– মোশারফ হোসেন মুন্না।
আবহমান কাল থেকে বাংলাদেশে সঙ্গীতের ব্যাপক প্রচার রয়েছে। সাধারণত সঙ্গীতকে বিশ্লেষণ করলে পাওয়া যায়ঃ সঙ্গীত=ছন্দ+সুর অর্থাত্ দুইটি ছন্দযুক্ত বাক্য সুর করে উচ্চারণ করা হলে তাকে বলা হয় গান বা সঙ্গীত। প্রাচীন বাংলায় সাধারণ মানুষ চিঠি লিখত পদ্যাকারে। কিন্তু উচ্চারণ করার সময় একটু সুর দিয়ে উচ্চারণ করত। তখন থেকেই সঙ্গীতের প্রচলন শুরু। তখনকার বৌদ্ধ সমাজে চর্যাপদ একটি বিশেষ জায়গা দখল করে ছিল। বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারকেরা তা গানের সুরে উচ্চারণ করতেন। ফলে পাঠকের মন জয় করা সহজ হত। তেমনি একটি পদ্য হলঃ
“কা আ তরুবর পাঞ্চ বি ডাল
চঞ্চল চী এ পইঠা বি কাল”
তখনকার হিন্দু সমাজেও দেবীর পূজায় গান গেয়ে সাধারণ মানুষ দেবীর পূজা করত। তার পর এলো মধ্যযুগ। এদেশে মধ্যযুগে সঙ্গীতচর্চা ছিল উচ্চমানের। মধ্যযুগে আলাওল রচিত মঙ্গলকাব্য ছিল এক প্রকারের সঙ্গীতের ভান্ডার। এছাড়া মধ্যযুগের কবিদের মধ্যে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, মাইকেল মধুসূদন দত্ত, কাজী নজরুল ইসলাম, লালন শাহ, শাহ আবদুল করিম, হাসন রাজা, রাধারমণ প্রমূখ। সে সময়ে হিন্দুদের দেবীদের উদ্দেশ্যে কীর্তন রচিত হত। এছাড়া রচিত হয়েছে বৈষ্ণব পদাবলি। এটি রচিত হত মূলত কৃষ্ণা ও রাধার কাহিনীকে ঘিরে। এসব বৈষ্ণব পদাবলীর বিখ্যাত পদকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন বিদ্যাপতি, চন্ডীদাস, জ্ঞানদাস, গোবিন্দ দাস প্রমূখ। মধ্যযুগীয় মুসলিম সমাজে সঙ্গীত কিভাবে এলো? মধ্যযুগে মুসলিম সমাজে পুঁথি পাঠের আসর বসত। পুঁথিগুলো পাঠ করা হত গানের সুরে। পুঁথিগুলো নেওয়া হত আরব্য উপন্যাস, পারস্য থেকে পাওয়া বিভিন্ন আখ্যান থেকে। কয়েকটি পুঁথি হলঃ
ইউসূফ-জোলেখা, লায়লি-মজনু, জঙ্গনামা, সায়ফুল মুলক বদিউজ্জামান ইত্যাদি। এছাড়া সে যুগে বাদ্য ছাড়া একধরণের সৃষ্টিকর্তার স্তুতি গাওয়া হত যা গজল নামে পরিচিত ছিল। মধ্যযুগীয় হিন্দুসমাজে সঙ্গীত কি করে এলো ? মধ্যযুগের হিন্দু সমাজে সবচেয়ে বেশী সঙ্গীতে প্রচলন ছিল। হিন্দুরা পূজায় দেবতার উদ্দেশ্যে গান গাইত। তখনকার হিন্দু সমাজে কীর্তন গান হত। এছাড়া ছিল বৈষ্ণব পদাবলি।
আধুনিক যুগে সঙ্গীতের আবির্ভাব। আধুনিক যুগে এদেশে সঙ্গীত অনেক ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছেঃ লোকগীতি, আধুনিক গান, ব্যান্ড সঙ্গীত।
লোকগীতি কি ? লোকগীতি বলতে বোঝানো হয়, নজরুলগীতি, রবীন্দ্রসঙ্গীত, পল্লীগীতি ইত্যাদি অর্থাত্ মধ্যযুগীয় গায়কদের গান। এছাড়াও ভাওয়াইয়া, ভাটিয়ালি, মুর্শিদি, গম্ভীরা, বারমাস্যা, বাউল সঙ্গীত, নির্ব্বান সঙ্গীত ইত্যাদি। বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত আমার সোনার বাংলা গানটির সুর নেওয়া হয়েছে এক বাউলগান এর সুর থেকে। আজ এই পর্যন্ত আধুনিক গানের বিস্তারিত ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করবো আরেকটি লেখায়। সঙ্গীতাঙ্গন এর সাথে থাকুন।