asd
Saturday, November 23, 2024

ফোবানা ভার্চ্যুয়াল সম্মেলন…

– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।

বর্তমানে করোনাকালীন সময়ে পৃথিবীতে অস্থিরতা বিরাজ করছে এবং সেই সাথে স্থবির হয়ে আছে মানুষের জীবন। এই প্রেক্ষাপটে অনেক সংগঠন তাঁদের কার্যক্রম বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছে যেমন, তেমনি দেশ বিদেশের অনেক সংগঠন তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। উত্তর আমেরিকায় ‘ফোবানা’ বাংলাদেশীদের একটি বিরাট সংগঠন। ফোবানা -এর পুরো অর্থ হল- ফেডারেশন অফ বাংলাদেশী এ্যাসোসিয়েশন অফ নর্থ আমেরিকা।

মূলতঃ সুদীর্ঘ ৩৪ বছর ধরে এই প্রবাসী সংগঠন বাংলা ভাষা, বাংলাদেশের ইতিহাস, সাহিত্য ও ঐতিহ্যকে আগামী প্রজন্মের কাছে পৌঁছে দেয়ার অভিপ্রায় আপ্রাণ কাজ করে যাচ্ছে। এই সংগঠনের সারাবছরের কাজের ধারা অনুযায়ী প্রতি বছর অন্যতম প্রধান অনুষ্ঠান হয় ফোবানা সম্মেলন! এই বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না তবে কোভিট-১৯ এর মহামারীর কারণে জনগণের স্বাস্হ্য ও নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে এ বছর ফোবানা সম্মেলন কোনো অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে না। তাই ফোবানার কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে নেয়া হয়েছে সময়পোযোগী পদক্ষেপ, ভার্চ্যুয়াল সম্মেলন! এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে যথাক্রমে আজ ও আগামীকাল ২৮ ও ২৯ নভেম্বর’২০২০। দুইদিন ব্যাপী এই অনুষ্ঠানে বিভিন্ন দেশ থেকে শিল্পী কলাকুশলীবৃন্দ অংশগ্রহণ করবেন রেজিস্ট্রেশনের ভিক্তিতে এবং ফোবানার অনুমতিক্রমে।
ফোবানার ভার্চ্যুয়াল সম্মেলনে বাংলাদেশ থেকে যে সকল শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন, তাঁরা হলেন-
ফাহমিদা নবী
বাপ্পা মজুমদার
লীনা তাপসী খান (নজরুল গীতি)
সালাউদ্দিন আহমেদ (নজরুল গীতি)
ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায় (রবীন্দ্র সঙ্গীত)
আশিকুর রহমান মেহরাব
সাজিয়া সুলতানা পুতুল
অনিমা মুক্তি গমেজ (ফোক সঙ্গীত)
পারভেজ উইথ সুফিয়ানা ব্যান্ড
আমেরিকা থেকে যে সকল শিল্পী অংশগ্রহণ করবেন তাঁরা হলেন-
এম.এ.শোয়েব (অ্যারিজোনা)
রমেল খান (আটলান্টা)
রাজীব রাসেল (নিউজার্সি)
শুভন (নিউজার্সি)
চন্দন চৌধুরী (নিউইয়র্ক)
রবি (লস এঞ্জেলস)
লেমন চৌধুরী (নিউইয়র্ক)
কান্তা আলমগীর (নিউইয়র্ক)
বিদিশা মুখার্জী তুলি (নিউজার্সি)
তৃণা হাসান (নিউইয়র্ক)
জয়শ্রী সেন মজুমদার (নিউজার্সি)
রুপা (হুস্টন)
নাসরিন সান্নি(ডালাস)
লাবনী (হুস্টন)
ডঃ রফিক খান (হুস্টন)
মল্লিকা খান
শ্যামা খান (ভার্জিনিয়া)
এলিজা খান (ক্যানসাস)
ইলোরা আহমেদ (হুস্টন)।

১৯৯৩ সাল থেকে প্রতি বছর ফোবানা সম্মেলনের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে আসছেন যে শিল্পী তিনি হলেন- এম.এ.শোয়েব। যার হাত ধরে বাংলাদেশে প্রথম অডিও ক্যাসেটের পথ চলা শুরু হয়। ৮০দশকের তুমুল জনপ্রিয় শিল্পী এম.এ.শোয়েব। বলা যায়, সেই সময়ের কিশোর কিশোরীদের হার্টথ্রব ছিলেন এম.এ.শোয়েব। ১৯৮৮ সালে তিনি দেশ থেকে বিদেশে, আমেরিকায় পাড়ি জমান এবং তখন থেকেই সেখানেই বসবাস শুরু করেন। এম.এ.শোয়েব ও ফোবানা সম্মেলনের ব্যাপারে জানার জন্যে সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে এম.এ.শোয়েব-এর সাথে কথা বলা হলে, তিনি এই ফোবানা সম্মেলন সম্পর্কে এবং তাঁর সম্পর্কে সুদূর আমেরিকা থেকে বলেন-
ফোবানা নর্থ আমেরিকা সহ এখন বাংলাদেশেও অনেক জনপ্রিয় একটি নাম। আমি প্রথম ফোবানার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি ১৯৯৩ সালে কানাডার টরেন্টোতে, স্কাইলাইন হোটেলে। এটা ছিল ফোবানা থেকে আমার প্রথম আমন্ত্রিত অনুষ্ঠান। ফোবানা থেকে আমাকে আমন্ত্রণ করে নিয়ে যায় এবং সেখান থেকেই আমার ফোবানায় গান গাওয়া শুরু। ফোবানার প্রথম অনুষ্ঠান আমার জীবনের একটি এক্সাইটিং মোমেন্ট ছিল কারণ নর্থ আমেরিকায় এরকম অনুষ্ঠান করিনি এবং দেখি নি! প্রায় সাত হাজার বাঙালীর উপস্হিতিতে এই অনুষ্ঠান হয়েছিল যা আমি কখনোই ভুলব না! তবে এখন আর এরকম হচ্ছে না। এখন বাংলাদেশীরা অনেকে বিভক্ত হয়ে ফোবানা করছেন। একটি ফোবানা আর নেই। যাই হোক! আমি বিভিন্ন ফোবানার অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছি। বলতে গেলে প্রায় সবগুলোতেই তবে মাঝে মাঝে দু’একটা ছুটে গিয়েছে। আমি যেমন করেছি ‘ফোবানা সম্মেলন’- বোস্টন, নিউজার্সি, শিকাগো, ওকল্যান্ড, ফ্লোরিডা, ডালাস, জর্জিয়া, ভার্জিনিয়া, ক্যানসাস, ওয়াশিংটন ডিসি, নিউইয়র্ক, লস এঞ্জেলস, টরেন্টো, মন্ট্রিল, মেডিসিন স্কয়ার গার্ডেন এবং গত বছর করলাম নিউইয়র্কের নাসাউ কলিসিয়ামে। নাসাউ কলিসিয়াম হল সারা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় অডিটোরিয়াম।

ফোবানা হচ্ছে নর্থ আমেরিকার বাংলাদেশীদের জন্য সংগঠন। আসলে ফোবানা ননপলিটিক্যাল একটি সংগঠন এবং বাণিজ্যিকভাবে সুযোগ সুবিধা নেয়ার জন্য এই সংগঠন প্রতিষ্ঠা করা হয় নি। সম্পূর্ণ নিজেদের আনন্দের জন্য এই সংগঠন করা হয়েছে। এই সম্মেলনে সবাইকে ডাকা হয় শুধু একটি মহা মিলন মেলার জন্যে। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা আমেরিকা কানাডার বিভিন্ন শহরে থাকেন অথচ সময়ের অভাবে বা ব্যস্ততার কারণে ২০/৩০ বছরেও কারো সাথে কারো দেখা সাক্ষাৎ হয় না। ফোবানার এই অনুষ্ঠানে সবার সাথে সবার দেখা হয় এবং সেই কারণে সবাই এই অনুষ্ঠানের জন্যে অপেক্ষা করে আর ছুটে ছুটে সবাই চলে আসে। এই অনুষ্ঠানটি হয় তিনদিন ধরে তাই সবাই এই তিনদিন সবার সাথে খুব আনন্দে সময় পার করে। আমার এই ফোবানার সকলের সাথেই ভালো সম্পর্ক আছে এবং সবাই আমাকে খুব পচ্ছন্দ করে এবং ভালবাসে। যার জন্য প্রতি ফোবানার অনুষ্ঠানে আমাকে
আমন্ত্রণ জানানো হয়। আমি নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি সেই কারনে যে প্রতি অনুষ্ঠানে আমি অংশগ্রহণ করতে পারছি। এই বছরে ফোবানার যে ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠান বা সম্মেলন হবে সেখানেও আমি অংশগ্রহণ করব। আমি সব সময়ই ফোবানার সাথে আছি এবং থাকব ইনশা আল্লাহ্।

এম.এ.শোয়েব যখন বাংলাদেশের গানের জগতে জনপ্রিয়তার উচ্চশিখরে অবস্থান করছেন তখনই এই জনপ্রিয়তার লোভ পেছনে ফেলে আমেরিকায় পাড়ি দিলেন এবং সেখানে বসবাস শুরু করলেন! এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন-
আমি ১৯৮৮-এ আমেরিকার লস এঞ্জেলসে প্রথম আসি। এখানে এসে যে কোনো এক কারণে থেকে যেতে হল। পরবর্তীতে আমার স্ত্রী চলে আসেন। আমার দু’ছেলে মেয়ে। এক ছেলে ও এক মেয়ে। লস এঞ্জেলসে তাঁদের জন্ম হয়। তারপর ওখান থেকে আমি এরিজোনাতে চলে আসি। এখানে এসে বাড়ি কিনি এবং এখানেই বিজনেস শুরু করি। এরপর এখানে একটি বাচ্চাদের গানের স্কুল খুলি। গানের স্কুলের নাম ‘সুর ও বাণী’। বাচ্চাদের গান শেখানো শুরু করি তবে এখন সেইসব বাচ্চা অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন আর স্কুল সেভাবে নেই! মাঝে মাঝে নামেমাত্র কয়েকজন আসে।
এক সময় বাংলাদেশে আমার জনপ্রিয়তা থাকার কারণে অনেকেই আমাকে চিনেন। তাই ফোবানার অনুষ্ঠান ছাড়াও আমি আমেরিকার বিভিন্ন শহরে যেখানে দু’আড়াইশ বাঙালী থাকে সেখানেও ব্যক্তিগতভাবে অনেক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে থাকি। যার কারণে আমার বিভিন্ন শহরে ভ্রমণ করতে হয়! ভ্রমণ করাটা আমার একটি হবি তারসাথে আমার প্রিয় গান! দু’য়ে মিলে আমি খুব উপভোগ করি। আমাকে পেয়ে তাঁরা খুব খুশী হয়। যদিও দেশের সেই সুন্দর গানের পরিবেশ আমি হারিয়েছি। এখানে বসে আমি যতই গান করি না কেন! দেশের সেই পরিবেশ, সেই আনন্দ পাওয়া যায় না। সেই কারণে আমি প্রতি বছর দেশে যাই গান করার জন্য। দেশে গিয়ে বিভিন্ন চ্যানেল ও মিডিয়াতে গান পরিবেশন করি। তা আমি ভীষণভাবে উপভোগ করি এবং অন্যান্যরা বুঝতে পারে আমি এখনো গান নিয়েই আছি। তবে দেশে না থাকলে বিদেশে যতই গান করি না কেন, দেশের মত প্রচার হয় না। ফলে সেই ধরনের জনপ্রিয়তা পাওয়া যায় না, যা আমার আগে ছিল! এই প্রজন্মের কেউ হয় তো আমাকে সেভাবে চিনে না! আমি চাই তাদেরকে আমার সাথে পরিচিত করাতে তাই প্রতি বছর দেশে যাই। তবে এখানে বাঙালীদের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ আমি কখনোই রিফিউজ করি নি। ভবিষ্যতেও এই ধরণের অনুষ্ঠান আমি করব ইনশা আল্লাহ।

একটা কথা বলি! গান আমি কখনোই ছাড়তে পারব না। গান হল আমার আত্মার টনিকের মত। আমার বেঁচে থাকার টনিক। এই টনিক ছাড়াতো আমার জীবন বাঁচবে না! তাই আমি গান চালিয়েই যাচ্ছি এমন কি আমার ছেলে মেয়ে দু’জনকে গান শিখিয়েছি। আমার ছেলে মেয়ে দুজনেই গান করে। আমি সেজন্যে অনেক খুশী।
সঙ্গীতাঙ্গনের পক্ষ থেকে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই সময় দেয়ার জন্য এবং ফোবানা ও আপনার সম্পর্কে আমাদের এবং আপনার ভক্ত ও গানের জগতের সকল মানুষকে মূল্যবান তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য। অনেক অনেক শুভকামনা রইল আপনার ও আপনার পরিবারের জন্য এবং ফোবানার ভার্চ্যুয়াল সম্মেলন সার্থক হোক এই আশায় ফোবানার সকল শিল্পীবৃন্দ ও ফোবানার সাথে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি রইল সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে শুভকামনা।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles