– রহমান ফাহমিদা, সহকারী-সম্পাদক।
সঙ্গীত বিষয়ক পত্রিকা সঙ্গীতাঙ্গন -এর কাজই হল সঙ্গীত জগতের বিভিন্ন ক্ষেত্রের মানুষের সুখ-দুঃখ এবং তাঁদের কাজের মূল্যায়ন করা। কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা সঙ্গীতাঙ্গন -এর কাজ নয়! প্রবীণদের কাজগুলি শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করা এবং নবীনদেরকে তাঁদের কাজ নিয়ে উৎসাহিত করাই সঙ্গীতাঙ্গন -এর উদ্দেশ্য। তাইতো সঙ্গীতাঙ্গন শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করে সঙ্গীত জগতের সেই সকল শ্রদ্ধেয় মানুষদের যারা পৃথিবীর মায়া ছেড়ে চলে গেছেন না ফেরার দেশে। অথচ রেখে গেছেন তাঁদের সুনিপুণ কর্ম। সঙ্গীতজগতের বিশিষ্টজনদের জন্মদিনে আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাতেও সঙ্গীতাঙ্গন কার্পণ্য করে না। তেমনই কারো শোকদিবসে শোকপ্রকাশেও পিছপা হয়না সঙ্গীতাঙ্গন।
সর্বদা সঙ্গীত জগতের মানুষদের খোঁজখবর রাখাও সঙ্গীতাঙ্গন -এর একটি লক্ষ্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে সঙ্গীতজগত-এর ৫০বছর পূর্তি (তথা মহান স্বাধীনতার ৫০ বছর) উপলক্ষে সঙ্গীতাঙ্গন সঙ্গীত জগতের সকল ক্ষেত্রের মানুষদের নিয়ে আয়োজন করেছেন কয়েকটি বিশেষ পর্ব। যেখানে থাকবে বিভিন্ন ক্ষেত্রের সঙ্গীত জগতের মানুষদের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির কথা!
সঙ্গীত জগতের অনেকের সাথে কথা বলে অনেক কথা জেনেছি। যেমন-কেউ অনেক জনপ্রিয় কাজ করেও সঙ্গীত জগত থেকে পায়নি তেমন কিছুই। তেমনই আবার কারো প্রাপ্তিটা পেতে দেরি হয়েছে ঠিকই কিন্তু প্রাপ্তির মূল্যায়ন পাননি তেমন। কারো মনে যেমন প্রাপ্তির তৃপ্তি আছে তবে কিছুটা আক্ষেপও আছে মনমত কাজ করতে না পারার ইত্যাদি নানান বিষয় ফুটে উঠেছে তাঁদের কথায়। সঙ্গীত জগতের যে সকল প্রবীণ-নবীন গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীতপরিচালক, যন্ত্রশিল্পী, কণ্ঠশিল্পী এবং ব্যান্ড শিল্পীগণ সঙ্গীতাঙ্গন-এর এই আয়োজনে থেকে সহযোগিতা করছেন সকলের জন্য রইল আন্তরিক শুভকামনা ও একরাশ লাল গোলাপের শুভেচ্ছা।
বিঃদ্রঃ – ধারাবাহিকভাবে চলবে এই বিশেষ আয়োজন এবং এখানে যাদের সাথে আগে পরে কথা হয়েছে সেভাবেই পর্যায়ক্রমে থাকবে সাক্ষাৎকারগুলো।
সঙ্গীতাঙ্গন -এর এই বিশেষ আয়োজনে আজকের পর্বে আছেন সঙ্গীত জগতের তিনজন বিশিষ্ট ব্যক্তি। তাঁদের সাথে কথা হয়েছে সঙ্গীত জগতের এই ৫০বছর পূর্তিতে তাঁদের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি কি, তা নিয়ে। তাঁদের কথাতেই জেনে নেই, তাঁদের প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির কথা!-
কাজী হাবলু – কাজী হাবলু একজন পারকাশনিষ্ট হিসেবে বাংলাদেশে তুমুল জনপ্রিয়। বাংলাদেশের ব্যান্ড সঙ্গীতের শুরুর দিকে যাত্রাপথে তিনিও একজন অগ্রদূত। সত্তর দশকের আগের থেকেই তিনি সঙ্গীতের সাথে যুক্ত রয়েছেন এবং একাগ্রচিত্তে কাজ করে যাচ্ছেন। সঙ্গীত নিয়ে বিশেষ করে ব্যান্ড সঙ্গীত নিয়ে তিনি অনেক গবেষণা করেন। কুমিল্লার বিখ্যাত ‘কাজী বাড়ির’ কাজী মোসলেহ উদ্দিন এবং জমিলা খাতুনের কনিষ্ঠ সন্তান কাজী হাবলু। যার আসল নাম কাজী আফতাব উদ্দিন। জন্ম আসামে হলেও বেড়ে উঠেছেন এই বাংলাদেশেই। ছোটবেলায় তবলায় শাস্ত্রীয় সঙ্গীত দিয়েই তাঁর হাতেখড়ি হয়। এরপর ১৯৬৯সালে খুলনার বেতার কেন্দ্রে ক্যাজুয়াল যন্ত্রশিল্পী হিসেবে যোগ দেন তিনি। পপ সম্রাট আজম খানের সাথে তাঁর ছিল নিবিড় সম্পর্ক। সেই কারণে ১৯৭৩ সালে প্রয়াত পপ সম্রাট আজম খানের ‘উচ্চারণ’ ব্যান্ডের সাথে পারকাশনিষ্ট হিসেবে যুক্ত হয়েছিলেন এবং একই সময়ে নাসির আহমেদ অপু, ফিরোজ সাঁই এবং ফেরদৌস ওয়াহিদের সাথে ‘স্পন্দন’ ব্যান্ডেও নিয়মিত বাজানো শুরু করেন। পরবর্তী সময়ে প্রায় ২৪ বছর ধরে বাংলাদেশের কিংবদন্তি গায়িকা রুনা লায়লার সঙ্গে নিয়মিত দেশে-বিদেশে পারকাশনিষ্ট হিসেবে বাজিয়েছেন। বর্তমানে তিনি ‘রেনেসাঁ’ ব্যান্ডের সাথে যুক্ত আছেন। সুরকার হিসেবেও তাঁর অবদান অসামান্য। অনেক জনপ্রিয় গান তিনি সুর করেছেন যেমন-শুভ্র দেবের ‘যে বাঁশি ভেঙ্গে গেছে’, ফেরদৌস ওয়াহিদের ‘চলে গেছো তুমি’, ‘ট্রেন ও ট্রেন’, সামিনা চৌধুরীর ‘বসে বসে তুমি এত ভাবছো কী’, ‘যাবে যদি চলে যাও’ সহ আরও অনেক জনপ্রিয় গানে সুর দিয়েছেন কাজী হাবলু। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমিতে সঙ্গীত বিভাগের পরিচালক হিসেবে নিযুক্ত আছেন।
শ্রদ্ধেয় কাজী হাবলুর সাথে সঙ্গীত জগতের অনেক বিষয় নিয়েই কথা হয়েছে। তবে আজকে শুধু তার কাছ থেকে সঙ্গীত জগতে তাঁর প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়ে যেটুকু কথা হয়েছে তা তুলে ধরছি তাঁর কথাতেই –
কাজী হাবলু – আমি মনে করি, অপ্রাপ্তি বলতে কিছু নেই! প্রথমতঃ গৌরবের ব্যাপার এই যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্ণ হল এবং বঙ্গবন্ধুর ১০০তম জন্মবার্ষিকী পালিত হল আর আমি সেই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে পেরেছি, পারফরমেন্স করতে পেরেছি, এর চেয়ে বড় ব্যাপার আর কি হতে পারে ? এটা তো আমার জীবনে বড় সৌভাগ্য। অপ্রাপ্তির কথা যদি বলেন, অপ্রাপ্তির কিছু নেই। অপ্রাপ্তি বলতে কোনো শব্দ নেই। একজন মানুষ যারা দেশ প্রেমিক, তারা সবসময় দেশের জন্য কাজ করে যায়। কি পাবো না পাবো! এত কিছু চিন্তা থাকে না মাথায়। আমার চাহিদা নেই। আমি দেশকে ভালোবাসি তাই কাজ করে যাই। কেউ যদি আমার কাজে খুশি হয় এবং প্রশংসা করে, ওটা আমার জন্য অনেক মূল্যবান কেননা এটা টাকা পয়সা দিয়ে পাওয়া যায় না। আর আক্ষেপের কথা বলছেন ? না, আমার কোনো আক্ষেপ নেই এবং আক্ষেপ বলতে কোনো শব্দ নেই আমার কাছে। আমি সবসময় সঙ্গীত নিয়েই তো কাজ করি! এটার মধ্যে কোনো গিভ এন্ড টেক বলে কোনো বাক্য নেই। কেউ যদি ভাল কাজ করে আর ওটাকে যদি সবার সামনে তুলে ধরতে পারি, ওটাই হল সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি আমার। তাছাড়া সঙ্গীত জগতে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হল, ১৯৭২ সালে আমি বঙ্গবন্ধুর সামনে ‘স্পন্দন’ ব্যান্ডের সদস্য হয়ে পারফরমেন্স করতে পেরেছিলাম, তখন বঙ্গবন্ধু ছিলেন প্রধানমন্ত্রী এবং ‘স্পন্দন’ ব্যান্ডের একজন প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ছিলেন তাঁরই ছেলে শেখ কামাল। আর আজ ২০২১-এ এসে সেই ‘স্পন্দন’ ব্যান্ডের জুনিয়র সদস্যদের নিয়ে পারফরমেন্স করলাম বর্তমানের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনার সামনে। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি আর কি হতে পারে! তাই আর কোনো প্রাপ্তি অপ্রাপ্তির কথা ভাবছি না।
শওকত আলী ইমন – শওকত আলী ইমন একজন জনপ্রিয় সুরকার, সঙ্গীত পরিচালক, গীতিকার ও সঙ্গীত শিল্পী। দুই দশকে প্রায় পাঁচ’শ এর বেশি চলচ্চিত্রের গানের সুর দিয়েছেন এবং সঙ্গীত পরিচালনা করেছেন বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে। তিনি ২০১৩ সালে ‘পূর্ণদৈর্ঘ্য প্রেম কাহিনী’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনার জন্য জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেছেন। তাছাড়াও তাঁর ভাগ্যে জুটেছে অনেক অনেক পুরস্কার। শওকত আলী ইমনের জন্ম বাংলাদেশের ঢাকা জেলায়। তাঁর পৈতৃক নিবাস মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইরে। তাঁর মা মুসলিমা বেগম একজন সঙ্গীত শিল্পী ছিলেন। তাঁর পরিবারের সবাই সঙ্গীতের সাথে যুক্ত। তাঁর দুই বোন আবিদা সুলতানা ও রেবেকা সুলতানা দেশের নামকরা সঙ্গীত শিল্পী। তাঁর সঙ্গীত জীবন শুরু হয় ১৯৯৬ সালে ‘রুটি’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা দিয়ে। ২০০২ সালে চলচ্চিত্রের অশ্লীলতা দেখা দিলে তিনি সঙ্গীত পরিচালনা বন্ধ করে দেন। এরপর ২০০৭ সালে ‘এক টাকার বউ’ চলচ্চিত্র দিয়ে নতুন যাত্রা শুরু করেন। শওকত আলী ইমনের সুরে কণ্ঠ দিয়ে সঙ্গীত জীবন শুরু করেছেন জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পী আসিফ আকবর, দিনাত জাহান মুন্নি, তাসিফ সহ আরও অনেকে। তিনি কলকাতার ‘অন্যায় অবিচার’, ‘বিচারক’ সহ ১২টি চলচ্চিত্রের গান পরিচালনা করেন। সেখানে তাঁর গানে কণ্ঠ দিয়েছেন কুমার শানু, অলকা ইয়াগনি, সাধনা সরগম, বাবুল সুপ্রিয়, সনু নিগম, শানদের মত জনপ্রিয় সঙ্গীতশিল্পীরা। এছাড়াও তিনি বলিউডে মহেশ ভাট পরিচালিত ‘সার্চ-২’ চলচ্চিত্রের সঙ্গীত পরিচালনা করেন।
জনপ্রিয় সুরকার ও সঙ্গীত পরিচালক শওকত আলী ইমনের সাথে কথা বলে সঙ্গীত জগতের ও শিল্পীদের বিষয় নিয়ে অনেক কথা জানতে পেরেছি। অতিশীঘ্রই তাঁকে নিয়ে লিখব তখন হয়তো সেই প্রসঙ্গগুলো লেখায় তুলে আনবো। এবার শুধু তাঁর কাছ থেকে সঙ্গীত জগতে তাঁর প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির কথা নিয়েই লিখছি। সঙ্গীত জগতে তাঁর প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তি নিয়ে তিনি বলেন –
শওকত আলী ইমন – আমি এত সৌভাগ্যবান যে, আমি একটি সঙ্গীত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছি। আমি বলবো, বাংলাদেশের একটি বড় সঙ্গীত পরিবার, আমাদের পরিবার। এই পরিবারে সবাই আছেন সঙ্গীত জগতে। এটা আমি খুব গর্ব করে বলতে পারি। আমি বলবো, বাবা মায়েরা হয়তো চান না, ছেলেমেয়েরা পড়াশুনা শেষ করে সঙ্গীত জগতে আসুক কারণ তাঁরা ভাবেন গান-বাজনা করে জীবন চলে নাকি! সেক্ষেত্রে আমি ভাগ্যবান যে, আমি পড়ালেখা শেষ করেই এই জগতে আসতে পেরেছি, যেহেতু আমি ফ্যামিলি থেকে বিলং করি। ঐ সাপোর্ট আমি প্রচুর পেয়েছি যা সচারচর কেউ পায় না। আর প্রাপ্তি অপ্রাপ্তি বলতে, বাংলাদেশের জন্য আমি খুবই সেটিসফাইড। আমি এদেশের জন্য কাজ করেছি এবং জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছি। আমি আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছি। আমার এই পুরস্কারগুলো অবশ্যই আমার কাজের প্রতি দায়িত্ব বাড়িয়ে দিয়েছে, আরও সুন্দর সুন্দর কাজ করার জন্য এবং আমি তাইই করে যাচ্ছি। সত্য কথা বলতে কি! সঙ্গীত জগতে আমার অপ্রাপ্তি কিছুই নেই। তবে বলবো যে, গত দু’বছর যাবৎ সঙ্গীত জগতের আমরা, একটি অস্থির সময় কাটাচ্ছি। সাংস্কৃতিক চাহিদা মানুষের একটি এক্সট্রা চাহিদা! মানুষের জীবনে প্রথম হল, অন্ন-বস্ত্র এবং বাসস্থান। তারপর মানুষ অন্য চাহিদার দিকে যাবে-গান শুনবে, নাটক-সিনেমা দেখবে। মানুষের জীবনে এখন যে ক্রাইসিস চলছে তাতে তো মানুষের অন্ন-বস্ত্র, বাসস্থান জোগাড় করাই টাফ্! যার কারণে এই করোনাকালীন সময়ে আমাদের কালচারাল ইন্ডাস্ট্রিতে প্রথমেই এফেক্ট করেছে। একদম রেকর্ডিং বন্ধ, কাজ বন্ধ। আমাদের গানবাজনা বন্ধ! যার কারণে আমরা শিল্পীরা সবচেয়ে বেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছি। করোনা ভাইরাস আসার আগ প্রযন্ত খুবই ভাল যাচ্ছিল, কালচারাল ইন্ডাস্ট্রির সকল ক্ষেত্রে। তবে একটা জিনিস মন খারাপের বিষয় সবসময়ই ছিল তা হচ্ছে, প্রথমে আমরা যখন চলচ্চিত্রে কাজ শুরু করেছি তখন সিনেমা হলের সংখ্যা ছিল ৮০০/৯০০। আমি তো বেসিক্যালি সিনেমাতেই কাজ করেছি শুরু থেকে। আমি প্রায় ৫০০’র ওপরে চলচ্চিত্রের গান করেছি বাংলাদেশ-ভারত মিলিয়ে। আর এখন বাংলাদেশে সিনেমা হল কমতে কমতে এমন অবস্থা হয়েছে যে, ১০০টা হলও প্রোপারলি পাওয়া যায় না। এবার যে ধ্বংস নেমেছে, এটা কিভাবে উৎরিয়ে যাব! এই আতঙ্কে সবসময় থাকি আমরা।
আর টিভির গানের প্রতিযোগিতার যে অনুষ্ঠান ‘বাংলার গায়েন’ -এর কথা বলছেন! আরটিভিতে যে কাজ করেছি এটা তো অবশ্যই ভালো একটা ফিলিংস! আরটিভি একটা দারুন উদ্যোগ নিয়েছিল এই করোনাকালীন সময়। যখন করোনার জন্য সব শিল্পী ঘরে বসা তখন আরটিভির এই ‘বাংলার গায়েন’ অনুষ্ঠানে বিচারক হয়ে আমরা ঘরে বসেই অনলাইনে কাজ করেছি, গান চেয়েছি। এটা কিন্তু একটা দারুন ব্যাপার ছিল! এখন সারা পৃথিবীতেই কিন্তু অনলাইনে কম্পিটিশন -এর আয়োজন করছে তবে সর্ব প্রথম আরটিভি এই অনলাইন প্রতিযোগিতা শেষ করেছে। অনলাইনে গান চেয়ে আমরা জাজমেন্ট করেছি, এটা একটা নতুন এক্সপেরিয়েন্স। গানগুলি খুব এনজয় করেছি। তখন করোনার জন্য আমাদের হাতে অফুরন্ত সময় ছিল, এই প্রতিযোগিতার গানগুলো নিয়ে আমাদের সময় কেটে গেছে। বর্তমানে নতুন একটা চলচ্চিত্রের কাজ করছি। সিনেমার নাম ‘পায়ের ছাপ’ পরিচালক নান্নু। এই সিনেমায় দুটো গান করছি। গান দুটি করবেন একজন কলকাতার শিল্পী ও একজন বাংলাদেশের শিল্পী। তাই আমি বলবো, সঙ্গীত জগতে আমার অপ্রাপ্তির চেয়ে প্রাপ্তি অনেক বেশী।
শফিক তুহিন – শফিক তুহিন বাংলাদেরশের একজন জনপ্রিয় গীতিকার, সুরকার ও সঙ্গীত শিল্পী। সেরা গীতিকার হিসেবে তিনি ২০১১ সালে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ২০১৫ সালে তার কথা ও সঙ্গীত পরিচালনায় দেশা-দি লিডার চলচ্চিত্রে বাংলাদেশের রক লেজেন্ড জেমস প্রথমবারের মতো জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। এছাড়া শ্রেষ্ঠ গীতিকার ও সুরকার হিসেবে চারবার সিটিসেল-চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস (২০০৬, ২০১১, ২০১৩, ২০১৬) অর্জন করেন। তাছাড়া তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র সাংবাদিক সমিতি (বাচসাস) পুরস্কার (২০০২), বাংলাদেশ কালচারাল রিপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার (২০০৩), বাংলাদেশ টেলিভিশন রিপোর্টস ইউনিট (সিজেএফবি) পুরস্কার (২০০৪), টেলিভিশন রিপোর্টারস অ্যাসোসিয়েশন পুরস্কার (২০০৭), বিনোদন বিচিত্রা পারফরমেন্স পুরস্কার (২০১১) অর্জন করেন। তিনি সহস্রাধিক গান রচনা করেছেন এবং দুই শতাধিক গানের সুরারোপ করেছেন। শফিক তুহিনের জন্ম চুয়াডাঙ্গা জেলার সদর উপজেলার সাদেক আলী মল্লিক পাড়ায়। তাঁর বাবার নাম এম, এ সবুর এবং মায়ের নাম হালিমা খাতুন। তাঁর জনপ্রিয় গানগুলো হল- ‘এর বেশি ভালোবাসা যায় না’, ‘সূর্য মুচকি হাসে’, ‘জ্বলে জ্বলে জোনাকি’, ‘তোমার চোখের আঙ্গিনায়’, ‘পাগলামী’, ‘সুস্মিতা’, ‘অন্যরকম ভালোবাসা’।
সঙ্গীত জগতে তাঁর প্রাপ্তি ও অপ্রাপ্তির কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন –
আমার প্রথম গান লেখা শুরু ১৯৯৫-এ। আমার প্রাপ্তি মানুষের ভালোবাসা, ভালোবাসা আর ভালোবাসা। অপ্রাপ্তি আছে যেটা তা হল, এখনো মনের মত তেমন গান করতে পারলাম না! যে গান আমাকে বিশাল প্রাপ্তি দিবে। মনের মত সেই গানটি এখনো হয়নি। আমার পুরোপুরি প্রাপ্তিটা পূর্ণ হবে যে গানগুলো করে, তা এখনো করা হয়নি। জাতীয় পর্যায় থেকে শুরু করে সমস্ত অ্যাওয়ার্ডই পেয়েছি। সবাই আমার গান গেয়েছে এবং আমি সবার গান করেছি। কিন্তু আজো এমন কিছু গান করার স্বপ্ন দেখি, যে গানগুলো হাজার বছর বেঁচে থাকবে বাংলাদেশে। আমি সঙ্গীতের তিন ক্ষেত্রতেই কাজ করি, আমার কাছে সঙ্গীতের প্রতিটি ক্ষেত্রই ইম্পরট্যান্ট। কেননা, আমি যখন গান লিখতাম, সুর করতাম তখন মানুষ আমাকে চিনত না এবং মানুষের কাছাকাছি তখন পৌঁছোতে পারতাম না। কিন্তু যখন আমি গান গাইতে শুরু করলাম তখন আমি মানুষের কাছাকাছি পৌঁছোতে পারলাম। গান গাওয়ার একটা শান্তি আছে এবং মানুষের সাথে যোগাযোগ করার একটা জায়গা আছে। তবে আবার আমি যখন গান গাইতাম! শুধু আমার গানই গাওয়া হতো। একজন রুনা লায়লা বা সাবিনা ইয়াসমিনকে দিয়ে গান গাওয়ানোর আমার সুযোগ হতো না। তাঁদের সাথে আমার কোনো সম্পর্ক হতো না। আমার কাজের মাধ্যমে আমার সাথে তাঁদের বন্ধন তৈরি হতো না। গান লেখা সুর করাতে যেমন একটা প্রাপ্তি আছে আবার সেই বিষয়টা গান গাওয়াতে নেই। তাই সব ক্ষেত্রই ইম্পরট্যান্ট আমার কাছে। আমি মনে করি, সঙ্গীত জগতে আমার অপ্রাপ্তির তুলনায় অনেক বেশি প্রাপ্তি।