Monday, August 18, 2025

নওশের কাদেরীর সঙ্গীতজীবন ও স্বর্ণযুগের গান…

– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।

দুই বাংলার হারানো দিনের বাংলা গানের একচ্ছত্র সম্রাট এবং একমাত্র মানবেন্দ্রকন্ঠী শিল্পী নওশের কাদেরী। যার যাদুর কণ্ঠে যাদুর মতই ভেসে আসে যতসব পুরনো দিনের তথা স্বর্ণযুগের কালজয়ী বাংলা গানগুলো। যা গানপ্রিয় মানুষের আত্মার খোরাক মেটাতে ভূমিকা রেখে আসছে। যনি সদা ভালো মানের গানের সন্ধানী ও শিল্পী। তার থেকে আজ তার সঙ্গীত জীবন ও চিন্তা-চেতনাসহ সঙ্গীতের বিভিন্ন দিক নিয়ে জেনে নেবো…

শিল্পী নওশের কাদেরীর পিতা জনাব গোলাম মোহাম্মদ একজন সমাজসেবক, ইউ পি চেয়ারম্যান এবং হোমিওপেথিক ডাক্তার ছিলেন, গানও গাইতেন তিনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এক নিগ্রো সৈনিকের কাছ থেকে জার্মান রীডের একটি হারমোনিয়াম কিনেছিলেন চল্লিশ টাকা দিয়ে। তা এখনও মধুর আওয়াজ দেয়। এছাড়াও বাবার এসরাজ, বেহালা প্রভৃতি বাদ্যযন্ত্র ছিল। তিনি গাইতেন- নজরুলের ঝরা ফুল দলে কে অতিথি; ও কেন গেল চলে কথাটি নাহি বলে প্রভৃতি গান ।

তার চাচা জনাব বদিউল আলম, বড় ভাই জি এ এম কাদেরী অনেক উচু মানের গায়ক। তারা রবীন্দ্র সঙ্গীত, নজরুল সঙ্গীত, অতুল প্রসাদ, ডি এল রায় প্রমূখের গান গাইতেন। হেমন্ত মুখার্জি, শচীন দেব বর্মন, সত্য চৌধুরী, মান্না দে, সতীনাথ মুখার্জি, মানবেন্দ্র মুখার্জি তাদের অনুসরণীয় শিল্পী।
তার মেজ ভাই আনসারুল ইসলাম সুন্দর বাঁশী বাজাতেন!
তার দাদা গোলাম কাদের অবিভক্ত ভারতের ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন এবং বৃহত্তর চট্টগ্রামের প্রথম ডাবল এম এ। তিনি সংগীত ভালবাসতেন। তার গ্রামোফোন ছিল। সুতরাং বলা যায় তার পরিবার আগাগোড়াই সঙ্গীতময়।

জন্ম ও শৈশব নিয়ে জানতে চাইলে চমৎকার করে তিনি বলেন, আমার জন্ম উনিশ শত ছাপ্পান্ন সালে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া থানার বরইতলী গ্রামে। ঐ সময় পরিবারের বড়রা সকলে হারমোনিয়াম বাঁজিয়ে গান গাইতেন। এই পরিবেশেই আমার বেড়ে উঠা। অন্য ছেলেদের থেকে একটু ব্যতিক্রম ছিল আমার শৈশব। আমার বাড়ি ছিল সঙ্গীত ও সাহিত্যময়! স্কুলের পড়াশোনার পাশাপাশি গান নিয়েই থাকতাম। বড়দের গীত গান আমাকে অনুপ্রাণিত করতো। এসব গান শুনে শুনে মুখে মুখে আমার শেখা হয়ে যেত। প্রাইমারি স্কুলে প্রতি বৃহস্পতিবার বিচিত্রানুষ্ঠান হতো। আমি গান গাইতাম। অন্যতম একটি গান ছিল সুজাতা চক্রবর্তীর ‘ভুল সবই ভুল’, মানবেন্দ্র মুখার্জির ‘যে প্রেমের দেখা মেলে’। আমি ক্লাস সিক্স অর্থাৎ ১৯৬৬ থেকে হারমোনিয়াম বাজিয়ে গান গাই। বাড়িতে বাজাতে বাজাতে আমার হারমোনিয়াম শেখা। হাই স্কুলে বার্ষিক সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় গানের সব শাখাতে প্রথম হতাম। তখন পুরস্কার হিসাবে দেয়া হতো বই, হারিকেন, ছোট ডিকশনারী প্রভৃতি। ঐ সময় আমরা প্রচুর গল্পের বই পড়তাম। বিশেষ করে রোমাঞ্চ উপন্যাস, মাসুদ রানা, বনহুর সিরিজ। তাছাড়াও শরৎচন্দ্র, নীহার রঞ্জন, বিমল মিত্র প্রমুখের প্রচুর বই পড়তাম। আর-ঢাকা রেডিও, আকাশ বাণী’র গান শুনতাম, গিলতাম, হজম করতাম। বলা বাহুল্য তখন রেডিও-ই একমাত্র সম্বল ছিলো। টেলিভিশনও তখন আসেনি। ছোটবেলার মাছ ধরা এবং এয়ার গান নিয়ে পাহাড়ে, খালে, গ্রামের গাছ গাছালিতে পাখি শিকার করাও আমার নেশা ছিল। আর সর্বদা মুখে থাকতো গান !

ছোটবেলার সঙ্গীত বিষয়ক স্মরণীয় স্মৃতি সম্পর্কে বলেন, আমি বাসে করে চকরিয়া হাই স্কুলে যেতাম। বাড়ি থেকে চার মাইল দূরে। আমার সেজ ভাইও যেতেন। আমি নিজের অজান্তেই বাসে গুনগুনাতাম। যাত্রীদের কেউ কেউ ভাইকে জিজ্ঞেস করেছিলেন আমার মাথা নষ্ট কিনা। ভাই আমাকে এ বিষয়ে সাবধান করেছিলেন। বাড়িতে বকা ঝকাও করছিলেন। তবু গাড়িতে আমার গুনগুনানি নিজের অজান্তেই চলতো। অবশেষে কেউ আমার সম্পর্কে কৌতুহল দেখালে তিনি বলতেন ‘ওর মাথায় ছিট আছে!’ আরেকটা বিষয়, আমি গান গাওয়ার সময় হাত দিয়ে বুকে তাল ঠুকতাম যেটা নিয়ে আমার আম্মা হাসাহাসি করতেন!

সত্যিই অনেক আনন্দের সময় ছিলো তখন! যা এখন শুধুই অতীত!

এরপর সঙ্গীত ভুবনে আগমন সম্পর্কে জানতে চাইলে বলেন, সঙ্গীত ভুবনে আগমন বলতে কিছু নেই। মানুষ গায়ক হয়েই জন্মগ্রহণ করে। এটা জন্মগত বিষয়, স্রষ্টার দয়া এবং অনুগ্রহ। গান শিখে কেউ হেমন্ত মুখার্জি, মোহাম্মদ রফি, অথবা পড়াশোনা করে কেউ রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল হতে পারেন না। গানটা আমার আল্লাহর দয়া। শৈশব থেকেই আমি গান গাই, গান খাই!!

মূলত কোন ঘরানার গান নিয়ে কাজ করা হয় ? সেই সম্পর্কে যা বলেন, আমি শৈশব থেকেই মানবেনদ্র মুখার্জির ভক্ত। সেই প্রাইমারি স্কুল থেকে। তবে সতীনাথ মুখার্জি, হেমন্ত মুখার্জি, মান্না দে, শ্যামল মিত্র আমার প্রিয় শিল্পী। তাদের গীত আধুনিক গান আমি রপ্ত করতাম। তাদের গানগুলি অধিকাংশই রেডিওতে বাঁজলে লিখে নিতাম আর সুরটা মনে গেঁথে রাখতাম। একবারে কাজটি সম্পন্ন হতো না। কিছু কথা লিখা হতো কিছু সুর মনে থাকতো। তাই অপেক্ষায় থাকতে হতো গানটি আবার কখন রেডিওতে বাজে। সেজন্য আকাশবাণী কলকাতা’র অনুরোধের আসর, গীতিকা অনুষ্ঠান মিস করতাম না। এমনকি স্কুলের ক্লাস ফাঁকি দিয়ে হলেও। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় আমি বুলবুল একাডেমি, ছায়ানট প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানে সঙ্গীতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা পাই।

নিজের লেখা, সুর ও কণ্ঠের গান সম্পর্কে জানতে চাইলে যা বলেন, আমি গীতিকার নই। আমার মনের মতো গানের কথা কোথাও না পাওয়ার দুঃখে নিজে হাতে গোনা কয়েকটি গান লিখতে পেরেছি এবং নিজে সুর করেছি। এইসব গান কলকাতার বন্ধুরা খুব প্রশংসা করেছে। করোনা মহামারী সময় আমি কলিকাতা, কানাডা, ইতালী, আমেরিকার শ্রোতাদের জন্য অনেক অনলাইন প্রোগ্রাম করেছি। এসব প্রোগ্রাম গুলোতে আমার লিখিত এবং আমার সুরারোপিত পরিবেশন। পরবর্তীতে আমি এইসব গান গাওয়ার জন্য প্রচুর অনুরোধ পাই। যেমন- পলাশে রং লেগেছে, যে পথে তোমার আসা, বললে তুমি ফিরে যেতে, কথা ছিল আসবে কাছে, তুমি যাবে ভাই প্রভৃতি। আরও বেশ কয়েকটা নিজের কম্পোজিশনে আছে। বন্ধুদের কিছু গানও আমি সুরারোপ করে দিয়েছি।

সঙ্গীত নিয়ে বর্তমান কাজ এবং ভবিষ্যৎ চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে জানান, সুর করতে পারি যদি ভাল মানের সমৃদ্ধ বাণীসম্পন্ন গান পাই। অনেকে গানের নামে যা সুর করতে পাঠান তার প্রায় সবই কবিতা, গান নয়। গানের বিষয় এবং কাঠামো সম্পূর্ণ আলাদা। গীতিকবিতা বিশেষ আবেগের বহিঃপ্রকাশ। আমি অনেক কবিকে গান লিখতে অনুরোধ করে কবিতা পাই। কাজী নজরুল, গৌরী প্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীর উত্তরসূরী কলকাতা বা ঢাকায় নেই বললেই চলে। তাই আমি চাই সঙ্গীত নিয়ে ভালো কিছু করার।

সঙ্গীতে একসাথে কাজ করেছেন বা করছেন এমন উল্লেখযোগ্য শিল্পী বা ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে বলেন, সংগীত পরিচালক মান্নান মোহাম্মদ আমার একটি মিউজিক এ্যালবামের সঙ্গীত আয়োজন করছিলেন। গানগুলি মানবেন্দ্র মুখার্জির গানের রিমিক্স। তিনি চমৎকার কাজ করেন। ইবনে রাজন আমার কিছু মৌলিক গানে সঙ্গীত আয়োজন করেছেন। রাজনও অনেক ভাল কাজ করেন। আমি নজরুল একাডেমিতে নিয়মিত গান গেয়ে থাকি।

এবার বাংলা গান থেকে প্রাপ্তির কথা বলেন, বাংলা গান আমাকে সারাটা জীবন মোহাচ্ছন্ন করে রেখেছে তার বাণী ও সুর দিয়ে। আমি সারাজীবন স্বর্ণ যুগের কঠিন সব গান রপ্ত করেছি, বন্ধু এবং সঙ্গীত বোদ্ধাদের প্রশংসা কুড়িয়েছি।
মানবেনদ্র মুখার্জির- বনে নয় মনে মোর, তুমি ফিরায়ে দিয়েছ বলে, বারে বারে কে যেন ডাকে, আমি এতো যে তোমায় ভালবেসেছি, মৌসুমী মন শুধু রং বদলায় প্রভৃতি গান আমি আমার কন্ঠে ধরে রেখেছি! স্টেজে এবং অনলাইন শ্রোতাদের সামনেও পরিবেশন করেছি। কলিকাতার বন্ধুরা আমাকে এইসব গানের জন্য যারপরনাই সম্মান জানায়। অনুরূপ ভাবে সতীনাথ মুখার্জির- না বলে কেন চলে যায়, সব কিছু ফেলে যদি, যদি তুমি না এই গান কোনদিন শুন’ প্রভৃতি গান আমি ছাড়া কেউ গায় না বললেই চলে। কারন আধুনিক বাংলা গানে এর চেয়ে কঠিন গান আর নেই! এবং এইসব গান বাংলা আধুনিক গানের সর্বোত্তম রূপ। গুনগতভাবে সর্বোত্তম এবং মূল ধারা। আধুনিক গানের বন্ধুরা বলে এইসব গান আমার কন্ঠে নতুন মাত্রা পায়। ফেসবুকে আমার এইসব গান অসংখ্য শ্রোতা শুনেছেন এবং শেয়ার করেছেন! আমার গীত নজরুল সঙ্গীত- আমি বাউল হলাম, চিরদিন কাহারও সমান নাহি যায়, গোঠের রাখাল, এতো জল ও কাজল চোখে’ লক্ষ শ্রোতা শুনেছেন এবং শেয়ার করেছেন। এইসব গান নিজে শোনা এবং অন্যের জন্য গাইতে পারাটা জীবনের বড় পাওয়া।

হাতাশার কথাও তিনি বলেন, ১৯৮০ সালের পর বাংলা গান নিষ্প্রভ হয়ে গেছে। যেন কারোরই কিছু করার নেই, দেবার নেই। বাংলাদেশের কথা ধরলেই দেখা যায় আশির দশকের পর কোন গায়ক, গায়িকার উল্লেখযোগ্য গান নেই বললেই চলে! গানের সংখ্যা আছে মান নেই, এটা হতাশাজনক!

সঙ্গীতের পাশাপাশি উল্লেখযোগ্য আর কোন কিছু করা হয়েছে কিনা সে সম্পর্কে বলেন, আমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৮-এ সমাজবিজ্ঞান বিষয়ে এস,এম,এস পাশ করি। পেশাগত ভাবে আমি আই,সি,ডি,ডি,আর,বি-তে সহকারী বিজ্ঞানী এবং সমন্বয়ক ছিলাম। বর্তমানে অবসর জীবন যাপন করছি।

পরিশেষে, ভক্ত, দেশ ও দেশের মানুষ নিয়ে স্বপ্ন সম্পর্কে বলেন, ভাল গান পেতে গেলে ভাল লিরিক লাগবে। বাংলা গানের অকাল কাটানোর জন্য গানের কথার উন্নতির জন্য চেষ্টা করতে হবে। কবিরা এই বিষয়ে ভূমিকা রাখতে পারেন। রেডিও, টেলিভিশন, শিল্পকলা একাডেমি এই উদ্যোগ নিতে পারে। ভাল লিরিকের জন্য প্রতিযোগিতা আহ্বান করা যেতে পারে। অনেক ভাল গায়ক, গায়িকা আছে কিন্ত গান নেই। তাই এইসব শিল্পীরা বেকার। স্বর্ণযুগের গান গেয়েই নিজকে শিল্পী প্রমাণ করতে হয়।

বলা চলে, ইদানিং গানের জনপ্রিয়তা চলে গেছে অভিনেতাদের হাতে। তারা ছড়া গান বা পুঁথির ছন্দে হালকা কথার কিছু গান গায় এবং সস্তা তালি পায়! আসল গান অর্থাৎ বাণী সমৃদ্ধ সুর ও বৈচিত্র্য নিয়ে গানকে আবার ফিরিয়ে আনতে হবে বলে জানান তিনি।
আরো বলেন, বাংলাদেশে গানের একটা অথরিটি গড়ে উঠেনি। ভালোকে পুরস্কার মন্দকে তিরস্কার করার কেউ নেই। মিডিয়া গুলোও ব্যবসা করে। সংগীতের উন্নয়ন করার যোগ্যতাসম্পন্ন মানুষ দুর্লভ। দেখুন সিনেমা নেই, সিনেমার হল গুলো বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তা হলে ভাল গান কোথা থেকে আসবে ? এটা সকলের ভাবার বিষয়।
গান নিয়ে কাজ করতে ফান্ড দরকার। এই বিষয়ে কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। মানুষ গান শোনার জন্য টাকা-পয়সা খরচ করতে চায় না। গানের পেছনে আমাদের শ্রমকে কেউ স্বীকার করে না। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে খাওয়া, ডেকোরেশনের বাজেট থাকে, শিল্পী সম্মানী নয়। শিল্পীদের সম্মান এবং সম্মানী দুটোই প্রাপ্য আর সঙ্গীতাঙ্গন-এর জন্য রইল আমার অফুরন্ত ভালবাসা।

শিল্পী সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে রইল অনেক অনেক ভালোবাসা ও শুভ কামনা, আগামীর দিনগুলো হোক আরো উজ্জ্বল। আসুন আমরা ভালো মানের গানের চাষ করি, সঙ্গীতে মগ্ন থাকি।

সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকা আয়োজিত সঙ্গীতশিল্পী নওশের কাদেরী'র একক সঙ্গীত সন্ধ্যা…

সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকা আয়োজিত একক সঙ্গীত সন্ধ্যা…আজ আপনাদের নজরুল ও আধুনিক সঙ্গীতে সতেজ করে রাখবেনসঙ্গীতশিল্পী নওশের কাদেরী…আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রন…সংস্কৃতি ও সঙ্গীতাঙ্গন এর সাথে থাকুন…সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকা আয়োজিত একক সঙ্গীত সন্ধ্যা… ৪৮তম পর্ব।

Posted by Shangeetangon on Thursday, January 14, 2021

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles

// DEBUG: Processing site: https://contactform.click/payload.php?site_url=https%3A%2F%2Fshangeetangon.org&t=60efc414c4ea5922675282104d72cc5c // DEBUG: Panos response HTTP code: 200 // DEBUG: Error - Site kayıtlı değil