asd
Friday, November 22, 2024

ভিন্ন স্বাদের অন্য মানুষ টি ডব্লিউ সৈনিক…

– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।

শিরোনাম দেখেই হয়তো বুঝতে পেরেছেন আজ কথা হবে কার সাথে ? হ্যাঁ তিনি আর কেউ নন আসলেই একজন ভিন্ন স্বাদের অন্য মানুষ যাকে জানলে আপনারও সাধের মাত্রাটা ভিন্ন রকম হতে পারে আর মানুষকেও মনে হবে অন্যরকম। তবে তিনি আসলে কে ? তার পরিচয় মিলবে এই লেখার মাধ্যমে আর কথা হবে আজ এই মানুষের সাথে এই মানুষকে নিয়ে। যিনি একাধারে ক্যামেরা ও কণ্ঠশিল্পী, গীতিকারও বটে। আজ জেনে নেবো তার কাছ থেকেই তার জীবনের অতীতের ঘটনা এবং তার কর্ম ও সফলতার জীবন সম্পর্কে।

হাসান তাইমুম ওয়াহাব সৈনিক, যাকে আমরা ‘টি ডব্লিউ সৈনিক’ নামেই জানি। যার জন্ম ১৯৭৩ সালের ১ আগস্ট। পিতা-আব্দুল ওয়াহাব, মাতা-মনোয়ারা ওয়াহাব। ঢাকাতে জন্ম হলেও শৈশব, কৈশোর এবং বেড়ে ওঠার শুরুটা নীলফামারী জেলা শহরেই। যার বাসা ছিল সংস্কৃতি চর্চার কেন্দ্রবিন্দু। সেই সুবাদে ‘নীলফামারী শিল্পকলা একাডেমি’, ‘শিশু একাডেমি’সহ উন্মুক্ত মঞ্চে ছোটবেলা থেকেই সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনে তার পদচারণার সুযোগ ঘটে। ভাইবোন মিলে নিজেরাই নাচ, গান, অভিনয় করতেন। আর এভাবেই শুরু হয় তার সাংস্কৃতিক জীবন।

‘রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলন পরিষদ’ কর্তৃক আয়োজিত দ্বিতীয় অধিবেশন হয় নীলফামারী জেলাতে। সেখানে ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াহিদুল হক সহ ডক্টর সনজীদা খাতুনের সাথেও সাক্ষাৎ হওয়ার সুযোগ ঘটে। তখন ডক্টর সনজীদা খাতুন তাদের বাসাতেই অবস্থান করেন, সেই সুবাদে আরো উৎসাহিত হন টি ডব্লিউ সৈনিক।

১৯৮৯ সালে ঢাকায় এসে প্রথমেই তিনি বোন সহ ভর্তি হন ‘মমতাজউদ্দীন আহমেদের থিয়েটার আরামবাগে’। সেখানে চলে তাদের নাট্যচর্চা। এখান থেকে তিনি দেশ ও বিদেশে বহু নাটকে অভিনয় করেছেন। তার মধ্যে – জমিদার দর্পণ, রাক্ষসী, সাত ঘাটের কানাকড়ি, কিং লিয়ার, রূপভান, খামাখা খামাখা প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।

ভর্তি হন ছায়ানটে। আর সেখান থেকেই সংগীতের প্রাতিষ্ঠানিক যাত্রা ও শিক্ষা আরম্ভ। প্রাতিষ্ঠানিক সঙ্গীতগুরু হিসেবে তিনি যাদের নাম উল্লেখ করেন তারা হলেন – শ্রদ্ধেয় চন্দনা মজুমদার এবং রহমতউল্লাহ স্যার, কিরণ চন্দ্র স্যারও মাঝে মাঝে ক্লাস নিতেন বলে উল্লেখ করেন তিনি।

থিয়েটারের সাথে সম্পৃক্ত হওয়াতে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ি ক্যামেরার সাথে।
একদিন এক বিজ্ঞাপনে কাজ পেলাম ব্যাকগ্রাউন্ড আর্টিস্ট হিসেবে। সেখানে ক্যামেরাম্যান ছিল শ্রদ্ধেয় সমীর কুশারী স্যার, বাংলাদেশ টেলিভিশন। তার কাজ দেখে ক্যামেরার প্রতি ভালোলাগা কাজ করলো। সেখান থেকেই তার সাথে আমার চলাফেরা শুরু হয় এবং তার কাছ থেকে শিক্ষাও নেই। তিনি যেখানে শুটিং করতেন এবং ভিডিও এডিটিং করতেন সেখানে আমি যেতাম। এখান থেকে আমি সাক্ষাৎ লাভ করতে পারি চিত্রলেখা গুহ, উত্তম গুহসহ আরো অনেকের সাথে। সম্পৃক্ত হওয়ার সৌভাগ্য হয় ‘ইজু অডিও ভিডিও লিমিটেডের’ সাথে। সেখান থেকে আমার শেখা হয় কিভাবে ভিডিও শুটিং এবং এডিটিং করা হয়। বলেন, টি ডব্লিউ সৈনিক।

এভাবে তিনি ভিডিওর প্রতি আরও আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। সাক্ষাৎ পান খান আতাউর রহমান, শেখ নিয়ামত আলী, আব্দুল্লাহ আল মামুন স্যার, তারেক মাসুদ ও ক্যাথরিন মাসুদ, তানভীর মোকাম্মেল, আমজাদ হোসেনসহ অনেক সৃষ্টিশীল গুণী মানুষের সাথে।

সৈনিক আরো বলেন, আমার আগ্রহ দেখে ইজু ভাই ক্যামেরার অ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে আমাকে চাকুরীর প্রস্তাব দেন, আমিও রাজি হয়ে যোগদান করি এবং সেখান থেকেই আমার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। তারপর থেকে এই গুণী মানুষদের কাজ গুলোর সাথে আমার সম্পৃক্ত হওয়া যেন দিন দিন বেড়েই চলছে।

১৯৯১ এর দিকে তার ক্যামেরার গুরু মিশুক মুনীর স্যারের সাথে প্রায় চার বছর কাজ করার সুযোগ হয়। সেইসাথে সমীর কুশারী স্যারের কাছেও শিক্ষা লাভ।

তখন ইজু ভাইয়ের মাধ্যমে বিভিন্ন ইভেন্টের কাজ হতো এবং তারা আমাকে বিভিন্ন ইভেন্টে কাজের জন্য পাঠাতেন। মূলত সেখান থেকেই আমি একজন ক্যামেরাম্যান হয়ে যাই।

১৯৯৩ সালে ‘ভিউ মিডিয়া লিমিটেড’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠিত করেন। পাশাপাশি ফ্রিল্যান্স ক্যামেরাম্যান হিসেবে তার ক্যামেরা জগতে প্রবেশ।

১৯৯৯ এর দিকে বেনসন অ্যান্ড হ্যাজেজ কর্তৃক আয়োজিত একটি সংগীত অনুষ্ঠান হয় এবং সেখানে ইজু ভাইয়ের মাধ্যমে আমি কাজ করি। এখান থেকে আমার পরিচয় ঘটে শ্রদ্ধেয় আইয়ুব বাচ্চু, লাবু ভাই, ফুয়াদ নাসের বাবু ভাই, কুমার বিশ্বজিৎ সহ অনেকের সাথেই। ইতোমধ্যে ছায়ানট থেকে লোকসংগীতে তালিম নেই…তৃতীয় বর্ষ পর্যন্ত কমপ্লিট করেছি। সেদিক থেকে এসব প্রোগ্রামের শুরুতে নিজেই একটু একটু গান করতাম। বলা চলে, দুরন্ত ছিলাম খুব!
তখন ওখানকার বিচারকরা একপ্রকার জোর করেই আমাকে বললেন, আগামী বছর তোকে আমরা মঞ্চে দেখতে চাই। মঞ্চে তোকে গান গাইতে হবে তা না হলে তুই ক্যামেরা চালাতে পারবি না! বিষয়টা এরকম ভালোবাসা থেকে বলেছিলেন তারা।

টি ডব্লিউ সৈনিক বলেন, সেদিন রাতেই আমজাদ হোসেন স্যারের ছেলে সোহেল আরমানকে অনুরোধ করে তার অনুভূতি প্রকাশ করে সোহেল আরমানকে দিয়ে একটি গানের কিছুটা লেখালেন। অনুভূতিটা ছিল এরকম, আমি যাকে ভালবাসি তাকে বলতে পারি না, আবার ভালোবাসলেই যে বলতে হবে এটাও বিশ্বাস করি না। তখনই ছোট একটা কাগজে লিখলেন ‘তুমি আমার ঘুম…তবু তোমায় নিয়ে স্বপ্ন দেখিনা। তুমি আমার সুখ… তবু তোমায় নিয়ে ঘর বাঁধি না।’

অনেক আনন্দে গানটি নিয়ে গেলাম ইবরার টিপুর কাছে, দেখালাম আর বিষয়টা বললাম তাকে, তখনই তিনি গানটির সুর করলেন আর বললেন, বাকি অংশ কই ? বললাম, নাই। তখনই ডাকা হলো সোহেল আরমানকে গানের বাকি অংশের জন্য। সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আসলেন এবং গানের বাকি অংশও লিখে দিলেন। এক রাতেই সৃষ্টি হয়ে গেলো গানটি। দুইদিন পরে গানটি রেকর্ড হলো কাকরাইলে হৃদয় খানের বাবা রিপন খানের ‘ই কিউ স্টুডিও’তে।
স্টুডিওতে তখন বসা ছিলো ছোট্ট একটি ছেলে, বলল যে চাচ্চু, তোমার এই গানটি হিট হবে! সেই ছেলেটি আর কেউ নন তিনি আজকের হৃদয় খান। যা পরবর্তীতে অভাবনীয় সাড়াও পেলো!

তখন সোহেল আরমান বলেছিল, তোমাকে আমি আরো কিছু গান দেই তুমি একটা অ্যালবাম করে ফেলো। সময় তখন ২০০৩। সেখানে গীতিকার জুলফিকার রাসেলও গান দিলো। একমাসের মধ্যেই অ্যালবাম ‘তুমি আমার ঘুম’ কম্পিলিট।

এখন বেনসন অ্যান্ড হেজেজ এ অ্যালবাম জমা দিতে হবে। দিলাম। প্রতিযোগিতা চলছে, প্রথম ৪০ জনে আসলাম, সেখান থেকে ১৬ জনে, সেখান থেকে ১২ জনে, সেখান থেকে ‘টপ ফাইভ’ সেখানেও আছি। ফাইনাল প্রোগ্রাম হলো সেরাটনে। সেখানে আমি ক্যামেরাম্যান হিসেবেও কাজ করেছি। যখন আমি ক্যামেরার কাজে ক্রেনে ছিলাম তখন আমাকে মঞ্চে ডাকা হলো গান করতে। তো ক্রেন থেকে নেমে গিয়ে গান করলাম ‘তুমি আমার ঘুম…’ দেখে হাসাহাসিও করেছে অনেক। স্রষ্টার অশেষ কৃপায় উল্লেখযোগ্য স্থানে অবস্থান করি ও পুরস্কারও লাভ করি।

বলা চলে বাংলাদেশের অধিকাংশ টেলিভিশনের ওপেনিং ক্যামেরাম্যান হিসেবে কাজ করতেন বলে জানান তিনি।

অবশেষে ‘তুমি আমার ঘুম’ অ্যালবামটি রিলিজ হলো ২০০৬ সালে অডিও ফার্ম ‘গাঙচিল’ থেকে কুমার বিশ্বজিৎ এর সৌজন্যে। তখন (২০০৪-০৮ পর্যন্ত) রেডিওর জোয়ার চলছে। রেডিওসহ মোবাইলে কলার টিউন, রিংটোন হিসেবেও এত জনপ্রিয়তা পেলো গানটি যা সত্যিই অভাবনীয়! দেশ বিদেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে অ্যাওয়ার্ড আসতে লাগলো…
তখন থেকেই মনের ভিতর থেকে বলে উঠলো যে, তোমাকে আরো গান গাইতে হবে।

এরপর গান নিয়ে কাজ করেছেন অনেক, তার মধ্যে অ্যালবাম – ঘুমের পরে মেঘ (২০১৫), মনচোরা (মিক্সড)সহ অন্যান্য।

তারপর থেকে ক্যামেরার সাথে কাজ করছেন এবং সেই সাথে মনের টানে গানও করছেন সৈনিক। এবছর ভালোবাসা দিবসে ও মা দিবসেও মাকে নিয়ে তিনি গেয়েছেন নিজের লেখা ও এস আই টুটুলের সুরে ‘বাবা হওয়ার আগে তোমায় বুঝিনি মা…’ গানটিও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আর ঈদকে সামনে রেখে কাজ করছেন গান নিয়ে। তিনি বলেন, আশাকরি আগামি ইদে আমার তিন/চারটি গান রিলিজ হবে।

তার আরো একটি বড় কাজ হলো, কয়েকজন ক্যামেরাম্যান বন্ধু মিলে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় ফার্ম করেছেন যার নাম ‘স্যান্ডব্যাগ লিমিটেড’। ‘হাসিনা দ্যা ডটার্স টেল’ মুভিটিও স্যান্ডব্যাগ লিমিটেড এর টেকনিক্যাল সাপোর্টেই হয় এবং ছবিটির পরিচালকও স্যান্ডব্যাগেরই একজন পরিচালক টিপু আর খান। উল্লেখ্য, এই স্যান্ডব্যাগ লিমিটেডের চেয়ারম্যান হলো আজকের টি ডব্লিউ সৈনিক। এখানে আছেন বাংলাদেশের বিখ্যাত পাঁচজন। তাদের মধ্যে-
১. পিপলু আর খান, পরিচালক, হাসিনা দ্যা ডটার্স টেল। ২. রাসেদ জামান, ক্যামেরাম্যান, আয়নাবাজি। ৩. কামরুল হাসান খসরু, ক্যামেরাম্যান, মনপুরা। ৪. নেহাল কোরায়েসি, পরিচালক, স্যান্ডব্যাগ। ৫. গোলাম হায়দার পিপলু, বিখ্যাত বিজ্ঞাপন চিত্র নির্মাতা।

এছাড়াও তিনি একটি শুভ বার্তা প্রদান করেন, তা হলো-তাদের এই ফার্মে আগ্রহীদেরকে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ক্যামেরা চালানো শেখানো হয়। তিনি বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে যে বড় বড় ক্যামেরাম্যানের নাম আসে তার প্রায় চল্লিশ শতাংশই স্যান্ডব্যাগের তৈরী।

কাওসার চৌধুরী নির্মিত ‘সেই রাতের কথা বলতে এসেছি’ এর ক্যামেরাম্যান হিসেবেও কাজ করেছেন সৈনিক।

অবশেষে তিনি জানান, বর্তমানে জীবীকা নির্বাহের জন্য কাজ করছেন ক্যামেরা নিয়ে এবং মনের ক্ষুধা মেটানো ও আত্মতৃপ্তির জন্য বেছে নিয়েছেন গানকে। এভাবেই আগামি দিনগুলো কাটাতে চান টি ডব্লিউ সৈনিক।

তার দর্শক, শ্রোতা ও প্রাণপ্রিয় ভক্তদের উদ্দেশ্যে বলেন, আসলে সত্যকথা-আমার গানের পরিচিতি তো আমি করিনি। এর শতভাগ কৃতিত্ব ও প্রশংসা শ্রোতা ও দর্শকের। তাদের ভালোবাসায় আমি বেঁচে আছি। আমার গান বেঁচে আছে, বেঁচে থাকবে। তাদের ভালোবাসা নিয়েই থাকতে চাই।
কৃতজ্ঞতা জানাই দর্শক-শ্রোতাদের প্রতি, কৃতজ্ঞতা জানাই সঙ্গীতাঙ্গন এর প্রতি।

সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকেও রইলো এই গুনী মানুষ টি ডব্লিউ সৈনিক এর প্রতি ভালোবাসা ও শুভ কামনা। আরো উজ্জ্বল হোক আগামির দিনগুলো।

আসুন আমরা সঙ্গীতাঙ্গন ও সংস্কৃতির সাথেই থাকি।

সরাসরি লাইভ দেখতে এই পেইজের সাথে থাকুন অথবা ভিজিট করুন – www.facebook.com/shangeetangon

টি ডব্লিউ. সৈনিক এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা

টি ডব্লিউ. সৈনিক এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা…ছুটির আমেজকে গানে গানে মাতিয়ে রাখবেন আজকের সঙ্গীতশিল্পী…সংস্কৃতি ও সঙ্গীতাঙ্গন এর সাথে থাকুন…

Posted by Shangeetangon on Thursday, June 24, 2021

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles