শিল্পী অন্তরা মন্ডলের গানের ভুবন…
– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।
সঙ্গীত প্রিয় পাঠকবৃন্দ আজ কথা বলব নজরুলসঙ্গীত শিল্পী অন্তরা মন্ডল এর সাথে। চলুন জেনে নেই কে এই অন্তরা মন্ডল ? কিভাবে তিনি প্রবেশ করলেন সঙ্গীতের ভুবনে ? কী পেলেন নজরুল সঙ্গীতের ভিতরে ?
সঙ্গীত এর বিভিন্ন দিক নিয়ে অন্তরা মন্ডল এর সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার ঠাকুরদা (কালিচরণ মন্ডল) ছিলেন গানের জগতে, তিনি ফোক গান করতেন এবং কবিয়াল বিজয় সরকারের সাথেও গান করতেন। বাবাও যেহেতু গানের মানুষ, উচ্চাঙ্গ সংগীতের ধারায় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তাই বলা চলে ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীত পরিবারে আমার বেড়ে ওঠা। ছোটবেলায় দেখতাম বাবা ঘরে ক্লাস নিতো, বাইরেও ক্লাস নিতো। অনেক ছাত্র-ছাত্রীকে তিনি গান শেখান। সে সময় আমাকে তেমন গান শেখানো হতো না। অন্যদের নিয়েই ব্যস্ত থাকতেন।
একদিন অন্তরার মা (শেফালি মন্ডল) জোর করে তার বাবাকে বললেন যে, ওকে নিয়ে একটু বসো। কতজনকেইতো গান শেখাও ওকেও একটু দেখো। তার মাও ছিলেন একজন সঙ্গীত অনুরাগী। পরে তার বাবা তাকে নিয়ে বসতো মাঝে মাঝে।
অন্তরা মন্ডল বলেন, অন্যদের যখন বাবা গান শেখাতেন তখন তাদের দেখে-শুনে নিজের ভিতর সুরটাকে আয়ত্ত করার চেষ্টা করতাম। এভাবে আমার গানের ভুবনে পদচারণা চলতো…।
খুলনা প্রেসক্লাবে মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে গানের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন শিল্পী অন্তরা মন্ডল। হারমোনিয়াম বাজিয়ে ছিলেন তার বাবা। কোনো গানের আসরে এটাই তার প্রথম অংশগ্রহণ ছিল।
বাবা আমাকে নিয়ে মাঝে মাঝে ছোটদের গান, নজরুল সংগীত নিয়ে বসতো, গান শেখাতো কিন্তু তেমন গুরুত্ব সহকারে না। ২০০৩ সালে নতুন কুঁড়িতে বাবার ছাত্ররা সংগীতে পুরস্কার পায় এবং মা বলে ওকে কি অংশগ্রহণ করানো যায় না ? পরে আমাকেও অংশগ্রহণ করার সুযোগ করে দেয় এবং ২০০৩ সালেই উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হই। ২০০৪ সালেও ক শাখা থেকে নজরুল সঙ্গীতে দ্বিতীয় হই। উচ্চাঙ্গ সংগীতের প্রথম – বলেন অন্তরা।
২০০৭ সালে ঢাকায় আসা এবং বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে উল্লেখযোগ্য স্থানই দখল করে নিতো। মিরপুর গার্লস আইডিয়াল স্কুল থেকে বিভিন্ন সংগীত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। এবং এরই মাঝে তিনি নজরুল সঙ্গীতের উপর শিক্ষা নিয়েছেন ‘বুলবুল ললিতকলা একাডেমী’ থেকে।
২০১১ সালে সরকারি সংগীত কলেজ এ এইচ.এস.সি-তে ভর্তি হওয়া এবং ২০১৪ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগীত বিভাগে প্রথম ব্যাচে ভর্তি। ২০১৪ সালেই আগস্টে তার স্কলার্শিপ হয় ভারতের ‘রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে’। সেখানে চলে যান অনার্স করেন এবং ওখানেই ২০১৯ সালে খেয়ালে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এদিকে ২০১৫ সালে বাংলাদেশ টেলিভিশনে নজরুল সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে তালিকাভুক্ত হয় এবং বাংলাদেশ বেতারেও।
সঙ্গীতশিল্পী অন্তরা মন্ডল আরো জানান, যাদের কাছ থেকে তিনি সংগীতের বিভিন্ন দিক আয়ত্ত করেছেন অর্থাৎ তার সংগীত গুরু হিসেবে যাদের নাম স্মরণীয় তারা হলেন, পিতা পূর্ণ চন্দ্র মন্ডল, মঙ্গল চন্দ্র মন্ডল, ডক্টর প্রদীপ নন্দী, ডক্টর ফকির সুমন, মফিজুর রহমান, আলাউদ্দিন লাভলু, মাহমুদুল হাসান, অনিমা রায়, জয়দীপ চক্রবর্তী, সঞ্চিতা চৌধুরী, সুজয় চন্দ্র প্রমুখ।
অন্তরা মন্ডল এর সাথে কথা হলে আরো জানা যায়, ছোটবেলা থেকেই তিনি নজরুল ও রাগ সঙ্গীত এর উপর বেশি আকৃষ্ট ছিলেন। তিনি বলেন, আমি এই ধরনের গান প্রচুর পরিমাণে শুনতাম। আর ভিতরে ভিতরে ভালোলাগা তৈরি হয় নিজের অজান্তেই। আর নজরুল সঙ্গীতের বিভিন্ন বিভাগে সুরে, সঙ্গীতে কিছুটা হলেও নিজস্বতা প্রকাশ করার জায়গা আছে যেটা রবীন্দ্রসঙ্গীতে নেই। রবীন্দ্র সংগীতও আমার খুব ভালো লাগে, গাইও মাঝে মাঝে কিন্তু নজরুল সঙ্গীতের মত অতটা হয়ে ওঠে না। নজরুল সঙ্গীত যেন হৃদয়ের সাথে মিশে গেছে। তাই নজরুল ভক্তসহ সবার প্রতি শুভ কামনা, শুভ কামনা ‘সঙ্গীতাঙ্গন’ এর প্রতি।
আজ ১২ই নভেম্বর ২০২০ বৃহস্পতিবার, রাত ৯টায়…সঙ্গীতাঙ্গন পত্রিকা আয়োজিত একক সঙ্গীত সন্ধ্যা’য়আপনাদের গান শোনাবেন…তরুন প্রতিশ্রুতিশীল কণ্ঠশিল্পী অন্তরা মন্ডল…আপনাদের সবাইকে আমন্ত্রন…সংস্কৃতি ও সঙ্গীতাঙ্গন এর সাথে থাকুন…