– সালমা আক্তার।
ওপারের ডাক কখনও না কখনও এসে যায়, ওপারের ডাকে সাড়া দিয়ে চলে গেলেন, জাগতিক মায়া ত্যাগ করে বরেণ্য রবীন্দ্রসঙ্গীত শিল্পী মিতা হক! আজ রোববার ভোর সোয়া ৬টায় রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)।
মিতা হকের জন্ম ১৯৬২ সালে। কর্মের মহিমায় কন্ঠে ছিল যাদু, তিনি বাংলাদেশ বেতারের সর্বোচ্চ গ্রেডের তালিকাভুক্ত শিল্পী। সঙ্গীতে নিষ্ঠা ও গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে ২০২০ সালে একুশে পদক প্রদান করেন।
গত ৩১ মার্চ মিতা হক ভয়াল করোনায় আক্রান্ত হন। সৃষ্টিকর্তার অসীম কৃপায় করোনা নেগেটিভ হয়ে হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি রোগেও ভুগছিলেন ফলে তার ডায়লাইসিস করতে হতো। শনিবার ডায়লাইসিসের সময় তার প্রেসার ফল করে। এর পর বাসায় নেওয়ার পরও আবার তার প্রেসার ফল করে। সে সময় হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা জানান, মিতা হক হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।
মিতা হক প্রথমে তার চাচা ওয়াহিদুল হক এবং পরে ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেন খান ও সনজীদা খাতুনের কাছে গান শেখেন। ১৯৭৪ সালে তিনি বার্লিন আন্তর্জাতিক যুব ফেস্টিভালে অংশ নেন। ১৯৭৬ সাল থেকে তিনি তবলা বাদক মোহাম্মদ হোসেন খানের কাছে সঙ্গীত শেখা শুরু করেন। ১৯৭৭ সাল থেকে নিয়মিত তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বেতারে সঙ্গীত পরিবেশনা করেছেন।
রবীন্দ্র সঙ্গীতের অন্যতম শিল্পী হিসেবে তিনি দুই বাংলায় জায়গা করে নিয়েছিলেন নিজের যোগ্যতায়। দুই বাংলাতেই ছিলেন তিনি সমান প্রিয়। ভারতে মিতা হকের গানের ১৪টি এলবাম প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ১০টি।
সংগীতানুরাগী মিতা হক ছিলেন বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান ‘ছায়ানট’-এর শিক্ষক। কর্মের স্রোতে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ছায়ানটের ‘রবীন্দ্র সঙ্গীত বিভাগের প্রধান’ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্ম নিষ্ঠা দিয়ে ‘সুরতীর্থ’ নামে একটি সঙ্গীতায়তন পরিচালনা করেছেন তিনি। জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সঙ্গীত এবং বাঙালি সংস্কৃতির সাথে যুক্ত ছিলেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা তিনি ধারণ করেছেন- রক্ত মজ্জ্বা, সমস্ত দেহ ও প্রাণে।
সেই চেতনা তিনি ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর শিক্ষার্থীদের মাঝে। তিনি অনন্য, অসাধারণ তিনি।
মিতা হক থাকবেন সকল শ্রোতার হৃদয়ে। তিনি অমর হয়ে রইবেন বাঙালির হাজার হাজার বছরের সংস্কৃতির অমিত ধারায়।
মিতা হকের আত্মা চির শান্তি প্রার্থনা করছি সঙ্গীতাঙ্গন পরিবার।