– রহমান ফাহমিদা, সহকারী-সম্পাদক।
প্রথমেই জেনে নেই ‘মুডসিঙ্গার’-এর ব্যাপারটি কি ? আমরা জানি যে, প্রতিটি মানুষের সময়ের সাথে সাথে মুড বা মনের আবেগের পরিবর্তন হয়। তাই কখনও সকালে একটি গান ভালো লাগলেও বিকেলে তা ভালো নাও লাগতে পারে। এক কথায় বলতে পারি, সময়ের সাথে সাথে পরিবর্তন হয় মনের চাহিদা। আর এই কথাটি চিন্তা করেই সুদূর ইংল্যান্ডের, অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রিধারী এবং ক্যান্সার গবেষক প্রোফেসর মোস্তাক ইবন আইয়ুব, মিউজিকের একটি নতুন প্লাটফরম তৈরির কথা ভাবলেন। ২০১৭ সালে সে বাংলাদেশে এসে বুয়েটের এবং ঢাকা ইউনিভার্সিটির কিছু ছেলেদের নিয়ে একটি টিম গঠন করেন, যারা মুলত এই মিউজিক প্লাটফর্মের গবেষণার কাজগুলো করছেন। বর্তমানে তাঁদের এই টিমে প্রায় আট/দশ জনের মত যুক্ত আছেন।
অধ্যাপক মোস্তাক ইবন আইয়ুবের চেষ্টার ফলস্বরূপ ২১ জুলাই (২০২১) বুধবার, আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স-ভিত্তিক নতুন যুগের সংবেদনশীল মিউজিক প্লাটফরম হিসেবে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করল ‘মুডসিঙ্গার’ (Moodsinger)। একজন শ্রোতার মনের চাহিদা অনুযায়ী তাঁর জন্য সঠিক গানটি খুঁজে বের করতে পারবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, মুডসিঙ্গারে (Moodsinger) যুক্ত আছেন সেইসব উদ্ভাবকেরা।
১০০০-এর বেশি জনপ্রিয় বাংলা গানের ভাণ্ডার নিয়ে যাত্রা শুরু করা এই প্লাটফর্মটির অনন্য বৈশিষ্ট হচ্ছে শ্রোতার মনের ভাষা বুঝে এটি গান শোনার ব্যবস্থা করবে। এতে আছে সময় ও আবেগ নির্ভর গানের সংকলন ও শোনার ব্যবস্থা, যা পুরোটাই স্বয়ংক্রিয়। আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স-ভিত্তিক এ্যালগরিদম দিয়ে গান নির্বাচন ও পরিবেশনের মাধ্যমে প্লাটফর্মটি শ্রোতাদের কখনো করবে উজ্জীবিত, কখনো স্মৃতিকাতর আবার কখনো তাঁর মনে আয়েশি অনুভূতির জন্ম দিবে।
যারা কণ্ঠশিল্পী বা কম্পোজার, তাঁরা একটি মুডসিঙ্গার-এ একাউন্ট খুলে তাঁদের গান আপলোড করতে পারবেন। শুধু বাংলাদেশের গান দিয়ে শুরু হলেও মুডসিঙ্গার-একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ। ইতিমধ্যে কিছু ইংরেজি গান যুক্ত হয়েছে এই প্লাটফর্মে। তবে বাংলাদেশকে সবসময়ই গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে রাখা হবে বলে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কাজ করা এর গবেষণা ও উন্নয়ন দলের সদস্যবৃন্দ। মুডসিঙ্গার-এ এমন সব অনন্য বৈশিষ্ট্যের সমাহার রয়েছে, যা এমনকি পৃথিবীর ইতিপূর্বে প্রতিষ্ঠিত মিউজিক প্লাটফর্মেও দেখা যায় না।
প্রথমেই বলতে হবে Analyze Songs নামের ফিচারটির কথা। এই ফিচারটি গান তৈরির পেছনে যারা কাজ করেন তাদের জন্য Moodsinger-এর পক্ষ থেকে একটি ভীষণ কার্যকর উপহার। এই ফিচার ব্যবহার করে একজন গীতিকার, সুরকার বা কম্পোজার এবং কণ্ঠশিল্পী তাদের তৈরি করা গানটি কোন ধরণের বৈশিষ্ট্য ধারণ করে তা নির্ণয় করতে পারবেন। ফিচারটি ব্যবহার করতে চাইলে সাইন আপ করে Moodsinger-ওয়েবসাইটের উপরের দান কোণায় প্রোফাইল ছবির নিচে Analyze Songs বাটনটি খুঁজে নিতে হবে।
গানে গানে বন্ধুত্ব উদযাপনের সুযোগ করে দিচ্ছে Shared Playlists। এই ফিচারটি ব্যবহার করে একজন শ্রোতা বিশেষ পছন্দের কেউ বা বন্ধুদের সাথে মিলে তৈরি করতে পারবে প্রিয় গানের এক বা একাধিক Plylist। একটি Playlist তৈরি করে তা পছন্দের যে কারো সাথে শেয়ার করে আমন্ত্রণ জানালে তারাও গান যোগ করে একসাথে শুনতে পারবে। গানে গানে বন্ধুত্ব তৈরি ও তা উদযাপনের এ এক অনবদ্য সুযোগ।
প্রিয় কাউকে গানে গানে মনের কথাগুলো বলতে ব্যবহার করা যাবে Dedicate ফিচারটি। গান শুনতে শুনতে মানুষটি আপন মনের কথা গুলো পড়তে পারবে। এ বিষয়টির মধ্যে ভিন্ন রকমের রোমান্টিকতা আছে। Dedicate বাটনটি ব্যবহার করতে Moodsinger প্লেয়ার এর ডানপাশে Dedicate বাটনটি খুঁজে নিতে হবে।
Moodsinger- এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ফিচার Mood Compass। একজন শ্রোতা কোনো আবেগ নিয়ে গান শোনা শুরু করেছেন এবং একটি সেশন তার মনের আবেগের প্রকৃতি কীভাবে পরিবর্তন হয়েছে তা দেখে নেয়া যাবে Mood Compass ফিচারটি ব্যবহার করে। Mood Compass ফিচারটি ব্যবহার করতে চাইলে সাইন আপ করে Moodsinger -ওয়েবসাইটের উপরের ডান কোণায় প্রোফাইলের ছবির নিচে Dashboard বাটনে ক্লিক করে বামপাশ থেকে Mood Compass ফিচার নির্বাচন করে নিতে হবে।
Moodsinger- এর বিভিন্ন উদ্যোগ বা কার্যক্রমের কথা তো জানলাম। এবার জেনে নেই অধ্যাপক এবং গবেষক মোস্তাক ইবন আইয়ুব-এর কিছু কথা! কারণ এই মিউজিক প্লাটফরমের চিন্তাভাবনা তাঁর কাছ থেকেই এসেছে এবং তিনিই উদ্যোগ নিয়েছেন এটি তৈরি করার। সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে তাঁর সাথে আলাপচারিতায় সংগীতের বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। জানা যাক সেসব কথা-
Moodsinger-এর বিষয়টা কি ? তা যদি বলতেন-
Moodsinger- এর পেছনে যে ফিলোসোফি সেটা হচ্ছে যে, একজন শ্রোতার মনের আবেগের সাথে মিলিয়ে তাঁর কাছে গানকে পৌঁছে দিতে চাই। আইডিয়াটা এরকম যে, আমরা এক একটা মানুষ এক এক রকম এবং আমাদের গানের চয়েস এক এক রকম। আমাদের দিনের পারটিকুলার সময়ে আমাদের মন মেজাজের ওপর ভিত্তি করে আমাদের বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গান শুনতে ইচ্ছে করতে পারে! আমরা এই বিষয়টাকে আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্স যেটা আছে তা ব্যবহার করে একটা গবেষণা ভিত্তিক কাজ করছি প্রায় পাঁচ বছর ধরে। এটার ওপর ভিত্তি করে আমরা একটা নতুন যুগের সংবেদনশীল মিউজিক প্লাটফর্ম দাঁড় করিয়েছি যেখানে মানুষ নিজের মত করে গান সাবমিট করতে পারবে বা দিতে পারবে এবং যে গানগুলো তাঁরা দিলেন, সেই গানগুলো আবার যারা গানের শ্রোতা তাদের মনের ভাব অনুযায়ী আমরা বা আমাদের এই প্লাটফর্মটা তাদেরকে পৌঁছে দিতে পারব। শ্রোতা এবং শিল্পী দু’জনের মধ্যে সমন্বয়সাধন করাই হল ‘মুডসিঙ্গার’ (Moodsinger) এর কাজ।
এটাকি অনলাইন ভিত্তিকই থাকবে ? এখানে অতীত বর্তমান সবধরনের গান থাকবে কি!-
জী, অনলাইন ভিত্তিক থাকবে পরবর্তিতে মোবাইল এ্যাপের মাধ্যমেও ব্যবহৃত হবে। অতীত বর্তমানের সব গানই থাকবে।
আপনাদের এখানে কি, যে কেউ গান আপলোড করতে পারবে ? নাকি আপনাদের এই ক্ষেত্রে কোনো নীতিমালা আছে-
জী, একটা নীতিমালা আছে সেটা হল-প্রথমতঃ গানটি যিনি আপলোড করছেন সেটা তার মৌলিক গান কিনা! নাকি অন্য একজনের গান দিয়ে দিলেন! তা আমরা অবশ্যই বাছাই করব। দ্বিতীয়তঃ গানটি তার নিজস্ব বা মৌলিক গান না কিন্ত গানটি সে যার গান তাঁর থেকে কিনে নিয়েছেন বা তিনি এখন কিনে নেয়ার ফলে গানটির স্বত্বাধিকারী। তবে তাকে সেটা ক্লিয়ার করতে হবে বিভিন্ন ডকুমেন্টস দেখিয়ে। তার আগে তাঁর একটা নিজের একটি ভেরিফাইড একাউন্ট থাকতে হবে। এরপর তার গান রুচি সম্মত কিনা! গানের কথা থেকে শুরু করে আনুসাঙ্গিক সবকিছু ঠিক আছে কিনা তা আমাদের টিম যাচাই-বাছাই করে দেখবে।
আপনারা প্রথমে বাংলা গান নিয়ে কাজ করছেন। ভারতের বাংলা গান রাখছেন কি!-
ভারতের বাংলা গান আপাতত রাখছি না। পরবর্তীতে আন্তর্জাতিকভাবে কাজ করবো। আমরা শুরু করতে চাই বাংলাদেশ থেকে এবং বাংলাদেশের মিউজিককে যদি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিতে পারি তাহলে দারুণ একটা ব্যাপার হবে। কারণ বাইরের মিউজিকের অবস্থা থেকে আমরা খুবই খারাপ অবস্থায় আছি। আমাদের রোমান্টিক গানগুলো ‘আমি’/’তুমি’-তেই সীমাবদ্ধ এবং না পাওয়ার বেদনায় ভরপুর। অথচ আপনি যদি ওয়েস্টার্ন মিউজিকে যান, দেখবেন তাঁদের গানে কতরকম ভেরাইটিজ কথা আছে। তাদের সোসাইটির দুঃখ বেদনার সব ধরনের কথা এই গানের ভেতর আছে। আমাদের দেশে তা খুবই কম। আমরা চাই এই প্লাটফর্মের মাধ্যমে মিউজিকের ফাঁক-ফোকর গুলো ধরিয়ে দিতে। তাহলে যারা কাজ করছে এই মিউজিক নিয়ে তারা আরও সচেতন হবে।
সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে আপনার ও আপনার টিমের জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা ও অভিনন্দন। আপনাদের এই কাজ সাফল্যমণ্ডিত হোক, এই কামনা করছি।
সঙ্গীতাঙ্গন-এর জন্য এবং আপনার জন্য রইল অনেক অনেক শুভকামনা। আশা করি আপনাদেরকে সবসময় আমাদের পাশে পাবো।
বিঃদ্রঃ- আপাতত কেবল ওয়েব ভার্সনেই ব্যবহার করা যাচ্ছে Moodsinger। তবে অচিরেই ওয়েবের পাশাপাশি মোবাইল এ্যাপ চালু করবে তারা। বর্তমানে ভার্সনটি মুলত একটি পরীক্ষামূলক পর্যায়। এর উদ্যোক্তারা গানপ্রিয় শ্রোতা ও গানের সাথে যুক্ত মানুষদের যে কোনো পরামর্শ সাদরে গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন। এসব পরামর্শ আমলে নিয়েই অচিরেই Moodsinger-এর পূর্ণাঙ্গ ভার্সনের যাত্রা শুরু করবে। Moodsinger-এর সবকিছু পাওয়া যাচ্ছে www.moodsinger.com ওয়েবসাইটে। আর এর বিভিন্ন ঘোষণা ও আপডেট পাওয়া যাবে ফেসবুক পেজে।