– রহমান ফাহমিদা, সহকারী-সম্পাদক।
‘কখনো কখনো আনন্দ
হয়ে যায় বেদনার!
যে যাবার সে চলে যায়
ফিরে তো আসে না আর’…
আমার এই কবিতার মূল সারমর্ম হল- ‘এটাই জীবন, এটাই নিয়তি!’। সঙ্গীতাঙ্গন -এর পক্ষ থেকে আমি এমন দু’জনের সাথে কথা বলেছি, যারা আমার সাথে কথা বলতে গিয়ে তাঁদের অশ্রু সংবরণ করতে পারেননি! কথা বলতে বলতে শুধু কেঁদেই চলেছেন। আমি বলছি তাঁদের কথা! বিশিষ্ট সরোদবাদক ও সংগীতজ্ঞ ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান -এর সহধর্মিণী পূরবী খান এবং তাঁর কন্যা রুখসানা খান এর কথা। সেদিন ৬ই জুলাই (২০২১) ছিল ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান -এর ৬৩তম জন্মবার্ষিকী। সেই জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁদের কি কি আয়োজন ছিল সেই প্রসঙ্গে জানতে গিয়ে, ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান -এর অনেক জানা-অজানা প্রসঙ্গ চলে এসেছে। ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান -এর কাছের মানুষ থেকে শুরু করে দেশ-বিদেশে তাঁর শ্রোতা ভক্তদের জন্য সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে এই ক্ষুদ্র প্রয়াস। সেদিনের সাক্ষাৎকার দুটি অবশ্যই শুরু হয় যথারীতি সালাম জানিয়ে। এখন সেদিনের সাক্ষাৎকার দু’টি হুবুহু তুলে ধরছি –
প্রথমেই ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান-এর সহধর্মিণী এবং ‘ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান সংগীত ফাউন্ডেশন’ এর আহবায়ক পূরবী খান এর সাথে সাক্ষাৎকারটি তুলে ধরছি –
ভাবী, ৬ই জুন তো ছিল শ্রদ্ধেয় ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান ভাইয়ের জন্মদিন! আপনার কাছে জানতে চাইছি জন্মদিনটা উনি কিভাবে পালন করতেন এবং সেদিন আপনার কাছে আপনার হাতের পছন্দের কোনো খাবার খেতে চাইতেন কিনা!-
জন্মদিনটা তো সবারই একটা আনন্দের দিন তাই না! সবাই আমরা চাই যে, এই দিনটি সেলিব্রেট করতে। উনিও সবাইকে নিয়ে সেলিব্রেট করতেন। সে তাঁর ভাইবোন, আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুবান্ধব সবাইকে দাওয়াত করতেন। সবার সাথে কেক কেটে খাওয়া-দাওয়া করে জন্মদিনটি পালন করতেন। তবে তাঁর জন্মদিনের সময়টা সে বেশিরভাগই দেশের বাইরে বা ইউরোপে থাকতেন। বাংলাদেশে যখন থাকতেন তখন সে এবং আমরা মিলে সবাইকে দাওয়াত দিয়ে জন্মদিনটি পালন করতাম এবং দেশের বাইরে যখন থাকতেন তখন ওখানকার সবাই দিনটিতে তাঁকে নিয়ে সেলিব্রেট করতেন। আমার সব রান্না সে খুব পচ্ছন্দ করতেন। সে খুব পরিমিত খেতেন তো তাই জন্মদিনে সেভাবে কোনো আবদার ছিল না তবে সবাইকে খাওয়াতে সে খুব পছন্দ করতেন। সব সময়ই সবাইকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াতে চাইতেন।
সে এক সাক্ষাৎকারে আমাকেও বলেছিলেন যে, সে খুব পরিমিত খাওয়া-দাওয়া করতেন কিন্ত ওনার পছন্দের খাবার কি কি ছিল, যদি বলতেন!-
উনি বেসিক্যালি ভালো খাবারগুলো পচ্ছন্দ করতেন, যেমন ধরেন- মোগল ডিশগুলো বা কাবাব জাতীয় খাবারগুলো। ওনার মেয়ের হাতের রান্না বিরিয়ানী ওনার খুব পছন্দের ছিল। আমার হাতের রান্না এত পছন্দ করতেন যে, কারো বাসায় গিয়ে খেয়ে আসলে হয়তো উনার ভাল্লাগতো না তেমন। তাই অল্প খেতেন।
তাহলে কি সে সেখান থেকে বাসায় এসে আপনার রান্না করা খাবার আবার খেতেন ?
নাহ! আবার এসে খেতেন না। তবে কখনও কখনও সে বেশী ক্ষুধা লাগলে বলতেন, আমাকে কিছু থাকলে দাও, ক্ষুধা পেয়েছে। তাছাড়া রিটায়ার্ড করার পর সে দুই-একদিন পরপরই নিজে রান্না করতেন। বিশেষ করে রাত্রের বেলায়। বিভিন্ন আইটেম রান্না করে সবাইকে নিয়ে খাওদাওয়াটা করাও ছিল তাঁর খুব পচ্ছন্দের।
যতটুকু জানি, উনি খুব ভ্রমণপ্রিয় মানুষ ছিলেন এবং আপনাদের সবাইকে নিয়ে ভ্রমণ করতে পচ্ছন্দ করতেন।
হ্যাঁ, আপনার ভাই, সবসময়ই আমাদের সবাইকে নিয়ে ঘুরতে যেতেন। বাংলাদেশের ভিতর বা দেশের বাইরে যেখানেই গিয়েছি, আমরা চারজন একসাথে গিয়েছি। প্রোগ্রাম হোক বা কোথায়ও ঘুরতে যেতে হোক, সবাই জানে আমরা চারজন একসাথেই যেতাম। জনপ্রিয় গীতিকার ও সুরকার আজাদ রহমান চাচা বলতেন, যেখানেই যাই তোমাদের চারজনকে দেখে এত ভালো লাগে যে মনে হয় তোমাদের নিয়ে বই লিখি।
শাহাদাত হোসেন ভাইতো অনেক সৌখিন ছিলেন, তাই না!
উনি অনেক সৌখিন ছিলেন। উনি রাজকীয়ভাবে চলাফেরা, খাওয়াদাওয়া, শোয়া সবই করতেন। তাঁর লাইফ স্টাইলটাই ছিল আটদশটা আর্টিস্টের চেয়ে আলাদা। যদিও গান-বাজনা তাঁর ধ্যানজ্ঞান ছিল তারপরেও সে চাকরিজীবনে ভালো একটি পোস্ট ক্যারি করছিলেন। উনি এমন সৌখিন ছিলেন যে ইউনিভার্সিটি লাইফ থেকেই নিজের গাড়ি চালিয়ে ইউনিভার্সিটিতে যেতেন। উনি সবসময়ই নিজে গাড়ি ড্রাইভ করতেন যদিও তাঁর অফিসের গাড়ি এবং ড্রাইভার ছিল। উনি আমাদের সবাইকে নিয়ে সর্বদা রাজকীয়ভাবে চলাফেরা করেছেন।
উনি চলে যাবার আগে আপনারা মনে হয় সর্বশেষ চিটাগাং ঘুরতে গিয়েছিলেন!
লাস্ট চিটাগাং, নাহ! সর্বশেষ আমরা আমাদের দেশের বাড়ি গিয়েছিলাম। আমাদের এপ্রিলে (২০২০) সুইজারল্যান্ড যাওয়ার কথা ছিল কিন্ত মার্চে করোনার ঘোষণা দিল তাই আর যাওয়া হল না। সেখানে মেয়েদের নিয়ে একটি প্রোগ্রাম করার কথা ছিল এবং ওখান থেকে দুবাই যাওয়ার কথা ছিল। তারপর তো কি দিয়ে কি হয়ে গেল! করোনার কারণে।
আমিও খুব শকড্ হয়েছিলাম খবরটা শুনে…
আমরাও তো জানি না! হাসপাতালে ভালো মানুষ হেঁটে গেল। সুস্থ মানুষ। তারপর অবস্থা খারাপ দেখে তাঁকে আইসিউতে ভর্তি করানো হল। আইসিউতে বসেই নিজে নিজের দাঁত ব্রাশ করেছেন, মুখ ক্লিন করেছেন, মুখে ক্রিম মেখেছেন সবকিছু নিজের হাতে করেছেন। এমনকি বেড প্যানও ইউজ করতে চায় নি। অথচ নড়াচড়ার কারণে তাঁর অক্সিজেন লেবেল কমে যাচ্ছিল তারপরেও সে বেড প্যান ইউজ করবে না। তার ফলে তাঁকে আলাদা চেয়ার ইউজ করার জন্য দেয়া হয়েছিল। নার্সরা বলতো আমাকে, উনি খুব সূচিবায়ী মনে হয়, খুব ক্লিন থাকতে পচ্ছন্দ করেন। আমি বলেছি হ্যাঁ। তারপর উনি চলে যাবার দুদিন আগের থেকে উনার অবস্থা এত খারাপ হতে লাগল যে তাঁকে অক্সিজেন বাড়িয়ে দিতে হচ্ছিল। তারপর তো যা হওয়ার তা হয়ে গেল! না হয় তো এমনেতেই সে অনেক ভালো ছিল। হাসপাতালে বসে সে সবার কথা বলত! কে কি করল, কার কি লাগবে, কি করতে হবে ? ড্রাইভার বয়স্ক মানুষ তাকে যেন রাত পর্যন্ত না রাখি। প্রত্যেকটা মানুষের খবর নিয়েছেন।
ভাবী, উনি চলে যাবার দশ পনের দিন আগে আমার যখন, ওনার সাথে লাস্ট কথা হয় তখন উনি খুব কাশছিলেন। তখন আমি তাঁকে বললাম, ভাইয়া আপনার কি ঠাণ্ডা লেগেছে ? তখন সে বললেন, হ্যাঁ কারণ কি জানেন! আমার এত গরম লাগে এই গরমে এবং আমার মাথা খুব ঘামায়। তাই আমি কি করি জানেন! আমি এসির টেম্পারেচার কমিয়ে দিয়ে এবং আমার মাথার কাছে ফ্যানের স্পিড বাড়িয়ে দিয়ে ঘুমিয়ে থাকি। তাই হয়তো ঠাণ্ডা লেগে গেছে। তখন আমি বললাম, ভাইয়া এই করোনার সময় তো ঠাণ্ডা লাগানো যাবে না! সবাই বলছে। তখন উনি বললেন, আমার গরম সহ্য হয় না।
আসলে হয়েছে কি জানেন! উনি সিগারেট খেতো তো, তখন প্রায়ই কাশি হত। যখন সিগারেটের মাত্রা বেড়ে যেত তখন কাশিও বেড়ে যেত। তখন দেখা যেত ইন্ডিয়া থেকে ট্রিটমেন্ট করে তাঁকে আসতে হত। তবে তিনি চলে যাবার আগে, এক বছর ধরে উনি সিগারেট ছেড়ে দিয়ে ছিলেন কিন্ত উনার ডাস্ট বা অন্য কিছু থেকেও কাশি হত। সে কারণে তাঁর এই কাশির ব্যাপারটা আমরা কেউই বুঝি নাই। উনার কাশিটা কিন্ত এমনেতেই চলে যেত কিন্ত সেই সাথে প্রেসার অনেক বেড়ে গিয়েছিল।
ভাইয়ার সাথে কথা বলে জেনেছি, তখন তাঁর কানে কি যেন সমস্যা ছিল।
হ্যাঁ, কানে সমস্যা ছিল। যখন কানে সমস্যা দেখা দিল তখন তাঁর মন খুব খারাপ হয়ে গেল! কারণ যখনই ইন্সট্রুমেন্ট বাজাতে যেত তখনই কানে ডিসটিউন শুনতো। সেই সময় খুব মন খারাপ ছিল তাঁর। কমপক্ষে ৭/৮ জন ডাক্তার দেখিয়েছেন। তখন উনি দুঃখ করে বলতেন, ‘গান-বাজনা আমাকে ছেড়ে দিয়েছে। আমার ফ্যামিলিতে আর গান-বাজনা হবে না!’ ভাবতে পারেন ? তিনি কি করে এই কথা বলতেন! একদম এইভাবে বলতেন। আমি তো এখনও ভাবতেই পারছিনা!
ভাবী, ভাইয়ার জন্য দোয়া করুন এবং সবাইকে নিয়ে সুস্থ থাকুন।
এবার আসি ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান -এর মেয়ে সরোদবাদক রুখসানা খান-এর সাথে সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গে-
৬ই জুলাই (২০২১), আপনার বাবা ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান -এর জন্মদিন উপলক্ষে কি কি করলেন, যদি জানাতেন!
উনি থাকাকালীন সাধারণত আমরা ঘরোয়াভাবে উনার জন্মদিন সেলিব্রেট করতাম। কেক কাটতাম, মানুষজন দাওয়াত দিতাম এবং উনি যখন দেশের বাইরে থাকতেন ওখানেও তাঁর জন্মদিন সেলিব্রেট করা হত। উনার জন্মদিনে সবসময়ই সেলিব্রেট হয়েছে। তবে এবার তো সেভাবে কেক কেটে জন্মদিন পালন করা সম্ভব না! ফ্যামিলি থেকে দোয়া পড়ানো হয়েছে। গরীব মানুষদের খাওয়ানো হয়েছে। আসলে ওনার উদ্দেশ্যে প্রতি সপ্তাহে এসব দোয়াদরুদ পড়ানো এবং গরীব মানুষদের খাওয়ানোর চেষ্টা করছি চালিয়ে যাওয়ার। এবার আব্বুর জন্মদিন উপলক্ষে আব্বুকে সম্মান জানিয়ে, ‘ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান সংগীত ফাউন্ডেশন’ -নামে একটা ফাউন্ডেশন লঞ্চ বা এনাউন্স করলাম, ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।
আপনাদের এই ফাউন্ডেশনের পরিচালনায় কে থাকছেন ?
এটার পরিচালনায় আমরা দু’বোন আছি, মা আছেন, ইউসুফ আলী খান আছেন এবং আরও অন্যান্য সদস্যরা আছেন।
এই জন্মদিনে তো তাহলে আপনার আব্বুকে মিস করেছেন অনেক!
অনেক, অ-নে-ক মিস করেছি! উনি যে চলে যাবেন এভাবে, আমরা ভাবতেও পারিনি। উনি যখন চলে গেলেন! ১০/১৫ মিনিট আগেও ওনার অবস্থা ভালো ছিল। আসলে করোনায় যেটা হয়, লাংটা তো বেশি এফেক্টিভ হয়ে থাকে তখন হার্ট এফেক্টিভ হয়। সেই কারণে আব্বু’র, হার্টে এফেক্ট হয়েছিল।
আপনি আপনার বাবার কাছ থেকে সরোদ বাজানোর শিক্ষা কতটুকু নিতে পেরেছেন বলে আপনি মনে করেন।
চেষ্টা করেছি। তবে ওরকম তো নিতে পারিনি! আসলে মিউজিক তো সমুদ্রের মত। ঐ সমুদ্র থেকে কিছু পরিমান নিতে পেরেছি কারণ আব্বুর তো জ্ঞানের সীমা ছিল না। আব্বু’র চলে যাওয়াটা তো মেনে নেয়া যায় না। আমাদের এই মিউজিকটা ছিল আব্বু’র সাথে এ্যাটাচ্ড। আমাদের পক্ষে খুবই কষ্টকর ছিল এই যন্ত্রটি ধরা। আব্বুকে স্মরণ করেই আবার যন্ত্রটা ধরলাম।
আশা করি এটা কখনোই ছাড়বেন না।
ছাড়া তো অসম্ভব! আপনি জানেন, ‘ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান মিউজিক ফাউন্ডেশন’ এর ভার্চুয়াল প্রোগ্রামে প্রত্যেকটি মানুষ তাঁকে এমনভাবে স্মরণ করছিলেন যে, কান্নায় কথা বলতে পারছিলেন না। এরকম ছিল ব্যাপারটা! আব্বুকে ছাড়া তাঁরা কিভাবে যন্ত্রটা ধরবেন। বিশেষ করে ইউসুফ চাচা। আরেকজন ছিলেন খাজা মোঃ মাসুম বিল্লাহ, উনি সরোদ ও বাঁশী দুটোই বাজান। তাঁকে যখন বললাম, আপনি কি সরোদ এর কিছু বাজাতে চান ? উনি বল্লেন, নাহ! আমি আর সরোদ বাজাবো না। জানেন একটা সেকেন্ড জন্যেও বাবাকে ভুলতে পারছি না। বাবাকে ছাড়া এই সাত মাসে একটিবারও যন্ত্রটি ধরতে পারি নাই। আমরা বাজাবো দু’বোন আর আব্বু সামনে বসে থাকবে না! ভাবতেই পারি না।
আসলেই তো এটা ছিল অনেক সুন্দর একটি ছবি বলতে পারি! আপনারা দু’বোন দুপাশে আর আপনার বাবা মাঝখানে বসে বাজাচ্ছেন।
আমাদের শিখার সময়ও আমরা এভাবে বসতাম। বাবা সামনে বসে থাকতেন আর আমরা দু’বোন দুপাশে বসে বাজাতাম। যখন চিন্তা করলাম মিউজিক তো বাবারই ছিল, তাই আবার যন্ত্রটা ধরলাম তাঁর সম্মানে।
আপনাদের এই ফাউন্ডেশনে কি কি ব্যাবস্হা রাখতে চাচ্ছেন ? এখানে কি বাচ্চাদেরকে বা নতুনদেরকে শেখাবেন! নাহ, শুধু আপনার বাবার মিউজিকের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবেন।
আমাদের ফাউন্ডেশনে অনেকগুলো প্রজেক্ট থাকবে। মিউজিক হচ্ছে মেইন প্রজেক্ট। আব্বু’র যেটা স্বপ্ন ছিল, বাংলাদেশের সবার মধ্যে এই মিউজিক বেঁচে থাকবে। বিশেষ করে সরোদ সেতার, ক্লাসিকাল মিউজিক হারিয়ে যেতে দেয়া যাবে না। মানে তিনি চেয়েছিলেন যে ক্লাসিকাল মিউজিককে যেভাবেই হোক সবার মাঝে পৌছেঁ দেয়া বিশেষ করে তরুনদের মাঝে। ব্যান্ড সঙ্গীতের প্রতি যেহেতু তরুন সমাজের দুর্বলতা বেশি, সেহেতু আব্বু চাইছিলেন ক্লাসিকালকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে। বাংলাদেশ থেকে যেন ক্লাসিকাল হারিয়ে না যায়।
আমাকে এক সাক্ষাৎকারে উনি বলেছিলেন যে, যেহেতু সরোদ যন্ত্রটি অনেক এক্সপেন্সিভ এবং অনেকের এটা কেনার সামর্থ নাই সেহেতু কেউ আসে না। তাছাড়া অনেকেরই শেখার আগ্রহ আছে কিন্ত দূরদূরান্ত থেকে শিখতে আসার সামর্থ্য নেই, সেই কারণেও অনেকে আসছে না। আপনাদের ফাউন্ডেশন থেকে কি যাদের তেমন সামর্থ্য নেই কিন্ত ইচ্ছা আছে, তাদেরকে নিয়ে কি কিছু করার ইচ্ছে আছে ?
অবশ্যই! আমার বাবা অনেকের কাছ থেকেই টাকা-পয়সা না নিয়েই শেখাতেন। অনেকেই বলত, পরে দিয়ে দিবে কিন্ত আব্বু জানতেন তাদের সেই সামর্থ্য নেই! আব্বু সবসময় একটা কথা বলতেন, মিউজিক বিক্রি করার জিনিস না। তাই আমাদের চিন্তাভাবনাটাও সেরকমই থাকবে। টাকাটাই কখনোই মেইন প্রায়রোটি থাকবে না। আব্বু’র স্বপ্নটা বাঁচিয়ে রাখাই আমাদের মেইন প্রায়রোটি থাকবে। এবার ভার্চুয়াল প্রোগ্রাম দিয়ে শুরু করলাম। বিভিন্ন জায়গা থেকে সবাই অংশগ্রহন করেছেন। আশা করি আস্তে আস্তে সব করবো, ইনশা আল্লাহ!
ইনশা আল্লাহ! আপনাদের এবং আপনার বাবার স্বপ্ন সফল হোক এই কামনা করি।
সঙ্গীতাঙ্গন-এর পক্ষ থেকে এই কামনা করি, ওস্তাদ শাহাদাত হোসেন খান-এর পরিবারের সকলকে আল্লাহ্ এই শোক সইবার এবং সহ্য করার ক্ষমতা দিন এবং তাঁকে জান্নাতবাসী করুন, আমীন।