– সালমা আক্তার।
রত্নময়ী রূপসী বাংলায় কোন এক আলোর ঝরা ক্ষণে ফুটে ছিল এক মানষ কন্যারূপী ফুল, প্রিয় মূখ, প্রিয় গানের মানুষ, প্রাণের মানুষ বর্তমানের খ্যাতনামা কোকিল কন্ঠি কন্ঠ শিল্পী রুনা লায়লা, জন্ম বর্তমান সিলেট জেলায় ১৯৫২ সালের ১৭ নভেম্বর, ধন্য বাংলা, ধন্য বাংলার সাহিত্য অঙ্গন, ধন্য বাংলার মাটি, কালজয়ী কোকিল কন্ঠির আগমনে, হেসেছিল ধরনী, দোলেছিল প্রাণের স্পন্দন, স্বর্ণযুগের বার্তা নিয়ে। বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলী ছিলেন, সরল মনা এক সরকারি কর্মকর্তা, মা আনিতা সেন ওরফে আমেনা লায়লা ছিলেন প্রকৃত এক সঙ্গীত শিল্পী, মামা সুবীর সেন ভারতের বিখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী। কোকিল কন্ঠি রুনা লায়লার শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে, বাবা সৈয়দ মোহাম্মদ এমদাদ আলীকে যেতে হয় চাকরির সরকারি বিধি মোতাবেক রাজশাহী থেকে বদলী হয়ে তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানের মুলতানে, সেই সুবাদে শৈশব কাটে পাকিস্তানের লাহোরে। মন দোলানো কন্ঠশিল্পী রুনা লায়লা বাংলাদেশের চলচ্চিত্র, পপ ও আধুনিক সঙ্গীতের জন্য বিখ্যাত সঙ্গীতাঙ্গনে, বাংলাদেশ ছাড়াও ভারতীয় ও পাকিস্তানী চলচ্চিত্রের অনেক গানে তিনি কন্ঠ দিয়েছেন। গজল শিল্পী নামেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশে রয়েছে যথেষ্ট সুনাম। ১৮টি ভাষায় ১০ হাজারেরও অধিক গানে কন্ঠ দিয়েছেন দরদী শিল্পী রুনা লায়লা, পাকিস্তানে তাঁর গান ‘দমাদম মাস্ত কালান্দার’ অত্যন্ত জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ‘উনকি নাজরোঁ সে মোহব্বতকা জো পয়গাম মিলা’ গানটি দিয়ে সঙ্গীতাঙ্গনে বেশ আলোচনায় আসেন ১৯৬৬ সালে উর্দু ভাষার “হাম দোনো” চলচ্চিত্রের মাধ্যমে, ষাটের দশকে তিনি নিয়মিত পাকিস্তান টেলিভিশনে গান পরিবেশন করেন, ১৯৭০ এর দশকে
চলচ্চিত্রের গানে কন্ঠ দেয়া শুরু করেন, ১৯৭২ সাল থেকে ১৯৭৪ সাল অবধি জিয়া মহিউদ্দিন শো-তে নিয়মিত গান পরিবেশন করেন, ‘সাধের লাউ’ গানে রেকর্ড করেন ১৯৭৪ সালে কলকাতায়, একই বছর মুম্বাইয়ে কনসার্ট শুরু করেন, বলিউডে বেশ খ্যাতি অর্জনের স্থান করে নেয় ‘ও মেরা বাবু চেল চালাবি’ গানটি।
শ্রদ্ধেয় চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত “শিল্পী” নামক চলচ্চিত্রে রুনা লায়লা চিত্র নায়িকা হিসেবে অভিনয় করেন, চিত্র নায়ক আলমগীরের বিপরীতে, অসংখ্য গুনে গুণান্বিত রুনা লায়লা বাংলাদেশের একজন জীবন্ত কিংবদন্তী।
স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার লাভ করা সহ রুনা লায়লা বিজয়ী শ্রেষ্ঠ নারী কন্ঠ শিল্পী রূপে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন বেশ কয়েকবার, উল্লেখযোগ্য ১৯৭৬ সালে “দি রেইন” চলচ্চিত্রে, ১৯৭৭ সালে “যাদুর বাঁশি” চলচ্চিত্রে, ১৯৮৯ সালে “আ্যক্সিডেন্ট” চলচ্চিত্রে, ১৯৯৪ সালে “অন্তরে অন্তরে ” চলচ্চিত্রে, ২০১২ সালে” তুমি আসবে বলে ” চলচ্চিত্রে, ২০১৩ সালে” দেবদাস ” চলচ্চিত্রে, ২০১৪ সালে” প্রিয়া তুমি সুখী হও”চলচ্চিত্রে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। জয়া আলোকিত নারী সম্মাননা অর্জন করেন ২০১৬ সালে, ভারত ও পাকিস্তানে উল্লেখযোগ্য পুরষ্কারের মধ্যে “সায়গল” পুরষ্কার, সঙ্গীত মহাসম্মান ও তুমি অনন্যা সম্মাননা পুরষ্কার ২০১৩ সালে লাভ করেন, ২০১৬ সালে দাদা সাহেব ফালকে সম্মাননা অর্জন করে, ১৯৬৮ ও ১৯৭০ সালে পাকিস্তান থেকে অর্জন করেন নিগার পুরষ্কার, ক্রিটিক্স পুরষ্কার, গ্র্যাজুয়েট পুরষ্কার দুই বার ও সেই সাথে আরও অর্জন করেন জাতীয় সঙ্গীত পরিষদ স্বর্ণপদক। রুনা লায়লা বাংলাদেশ টেলিভিশনে সম্পাদনা করেন অসংখ্য অনুষ্ঠান সেরাকন্ঠ, চ্যানেল আই, পাওয়ার ভয়েস, চ্যানেল নাইন ক্ষুদে গানরাজ, চ্যানেল আই বিচারক রূপে অবস্থান করেন। এছাড়া ভারতে সারেগামা পা(হিন্দি), জিটিভি, সারেগামা পা বিশ্বসেরা, জি বাংলায় বিচারক পদে অবদান রাখেন। তারকা কথনের প্রিয় মুখ রুনা লায়লা অসংখ্য স্টুডিও এ্যালবাম সম্পাদনা করেন, উল্লেখযোগ্য আই লাভ টু সিং ফর ইউ, সিনসিয়ারলি ইয়োরস রুনা লায়লা, গীত, গজল, রুনা গোজ ডিসকো, রুনা সিংস শাহবাজ কালান্দার, সুপার রুনা, গঙ্গা আমার মা পদ্মা আমার মা, দ্য লাভারস অব রুনা লায়লা, বাজম-এ-লায়লা, রুনা লায়লা মুডস আ্যন্ড ইমোশনস ও রুনা লায়লা শাহ কালা ইত্যাদি। ২০১৬ সালে একক সঙ্গীত সম্পাদনা করেন “আই লাভ মাই বাংলাদেশ “। ২০১৭ সালে ডেইলি স্টার ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যংক আয়োজিত সেলিব্রিটি লাইফে আজীবন সম্মাননা পুরষ্কার অর্জন করে নন্দিনী কন্ঠ শিল্পী রুনা লায়লা। হৃদয়গ্রাহী অনুভূতি ছুঁয়ে আজন্ম ভক্ত হৃদয়ে বসবাস করবেন, গানের মানুষ প্রাণে মানুষ উপমহাদেশের জনপ্রিয় কন্ঠ শিল্পী রুনা লায়লা। বারবার অসংখ্য বাংলা চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় গানের দারুণ ঝড় তুলেছেন প্রিয় শিল্পী রুনা লায়লা “গানেরি খাতায় স্বরলিপি লিখে”, “চঞ্চলা হাওয়ারে”, “যাদু বীনা পাখি “, “আমি হব পর”, “ও মিষ্টি ভাবী”, “ফুলের বাসর ঘর”, “গান তো নয়”, “কোকিলা কালো বলে”, “তুমি আজ কথা দিয়েছ”, “ও আমার বন্ধু গো”, “কাল তো ছিলাম ভালো”, “জ্বালাইয়া প্রেমের বাতি”, “একাত্তরের মা জননী”, “প্রেম প্রীতি আর ভালোবাসা”, “লীলাবালী লীলাবালী “, ” আমার ভাঙ্গা ঘরে ভাঙ্গা চালা”, “ফুলের আসন ফুলের বসন” ইত্যাদি।
আজ জনপ্রিয় এই শিল্পীর জন্মদিনে সঙ্গীতাঙ্গন ও সঙ্গীতপ্রমীদের পক্ষ থেকে প্রানঢালা অনেক অনেক শুভেচ্ছা ও ভালবাসা।