– রহমান ফাহমিদা, সহকারী-সম্পাদক।
রবীন্দ্রজয়ন্তী বা পঁচিশে বৈশাখ বাঙালি জাতির একটি অন্যতম সাংস্কৃতিক উৎসব। বাংলা পঞ্জিকা অনুসারে, প্রতি বছর বৈশাখ মাসের ২৫ তারিখে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এই উৎসব পালিত হয়। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্যান্য রাজ্য এবং বাংলাদেশে ও বাঙালি অধ্যুষিত অঞ্চলে বিপুল উদ্দীপনার সঙ্গে এই উৎসব পালন করা হয়। বহির্বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের বসবাসকারী বাঙালিরাও এই উৎসব পালন করেন। পশ্চিমবঙ্গে এই দিনটি রাষ্ট্রীয় ছুটির দিন হিসেবে পালিত হয়।
এবার ৮ই মে বাংলায় ২৫শে বৈশাখ। এই দিনটি বাঙালি তথা সকল বিশ্ববাসীর কাছে স্মরণীয় একটি দিন। কারণ এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তিনি কেবল কবি ছিলেন নাহ! তিনি ছিলেন একাধারে কবি, ঔপন্যাসিক, সংগীতস্রষ্টা, নাট্যকার, চিত্রকর, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, অভিনেতা, কণ্ঠশিল্পী ও দার্শনিক। তাঁকে বাংলা ভাষার সর্বশ্রেষ্ঠ সাহিত্যিক মনে করা হয়। এমনকি রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি উপাধিতে ভূষিত করা হয়। রবীন্দ্রনাথ বাঙালির চিন্তা-চেতনা ও মননের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে মিশে আছেন। বাঙালির সুখ-দুঃখ, আবেগ-ভালবাসা,আশা-আকাঙ্ক্ষা সহ এমন কোনো অনিভূতি নেই যা রবীন্দ্রনাথ স্পর্শ করেননি। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বাংলা সাহিত্যের একজন দিকপাল এবং উজ্জ্বল নক্ষত্র বলা যায়। রবীন্দ্রনাথ রচিত ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ আমাদের জাতীয় সঙ্গীত। এই গান জাতীয় ঐক্য ও সম্প্রীতির স্মারক হিসেবে বিবেচিত।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ছিলেন বিরল প্রতিভার অধিকারী। তাঁর প্রজ্ঞা, দর্শন, সৃষ্টিশীলতা, উদার মনোভাব ও মানবতাবোধ বিশ্ববাসীর কাছে সুপরিচিত। তাঁর কাব্যপ্রতিভার স্বীকৃতিস্বরূপ ১৯১৩ সালে তিনি প্রথম বাঙালী হিসেবে ভারত উপমহাদেশে প্রথম নোবেল সাহিত্য পুরস্কার লাভ করেন। তিনি বাংলা ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতিকে বিশ্ববাসীর কাছে এক উচ্চতর শিখরে পৌঁছে দিয়েছেন। রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎসব উদযাপনের অঙ্গ হ’ল- রবীন্দ্রসংগীতানুষ্ঠান, নৃত্যানুষ্ঠান, রবীন্দ্রনাট্যাভিনয়, রবীন্দ্ররচনা পাঠ, আলোচনা সভার আয়োজন ও নানাবিধ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এপার বাংলা এবং ওপার বাংলায় এইদিন নানাবিধ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। রবীন্দ্রনাথের জীবদ্দশায়ও রবীন্দ্রজয়ন্তী উৎযাপন করা হত। ঘটা করে, সাড়ম্বরে। এ দিবসটি পালনের মধ্য দিয়ে বাঙালি জাতি বাঙালির ভাষা ও সাহিত্য, শিক্ষা ও সংস্কৃতি, মন-মানসিকতা বিকাশে রবীন্দ্রনাথের মহীরুহপ্রতীম অবদানের প্রতি ঋণ স্বীকার করে। প্রতি বছর ২৫শে
বৈশাখ কবিগুরুর জন্মদিনে ভোর না হতেই শঙ্খ বেজে ওঠে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়িতে, বিশ্বভারতীয় উপাসনা প্রাঙ্গণে তখন ধ্বনিল রে-এর সুর। সেজে ওঠে কবিগুরুর বাড়ি, দিনভর অনুষ্ঠানসূচী ফেরে মানুষের হাতে হাতে। রবীন্দ্র সনদ থেকে শুরু করে পাড়ার ওলি-গলিতে মহাসমারোহে পালিত হয় রবীন্দ্রজয়ন্তী। রবীন্দ্র সঙ্গীত থেকে শুরু করে কবিগুরুর কবিতা, নৃত্যানাট্যে ভরে ওঠে বাংলার আকাশ-বাতাস।
তবে ২০২০-এ সেই চেনা ছবি আর ধরা দেয় নাই! সেদিন ছিল দীর্ঘ ১৫৯ বছরের রবীন্দ্রজয়ন্তীতে এক অন্য সকাল। ছিল না কোনো আড়ম্বর! ছিল না শয়ে শয়ে ভক্তদের ভীড়। গত বছর লকডাউনে এভাবে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন হয়। এভাবেই হয় বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মদিনে নূন্যতম অনুষ্ঠানের আয়োজন। বন্ধ রাস্তা পথঘাট। ছিলনা কোনো জনসংযোগের অনুমতি। যে রবীন্দ্রজয়ন্তী ভক্তদের দূর দূরান্ত থেকে এক ছাদের তলায় নিয়ে আসত এবং যে ২৫ বৈশাখ জোড়াসাঁকো ঠাকুর বাড়িতে উপচে পড়া ভিড়ের সাক্ষী থাকত, ২০২০-এ তা ছিল ম্লান। যে কবি চার দেয়ালের গণ্ডি থেকে বেরিয়ে মুক্ত বাতাসে শ্বাস নেওয়ার কথা বলে গিয়েছেন, সেই কবিগুরুর স্মরণ এবারও কোয়ারেন্টাইনে। জল পড়ে, পাতা নড়ে থেকে শুরু। পনেরো বছর বয়সে বনফুল রচনা করে ফেলেছিলেন তিনি। দেশের সর্বত্র নাম ছড়িয়ে পড়ে এই পনের বছরের ভানুসিংহ ঠাকুরের। একের পর এক কালজয়ী রচনা সৃষ্টি হতে থাকে তাঁর কলমের আঁচড়ে। বিশ্বব্যাপী সমাদৃত বিশ্বকবির জন্মদিন পালন করা হয়ে থাকে মহাসমারোহে। ১৫৯তম বছরের জন্মদিনে চেনা ছবিটা যেভাবে বদলে গিয়েছিল হয়তো এবার ১৬০তম জন্মবার্ষিকীও ঐ বছরের মত
লকডাউনের মধ্যে আটকিয়ে যাবে! তবে মানুষের কবিগুরুর প্রতি আবেগ-ভালোবাসা থাকবে একই। সোশ্যাল মিডিয়ার পাতায় উপচে পড়বে রবীন্দ্রজয়ন্তীর শুভেচ্ছাবার্তা, অনলাইনে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়েই রবীস্মরণে সামিল হবে আপামর বাঙালি ও রবীন্দ্রসংগীতের শিল্পীকুশলী। ‘সঙ্গীতাঙ্গন’ও ১৬০তম রবীন্দ্রজয়ন্তীকে মাথায় রেখে, কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে অনলাইনে আয়োজন করেছে বিশেষ সঙ্গীতায়োজনের। পত্রিকার ওয়েবসাইট এবং সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকার ফেসবুক পেইজে সরাসরি লাইভ দেখা যাবে।
সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের প্রতি রইল অসীম শ্রদ্ধা।