– অনামিকা সরকার সৃজন।
সবাই জন্মগ্রহণ করে, আবার মৃত্যুকেও করে বরণ। মূলত আমাদের দেহের জন্ম হয় মৃত্যুর স্বাদ প্রাপ্তির জন্যই। এই স্বাদ সবাইকেই পেতে হয়। কিন্তু এর মাঝেই কিছু সৃষ্টি হয় যা আজীবন রয়ে যায়, মানুষটি বেঁচে থাকে তার সৃষ্ট কর্মে, দেহে নয়। তবুও তাকে দেহ ধরেই আসতে হয় এই লোকে। কেউ কেউ এমন কিছু সৃষ্টি করেন যা দ্বারা তাঁরা বেঁচে থাকেন অন্তরে অন্তরে। চলে যাবার পরেও তিনি থাকেন মানুষের মনে ও মুখে। আসলে যা যাবার জন্য আসে, তা চলেই যায়। কিন্তু যা থাকার জন্য আসে তা থেকেই যায়। বাংলা সঙ্গীত জগতের এমনই এক প্রাণ যিনি জন্মেছিলেন ঠিকই কিন্তু বেঁচেও আছেন, বেঁচেও থাকবেন! গতবছর এইদিনে তাকে ঘিরেই নেমে এসেছিলো সঙ্গীতের অন্ধকার সময়, তবে তিনি যে আলো সঙ্গীতাঙ্গনে জ্বেলে গেছেন তা নেভার নয় কখনো। আজ (৬ জুলাই, ২০২১) সেই কিংবদন্তি প্লেব্যাক সম্রাট এন্ড্রু কিশোরের প্রথম মহাপ্রয়াণ দিবস!
পুরো নাম এন্ড্রু কিশোর কুমার বাড়ৈ। মঞ্চনাম এন্ড্রু কিশোর। জন্ম ৪ নভেম্বর ১৯৫৫। জন্মস্থান রাজশাহী, বাংলাদেশ। তিনি বাংলাদেশ ও অন্যান্য দেশের বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন, আর এজন্য তিনি ‘প্লেব্যাক সম্রাট’ নামে পরিচিত। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘হায়রে মানুষ রঙ্গীন ফানুস’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে’, ‘আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, ‘আমার বুকের মধ্যে খানে’, ‘আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’ প্রভৃতি।
লোকসঙ্গীত, পপ, চলচ্চিত্রের গান সহ প্রায় সঙ্গীতের সকল শাখায় রয়েছে তার একচ্ছত্র পদচারণা।
কিশোর ছয় বছর বয়স থেকে সঙ্গীতের তালিম নেওয়া শুরু করেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর তিনি রাজশাহী বেতারে নজরুল, রবীন্দ্র, লোকসঙ্গীত ও দেশাত্মবোধক গান শাখায় তালিকাভুক্ত হন। চলচ্চিত্রে তার প্রথম গান মেইল ট্রেন (১৯৭৭) চলচ্চিত্রের ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই’। ‘তিনি বড় ভাল লোক ছিল’ (১৯৮২) চলচ্চিত্রের ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’ গানের জন্য শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী বিভাগে তার প্রথম জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ। এরপর তিনি সারেন্ডার (১৯৮৭), ক্ষতিপূরণ (১৯৮৯), পদ্মা মেঘনা যমুনা (১৯৯১), কবুল (১৯৯৬), আজ গায়ে হলুদ (২০০০), সাজঘর (২০০৭) ও কি যাদু করিলা (২০০৮) চলচ্চিত্রের গানের জন্য আরও সাতবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এছাড়া তিনি পাঁচবার বাচসাস পুরস্কার ও দুইবার মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার ও সম্মাননা লাভ করেছেন।
২০২০ সালে আজকের এই দিনে তিনি ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে রাজশাহী শহরের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরন করেন। আজ তার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ছিলেন একজন কিংবদন্তী, অসংখ্য গানের স্রষ্টা। তিনি আজীবন বেঁচে থাকবেন তার গানে। তার গান শ্রোতার মনে যুগের পর যুগ একই সুরের মুর্ছনায় দোলা দিয়ে যাবে। আমরা সঙ্গীতাঙ্গন পরিবারের পক্ষ থেকে তার মৃত্যুবার্ষিকীতে গভীর শোক এবং বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।