এই গানটির তিনি এত ভক্ত ছিলেন যে, অন্য কারও কণ্ঠে গানটি শুনতে চাইতেন না। তাঁর ধারণা ছিল, অন্য কোনও শিল্পীই জগন্ময় মিত্রের গায়কির ধারে-কাছে আসতে পারবেন না। খামোখা ‘কান’ নষ্ট করে লাভ কী!
একদিন তাঁর কী মনে হল মান্না দে’র রেকর্ডটি চালালেন। এবং গান শুনতে শুনতে মুগ্ধতার শেষ সীমায় পৌঁছে গেলেন তিনি। কী অপূর্বই না গেয়েছেন মান্না দে। ‘শাওন’ তাঁর দু’চোখে বাসা বাঁধল। মনে মনে বললেন, “ক’জনা তোমার মতো গাইতে জানে!”
গানটি দেবদাস (১৯৭৯) ছায়াছবিতে প্লেব্যাক করার অনুরোধ করার পরও কেন গাওয়া হয়ে ওঠেনি প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কিংবদন্তী নজরুল-সঙ্গীত শিল্পী ফিরোজা বেগম যা বলেছিলেনঃ
“একবার কলকাতার ‘দেবদাস’ ছায়াছবিতে কাজী নজরুল ইসলামের ‘শাওন রাতে যদি’ গানটি প্লেব্যাক করার জন্য আমাকে অনুরোধ করা হলো। কারণ, এর মধ্যেই আমার গলায় দারুণ জনপ্রিয় হয়েছিল এ গান।
তবে শিল্পীজীবনের প্রথম থেকেই আমার পণ ছিল, ছায়াছবিতে গান করব না। তাই ছায়াছবিতে গান গাইতে আমার অপারগতার কথা জানালে ‘দেবদাস’ ছায়াছবিতে ওই গানটি পরে নারী মুখের বদলে পুরুষের মুখে নিয়ে যাওয়া হয়। চুনিলাল (উত্তম কুমার) চরিত্রের মুখে এ গানটি গেয়েছিলেন কণ্ঠশিল্পী মান্না দে। এ গান নিয়ে সে সময় মান্না দে অসংখ্যবার কথা বলেছেন আমার সঙ্গে। তিনি বলেছিলেন, ‘আপনার রেকর্ডটি আগে শুনতে হবে। তারপর আমি গান করব।’
১) শাওন রাতে যদি / কণ্ঠশিল্পীঃ মান্না দে / ছায়াছবিঃ দেবদাস (১৯৭৯)
https://www.youtube.com/watch?v=2WtStzrVl9w
২) শাওন রাতে যদি / কণ্ঠশিল্পীঃ ফিরোজা বেগম
https://www.youtube.com/watch?v=JMIUbMPrUwA