Friday, October 3, 2025

অষ্টক গীত ও নৃত্য…

– মোশারফ হোসেন মুন্না।

অষ্টক গান বা অষ্টক নাচ বাংলাদেশের প্রাচীন লোকজ সংস্কৃতির একটি অন্যতম প্রধান ধারা। এটি সাধারণত চৈত্র সংক্রান্তীর নানাবিধ আচার-অনুষ্ঠানের সময় পরিবেশিত হয়ে থাকে। আজ আমরা অষ্টক গীত কি? এর নামকরণ এর ইতিহাস ও উৎপত্তি উৎস সম্পর্কে ধারণা লাভ করবো।

সাধারণভাবে, চৈত্র মাসের শেষ-তিন দিন গাজন উৎসব এর আনুষঙ্গিক ‘নীলের, শিবের গাজন’ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষতঃ দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সংগঠিত লোকজ মেলায় বিভিন্ন ধরনের গান ও আচার-অনুষ্ঠানাদিতে
অন্যতম প্রধান আনুষঙ্গিক পরিবেশনা হিসেবে আয়োজন করা হয় অষ্টক গীত ও নৃত্য।

বাংলায় ষড়ঋতুর পরিক্রমায় বসন্তের শেষ ভাগে ও গ্রিস্মের পূর্ব-ভাগে অনুষ্ঠিত হয় গ্রামীণ জনপদের অন্যতম প্রধান লোকজ-উৎসব ‘চৈত্র-সংক্রান্তী’। এসময়ই মূলত বাংলার লোকজ উৎসবের অন্যতম প্রধান ধারা ‘গাজন’
-এর শাখা ‘নীলের, শিবের গাজন’ অনুষ্ঠিত হয় এবং এই উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে, বিশেষত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে জমে উঠে এক-ধরনের লোকজ মেলার যা চৈত্রের শেষ-তিন দিন বিভিন্ন ধরনের গান ও আচার-অনুষ্ঠানাদি
পালনের মাধ্যমে সমাপ্ত করা হয়। আর এ-সময় এ অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষ তাদের চলমান ঐতিহ্য অনুসারে পরিবেশন করে থাকে অষ্টক গীত,নৃত্যের।

বাংলাদেশের ও পশ্চিমবঙ্গের পূর্বাংশের বিভিন্ন অঞ্চলের লোকজ সংস্কৃতির অন্যতম একটি প্রধান উপাদান হলো এই অষ্টক গীত, নৃত্যের পরিবেশনা; যা সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান অবতার ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ও তার প্রেয়সী শ্রীরাধিকা দেবীর প্রণয়-লীলার পটভূমিতে রচিত। এটি এ-অঞ্চলের অধিবাসীদের অন্যতম প্রধান লোকজ উৎসব ‘চৈত্র-সংক্রান্তী’-এর সাথেই মূলত সম্পর্কিত তবে এটি শিবের স্থলে রাধা-কৃষ্ণের প্রেম-লীলা বিষয়ক আখ্যান ও লোকপুরাণ অবলম্বনে পরিবেশিত হয়ে থাকে। এর পরিবেশনাতে গ্রামের ছোট ছোট ছেলে-ছোকরারা শ্রীকৃষ্ণ, শ্রীরাধিকা দেবী ও রাধার শখী গোপীদের সাজ সেজে দুই দলে বিভক্ত হয়ে গান ও নাচ সহযোগে সাধারণত রাধা-কৃষ্ণের ‘নৌকা-বিলাস’ পালা অভিনয় করে থাকে। চৈত্র-সংক্রান্তী উৎসবের কয়েকদিন পূর্ব হতে গ্রামের বিভিন্ন বাড়ির সামনে একদল শিল্পী গানের মাধ্যমে অনুষ্ঠান আয়োজনের লক্ষ্যে অর্থ সংগ্রহ করে; যেখানেও আমরা অন্যান্য বিভিন্ন ধরনের গীত, নৃত্যের পরিবেশনার মধ্যে কখনো কখনো অষ্টক গীত, নৃত্য-এর পরিবেশনা দেখতে পাই। আর এক্ষেত্রে বিষয়-বস্তু হিসেবে থাকে শিব, রাধা-কৃষ্ণ, নিমাই সন্ন্যাসী, গৌরী, বক্ষ্রা, বিষ্ণু, চন্ডিদাস-রজকিনী, বেহুলা-লখিন্দর এই অষ্ট-প্রসঙ্গ। ঠিক কি কারণে বা কোথা থেকে “অষ্টক” নামক গীত, নৃত্যের উদ্ভব ঘটেছে সে সম্পর্কে সঠিকভাবে কোনো তথ্য-বৃত্তান্ত জানা যায় না, বরং এই বিষয়ে নানা ধরনের মতামত প্রচলিত রয়েছে।
কেউ বলেন, ‘এতে আটটি বৈষ্ণবীয় প্রসঙ্গ থাকায়’; কেউ বলেন, ‘প্রতি দলে আট জনে মিলে রাধা-কৃষ্ণের উক্তি-প্রত্যুক্তিমূলক নাট্যধর্মী গীত পরিবেশন করায়’, কারো মতে, ‘এটি শ্রীকৃষ্ণের অষ্টপ্রহরের লীলা-সংক্রান্ত নাট্যগীতি
হওয়ায়’- একে “অষ্টক গীত, নৃত্য” বলা হয়। আবার এ সম্পর্কে কোন কোন গবেষকের মতে, এ-সব গানে সনাতন ধর্মীদের অষ্ট-অবতার রাধা, কৃষ্ণ, সুবল, বিশাখা, ললিতা, বৃন্দা, বড়িমাই ও বলরাম-এর বিভিন্ন কার্য-চরিত্রের
সমন্বয় ঘটেছে বলে এটি অষ্টক গীত,নৃত্য বলে পরিচিত; বিপরীতে অপর একদল বলেন, অবতার শ্রীকৃষ্ণ তার অষ্ট বা আটজন শখীকে নিয়ে লীলা করতেন এবং এ-গানে সেই উপাখ্যান আলোচিত হয় বলে একে অষ্টক গীত নৃত্য বলে। অন্য-দিকে, বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, এই গীত, নৃত্যে “বাসলী দেবী”-এর বন্দনাও রয়েছে, যা মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের অন্যতম নিদর্শন বড়ু চন্ডীদাস রচিত “শ্রীকৃষ্ণকীর্তন” কাব্যের ভণিতায়ও লক্ষণীয়,
তাই বলা যায় উৎস যা-ই হোক না কেন, লোক-সংস্কৃতির এই ধারাটি সুদূর প্রাচীন কাল হতে এদেশের লোক-মানসের সাথে প্রচলিত প্রথার একটি অংশ হিসেবে পরিগণিত হয়ে আসছে।

বিভিন্ন অঞ্চলে একে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করা হয়; যেমনঃ ওপার বাংলার মুর্শিদাবাদ ও মালদহ অঞ্চলে ‘অষ্টকগান’ নামে, এপার বাংলার বৃহত্তর কুষ্টিয়া অঞ্চলে ‘অষ্টগান’ নামে, ফরিদপুর, বরিশাল অঞ্চলে ‘অষ্টক গীত, নৃত্য’ নামে এটি পরিচিত। আজ এ পর্যন্ত। অন্য কোন একদিন জানবো এর আরো অজানা কিছু মজার তথ্য।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles

// DEBUG: Processing site: https://shangeetangon.org // DEBUG: Panos response HTTP code: 200 ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş ilbet yeni giriş betwinner melbet megapari megapari giriş betandyou giriş melbet giriş melbet fenomenbet 1win giriş 1win 1win