– রহমান ফাহমিদা, সহকারী-সম্পাদক।
বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৫০ বছর হয়ে গেল! এই ৫০ বছরে সঙ্গীত জগতের প্রতিটি ক্ষেত্রে সঙ্গীত জগতের কলাকুশলীগন তাঁদের ন্যায্য দাবি-দাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন। তাঁদের দাবি-দাওয়া পেশ করার জন্য ছিল না কোনো সংগঠন। তাই গত বছর সঙ্গীতাঙ্গনের তিনটি ক্ষেত্রে নানা অনিয়ম, অবহেলা আর প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিলেন যে সকল গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীবৃন্দ তাঁদের কথা ভেবে সিনিয়র-জুনিয়র গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী মিলে আলাদা আলাদাভাবে গঠন করেন- গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পী সংগঠন। পরবর্তীতে এইসকল দাবি-দাওয়াকে আরও সোচ্চারভাবে তুলে ধরার জন্য তিনটি সংগঠন একত্রিত হয়ে কাজ করার সংকল্প গ্রহণ করেন। আর সেই সংকল্পের সুত্র ধরে একত্রিত হয়ে গঠিত হল একটি সংগঠন- ‘সংগীত ঐক্য, বাংলাদেশ’।
১০ জুলাই ২০২১, শনিবার বেলা তিনটায় ‘সংগীত ঐক্য, বাংলাদেশ’ -সংগঠনটির আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশ ঘটে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে। এই সম্মেলনে ঘোষণা করা হয় সংগঠনটির কার্যনির্বাহী কমিটি। সিঙ্গার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ-এর সাধারণ সম্পাদক কুমার বিশ্বজিৎ এই কমিটি ঘোষণা করেন।
সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ-এর প্রথম এই কমিটিতে আছেন-
সভাপতি – রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা।
মহাসচিব (৩জন) – শহীদ মাহমুদ জঙ্গী, নকীব খান ও কুমার বিশ্বজিৎ।
অর্থ ও দফতর সচিব – আসিফ ইকবাল।
তথ্যপ্রযুক্তি ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সচিব – হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল।
সাংস্কৃতিক সচিব – বাপ্পা মজুমদার।
প্রচার ও প্রকাশনা সচিব – জুলফিকার রাসেল এবং
নির্বাহী সদস্য – মানাম আহমেদ, কবির বকুল, শওকত আলী ইমন ও জয় শাহরিয়ার।
গীতিকবি সংঘের সাংগঠনিক সম্পাদক সম্মেলনের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সিঙ্গার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশে-এর সভাপতি রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা। তিনি বলেন, এই মুহূর্তটি আমাদের সকলের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। কিছুদিন আগে সিঙ্গার্স অ্যাসোসিয়েশন করেছি। বিগত দিনের অভিজ্ঞতায় শিখেছি -এখন আমাদের এক হয়ে কাজ করার বিকল্প নেই। তিনি আরও বলেন, যে কোনও বিপদে ও সংকটে পরস্পরের পাশে দাঁড়ানোর বিকল্প নেই। আমাদের আরও দুটি সংগঠন হয়েছে। তিনটি আলাদা সংগঠন হলেও এক হয়ে এর মধ্যে অনেক কাজ করেছি আমরা। আজকে এই সংবাদ সম্মেলনের কারণ সেই এক হয়ে কাজ করার বিষয়টি সাংগঠনিকভাবে তুলে ধরা।
সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ গঠনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটির সভাপতি নকীব খান বলেন, সার্বিক সংগীতের মান উন্নয়ন, সম্মান ও সম্মানীর জন্য আমরা একসঙ্গে লড়াই করার প্রত্যয় নিয়েই এই প্ল্যাটফর্ম গঠন করেছি। এটা অরাজনৈতিক ও অলাভজনক সংগঠন। সংগীতের সকল পক্ষকে আস্থায় নিয়ে কাজ করে যাওয়ার জন্য কার্যকরী পদক্ষেপ নিশ্চিত করার চেষ্টা করব আমরা।
সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ-এর গঠন প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে গীতিকবি সংঘের সভাপতি শহীদ মাহমুদ জঙ্গী বলেন, গত বছর এই সময়টাতেই আমাদের তিনটি সংগঠন সৃষ্টি হয়েছে। আমরা লক্ষ্য করলাম নিজ নিজ দাবির মধ্যে কিছু অভিন্ন দাবি আছে। ১৭ দফা তৈরি করি। এরপর সবাই মিলে মন্ত্রণালয়ে বৈঠক করি। চিন্তা করলাম, কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে এক জায়গায় আসতে হবে আমাদের। আরও সম্পর্ক উন্নয়ন করতে হবে গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীদের মধ্যে। তাই তিনটি সংগঠন রেখেই একটি ফেডারেল সংগঠন করার পরিকল্পনা করি সবাই। যেটার নাম হল- সংগীত ঐক্য, বাংলাদেশ। তিনটি সংগঠন থেকে চার জন করে প্রতিনিধি নিয়েছি। একটি নির্বাহী কমিটি করেছি। আমাদের ইচ্ছা বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় সংগীতের প্রতিটি মানুষের মাঝে একটা যোগসূত্র তৈরি হোক।
আনুষ্ঠানিক ঘোষণা ও বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে কথা বলেন সংগীত ঐক্য বাংলাদেশ-এর নেতৃবৃন্দ। এর আগে গত বছর ৩ জুলাই ২০২১, প্রথমবারের মত সংগঠিত হয় ‘গীতিকবি সংঘ বাংলাদেশ’ শহীদ মাহমুদ জঙ্গী’র নেতৃত্বে। মূলত এই সংগঠনের সূত্র ধরেই কাছাকাছি সময়ে সৃষ্টি হয় রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যার নেতৃত্বে ‘সিঙ্গার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশ’ এবং নকীব খানের নেতৃত্বে ‘মিউজিক কম্পোজার্স সোসাইটি।’ গত এক বছরে এই তিনটি সংগঠন নিজস্ব সাংগঠনিক কাজের বাইরে যৌথভাবে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ করেছে, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও কপিরাইট বোর্ডের সঙ্গে। মূলত তারই সাংগঠনিক রূপ এলো, ‘সংগীত ঐক্য, বাংলাদেশ’ সংগঠনটির আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে।
সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে ‘সংগীত ঐক্য, বাংলাদেশ’ -সংগঠনটির সকল সদস্যবৃন্দের জন্য রইল অভিনন্দন ও অনেক অনেক শুভকামনা। আশা করি তাঁরা সকলে তাঁদের কার্যকারিতার মাধ্যমে সংগঠনটি এগিয়ে নিয়ে যাবেন এবং সঙ্গীতভূবনে যার যা প্রাপ্য তা ফিরিয়ে দেয়ার চেষ্টা করবেন।