– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।
বর্তমান সময়ে বাংলাদেশী নবীন শিল্পীদের মধ্যে অন্যতম প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পী হিসেবে যে ক’জন ইতোমধ্যেই নিজেদের যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েছেন তাদের মধ্যে কণ্ঠশিল্পী দিনা মাসুদ অন্যতম। জন্মগ্রহণ ও বেড়ে ওঠা রাজধানী ঢাকায়। পারিবারিক সৌভাগ্যে ছোটবেলায় বাবার কণ্ঠে গান শুনে শুনে অজান্তেই সঙ্গীতের সঙ্গে সখ্যতা হয়ে যায় তার। শুরুটা মুলত সেখান থেকেই। বলা চলে আদর্শলিপি শেখার আগেই গান শেখা আরম্ভ। এছাড়া পরিবারের সকলেই সঙ্গীতপ্রিয় হবার কারণে খুব সহজেই গানের জগতে প্রবেশ করেন দিনা। তার বাবা মাসুদ রানা একাধারে সঙ্গীতশিল্পী এবং সঙ্গীতের শিক্ষক হওয়ায় গান শেখার জন্য অন্য কোথাও যেতে হয়নি তাকে। ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকেই গানের দীক্ষা গ্রহণ। এরপর ধীরে ধীরে বয়স বাড়ার সাথে সাথে সঙ্গীতের বিভিন্ন মাধ্যমে পদচারণা ঘটে তার। শিশুশিল্পী হিসেবে বিভিন্ন মঞ্চে গান করে প্রশংসা কুড়াতে থাকেন। মাত্র ছয় বছর বয়সে বাংলাদেশ বেতার, পরে বাংলাদেশ টেলিভিশনেও শিশুশিল্পী হিসেবে গান করেছেন দিনা।
দিনা মাসুদের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ষষ্ঠ শ্রেণিতে অধ্যয়নরত অবস্থায় আমার প্রথম অডিও অ্যালবাম সাউন্ডটেকের ব্যানারে ‘চমক লাগাইছে’ প্রকাশ হয় এবং গ্রহণও করেছে শ্রোতারা।
এরপর ২০০৫ সালে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এনটিভি’র সঙ্গীত ভিত্তিক অনুষ্ঠান ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ -এর মাধ্যমে সবার নজরে নতুনভাবে ধরা দেন দিনা। সারা বাংলাদেশে মধ্যে ‘সেরা চল্লিশ’র মধ্যে জায়গা করে নেন। সেখান থেকে বিভিন্ন অডিও কোম্পানিসহ বেসরকারি টেলিভিশনেও কাজ করেন তিনি। ২০১২ সালে একই অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে সেরা ২২শে উঠে আসেন তিনি। এরপর থেকে বিভিন্ন টেলিভিশনের সঙ্গীতভিত্তিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে দেখা যায়। এছাড়া রেডিওতেও গান করেন তিনি। এ পর্যন্ত রেডিও, টেলিভিশনে ও এ্যালবাম মিলিয়ে প্রায় ২০০০ গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শিল্পী দিনা মাসুদ। এ পর্যন্ত তিনি ‘নতুন কুঁড়ি, জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহে ও অন্যান্য ক্ষেত্রে গানে অবদানের জন্য স্বর্ণপদক সহ মোট চারবার জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত হয়েছেন বলে জানান তিনি।
তিনি মূলত আধুনিক গান করেন। তবে ক্লাসিক্যাল সঙ্গীত চর্চা তার অন্যতম পছন্দের একটি। বাবার পরেই রুনা লায়লা, এন্ড্রু কিশোর, সাবিনা ইয়াসমিন, শ্রেয়া ঘোষাল, সনু নিগাম, শুভমিতাসহ বিভিন্ন গুণী সঙ্গীতশিল্পীকে গানের ভুবনের আদর্শ মানেন তিনি।
একক অ্যালবাম সম্পর্কে জানতে চাইলে জানান, এ যাবৎ মোট চারটি একক অ্যালবামের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন তিনি এবং সেগুলো হলো- চমক লাগাইসে, ভালবাসার গল্প, প্রিয়তম, বাবা আমার জান। এছাড়াও ‘বাউলা বাতাস’ সহ বেশ কিছু মিক্সড অ্যালবামেও কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কাজ করেছেন।
বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনে মৌলিক গান করছেন। সম্প্রতি বাংলা গানে প্রবাসীদের আনন্দ দানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্যমন্ত্রী কর্তৃক সম্মান সূচক পুরস্কার প্রাপ্ত হন তিনি। এবং নাহার আক্কাসের কথায়, সুমন কল্যাণের সঙ্গীতায়োজনে, দিনা মাসুদের সুরে একটি নতুন মৌলিক গানে কণ্ঠ দিয়েছেন শহীদ মিঠু ও দিনা মাসুদ নিজে। গানটি রিলিজ হবার পরে আরো অনেকেই তাকে নতুন কোন মৌলিক গানে কাজ করার উৎসাহ দিচ্ছেন। দিনা বলেন, আরো চার/পাঁচটি গানের কাজ প্রায় শেষের দিকে, আশাকরি এ বছরেই গানগুলো প্রকাশ পাবে এবং সবার ভালো লাগবে। এছাড়াও অন্য শিল্পীদের জন্যও কিছু গানের সুর করছেন তিনি।
বাংলা গান নিয়ে তিনি আরো বলেন, আমরা চাই বাংলা গানের গণ্ডিটা যাতে বাংলাদেশ তথা কয়েকটি দেশেই না থাকে। যাতে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে যায়, বিশ্বের কাছে সমাদৃত হয় এবং গানগুলো যেন চিরদিনের জন্য হয়। দুঃখ প্রকাশ করে তিনি বলেন বর্তমানে অধিকাংশ গানই দেখা যায় কয়েকদিন মিডিয়াতে বেশ সাড়া পেলেও কয়েকদিন পরে তা মানুষের মুখে ও মনেও আর থাকে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, সত্যিকার অর্থে যে কোন জিনিসেরই ধাপ/সিঁড়ি থাকে, এক এক করে সেই সিঁড়ি বেয়ে যদি কেউ উপরে ওঠে তাহলে তার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম কিন্তু যদি কেউ একবারেরই কয়েকটি সিঁড়ি ভেঙে সর্বোচ্চ চূড়ায় পৌঁছাতে চায় তাহলে তার পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আর বর্তমান সঙ্গীত জগতে এটাই বেশি হচ্ছে বলে মনে হয়, যা মোটেও কাম্য নয়। এর ফলে দেখা যায়, অনেক ভালো প্রতিভাও হারিয়ে যাচ্ছে! তবে এর মাঝেও কিছু ভালো গান হচ্ছে যা সত্যিই প্রশংসামূলক।
গানপ্রিয় ভক্ত-শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ জানিয়ে তার জন্য দোয়া প্রার্থনা করে বলেন, তারা যদি আমার গান না শুনতেন, না ভালোবাসতেন তাহলে আজকের এই দিনা মাসুদ আমি হতে পারতাম না। তাই প্রকৃত প্রশংসার দাবিদার তারাই। আর বলবো, আপনারা ভালো বাংলা গান শুনুন, ভালো গানকে ভালোবাসুন। আপনাদেরকে ভালো কিছু দেবার জন্যই আমাদের নিরলস চেষ্টা। আপনাদের প্রতি আমার ভালোবাসা নিরন্তর। ধন্যবাদ সহিত ভালোবাসা সঙ্গীতাঙ্গন’র প্রতি।