– মোশারফ হোসেন মুন্না।
কাকে আর মা বলে ডাকবো ? আমার মাকে আমি আর কখনো মা বলে ডাকতে পারবো না। আর কখনো বলবে না তুই আসবি কবে, কখন আসবি, আমি কিন্তু তোর অপেক্ষায় আছি। আমি কিভাবে ভুলে থাকবো আমার মাকে ?
এমন করেই কথাগুলো লিখেছেন সঙ্গীতশিল্পী নুরজাহান আলীম। গতকাল মঙ্গলবার রাত ২টা ৩০ মিনিটের সময় ইহলোক ছেড়ে পরলোকে গমন করেন সঙ্গীতশিল্পী নুরজাহান আলীমের মা। তিনি বলেন, বুধবার রাত ২টা ৩০ মিনিটের সময় আমার মায়ের অবস্থার অবনতি হয়। তারপর বনশ্রীর একটি হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানেই আমার মা আমাদের এতিম করে চলে গেলো। আমি বড় একা হয়ে গেছি। সত্যিই যার মা নেই তার জীবনের ১৬ আনাই হারিয়ে যায়। অনেক কিছুর মাঝেও মায়া মমতা আর মায়ের ভালোবাসার অভাব থেকে যায়। আজগর আলীম বলেন, মা আমার সাথেই থাকতো। গত চারমাস ধরেই মা’কে নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। অসুস্থ ছিলেন, শেষ পর্যন্ত আর ধরে রাখতে পারলাম না। আমার মা শ্রদ্ধেয় জমিলা আলীম ছিলেন একজন রত্নগর্ভ মা। তিনি পল্লী সম্রাট আব্দুল আলীমের অনেক গানের সহযোদ্ধা একইসাথে অনুপ্রেরণাকারী ছিলেন। উল্লেখ্য কিছুদিন পূর্বে নজরুল একাডেমী কর্তৃপক্ষ শ্রদ্ধেয়া বেগম জমিলা আলীমকে ‘নজরুল একাডেমী সন্মাননা পদক’ প্রদান করেন।
বাংলা গানের কিংবদন্তি শিল্পী পল্লী সম্রাট’খ্যাত আব্দুল আলীমের স্ত্রী জমিলা আলীম। আব্দুল আলীম ছিলেন বাংলা গানের পুরধা। তিনি ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর পৃথিবীর মায়া ছেড়ে সন্তানদের এতিম করে চলে গিয়েছিলেন।
আজ ৪৬ বছর পর জমিলাও চলে গেলেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিলো ৮৩ বছর। তিনি চার ছেলে, তিন মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। সবার কাছে ছেলেমেয়েরা তাঁর মায়ের জন্য দোয়া চেয়েছেন। নিরবে নিভৃতে চমৎকার এক জীবন কাটিয়ে গেছেন তিনি। আজ আরো নিরব হয়ে চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছেন। আল্লাহ তাকে বেহেস্ত দান করুক। আজ বুধবার ১৪ অক্টোবর মায়ের দাফন সম্পন্ন হয়। বিক্রমপুরের দোহার থানায় নিজের বাবার বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হয় জমিলাকে। আব্দুল আলীম প্রাইমারি স্কুলে পড়বার সময় গ্রামোফোন রেকর্ডে গান শুনে গান গাইবার জন্য আগ্রহ জন্মে। ছোটবেলায় তার সঙ্গীত গুরু ছিলেন সৈয়দ গোলাম আলী। ঐ অল্প বয়স হতেই বাংলার লোক সঙ্গীতের এই অমর শিল্পী গান গেয়ে নাম করেছিলেন। মাত্র তেরো বছর বয়সে ১৯৪৩ সালে তার গানের প্রথম রেকর্ড হয়। রেকর্ডকৃত গান দুটি হলো ‘তোর মোস্তফাকে দে না মাগো’ এবং ‘আফতাব আলী বসলো পথে’। এত অল্প বয়সে গান রেকর্ড হওয়া সত্যিই বিস্ময়কর। পরে তা আর বিস্ময় হয়ে থাকেনি, তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলার লোক সঙ্গীতের এক অবিসংবাদিত-কিংবদন্তি পুরুষ। তার সাত সন্তানের মধ্যে তিন সন্তান জহির আলীম, আজগর আলীম ও নূরজাহান আলীম সঙ্গীত শিল্পী।