– কলকাতা প্রতিনিধি।
ছায়ানট (কলকাতা)-র নিবেদনে, বিশিষ্ট বাচিকশিল্পী শ্রী দেবাশিস বসুর কন্ঠে কাজী নজরুল ইসলামের অনূদিত গ্রন্থ ‘রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ’-এর সম্পূর্ণ পাঠ সম্প্রতি অডিও অ্যালবাম হিসেবে ও বিভিন্ন ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশিত হলো বিশিষ্ট সঙ্গীতসংস্থা কোয়েস্ট ওয়ার্ল্ড থেকে। ভাবনা ও পরিকল্পনায় সোমঋতা মল্লিক, বিশ্ব-পরিবেশনায় কোয়েস্ট ওয়ার্ল্ড, নির্মাণ-সৃজনে স্বাগত গঙ্গোপাধ্যায়।
কাজী নজরুল ইসলামের সৃষ্টিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে ছায়ানট (কলকাতা) বিগত কয়েক বছর ধরে বেশ কয়েকটি অমূল্য অ্যালবাম নিবেদন করেছে। অ্যালবামগুলিতে রয়েছে নানা বিষয়-বৈচিত্র্য। সেই তালিকাতেই নবতম সংযোজন ছায়ানট (কলকাতা)-র এই বিনম্র নিবেদন। কোয়েস্ট ওয়ার্ল্ড থেকে প্রকাশিত এই স্বতন্ত্র অ্যালবামটি শুনতে শুনতে আপনারা অবশ্যই বিস্মিত হবেন দেবাশিস বসুর উচ্চারণে – আবিষ্কার করবেন অনুবাদক নজরুলকে – এই প্রত্যাশা ছায়ানট (কলকাতা)-র সভাপতি সোমঋতা মল্লিক ও কোয়েস্ট ওয়ার্ল্ডের কর্ণধার স্বাগত গঙ্গোপাধ্যায়ের।
‘রুবাইয়াৎ-ই-হাফিজ’ অনুবাদ-রচনার প্রেক্ষাপট প্রসঙ্গে কাজী নজরুল ইসলাম লিখেছেন, ‘আমি তখন স্কুল পালিয়ে যুদ্ধে গেছি। সে আজ ইংরিজি ১৯১৭ সালের কথা। সেইখানে প্রথম আমার হাফিজের সাথে পরিচয় হয়। আমাদের বাঙালি পল্টনে একজন পাঞ্জাবি মৌলবি সাহেব থাকতেন। একদিন তিনি ‘দীওয়ান-ই-হাফিজ’ থেকে কতকগুলি কবিতা আবৃত্তি করে শোনান। শুনে আমি এমনই মুগ্ধ হয়ে যাই যে, সেইদিন থেকেই তাঁর কাছে ফারসি ভাষা শিখতে আরম্ভ করি। তাঁরই কাছে ক্রমে ফারসি কবিদের প্রায় সমস্ত বিখ্যাত কাব্যই পড়ে ফেলি। তখন থেকেই আমার হাফিজের ‘দীওয়ান’ অনুবাদের ইচ্ছা হয়। কিন্তু তখনও কবিতা লিখবার মতো যথেষ্ট সাহস সঞ্চয় করে উঠতে পারিনি।
এর বৎসর কয়েক পরে হাফিজের ‘দীওয়ান’ অনুবাদ করতে আরম্ভ করি। অবশ্য তাঁর রুবাইয়াৎ নয় – গজল। বিভিন্ন মাসিক পত্রিকায় তা প্রকাশিতও হয়েছিল। ত্রিশ-পঁয়ত্রিশটি গজল অনুবাদের পর আর আমার ধৈর্য্যে কুলোল না, এবং ওইখানেই ওর ইতি হয়ে গেল। তারপর এস. সি. চক্রবর্তী এন্ড সন্সের সত্বাধিকারী মহাশয়ের জোর তাগিদে ওর অনুবাদ শেষ করি। যেদিন অনুবাদ শেষ হল, সেদিন আমার খোকা বুলবুল চলে গেছে! আমার জীবনের যে ছিল প্রিয়তম, যা ছিল শ্রেয়তম তারই নজরানা দিয়ে শিরাজের বুলবুল কবিকে বাংলায় আমন্ত্রণ করে আনলাম।’