(জন্ম- ১৫/০৮/১৯৩৭ – মৃত্যু -০৭/১০/২০১৫)
বুকে তোমার ঘুমিয়ে গেলে
জাগিয়ে দিও নাকো
আমায় জাগিয়ে দিও নাকো,
মাগো, এমন করে আকুল হয়ে
আমায় তুমি ডাকো।
জন্মভূমির বুকেই চিরতরে ঘুমিয়ে আছেন দেশ প্রেমিক, মুক্তিযোদ্ধা, গীতিকবি, ‘নয়ীম গহর’। ১৯৭১ সালের রণাঙ্গনের মুক্তিকামী মানুষের বুকে সাহস শক্তি সঞ্চালনের জন্য তিনি লিখেছেন একাধিক গণসঙ্গীতের গান।
মাতৃভূমির ভালোবাসা বুকে নিয়ে তিনি রচনা করেছেন দেশাত্মবোধক গান। ওনার অনেক গানের মাঝে যে গানগুলো দেশের মানুষের বুকে ঠাঁই করে নিয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হলো, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’, ‘পূবের আকাশে ঐ সূর্য উঠেছে’, ও ‘নোঙর তোল তোল, সময় যে হলো’। ‘বুকে তোমার ঘুমিয়ে গেলে, জাগিয়ে দিও নাকো; মাগো’। এ লাইনটি ওনারই লেখা গানের অংশ। শুধু মাত্র দেশের গান লিখেই মানুষের হৃদয়ে এত বড় জায়গা দখল করা যায়, নয়ীম গহরকে না জানলে বুঝা যেত না। শুধু মাত্র দেশের গান লিখে সবার মনে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। ওনার লেখা, ‘পূবের আকাশে ঐ সূর্য উঠেছে’, গানটির সুরকার আজাদ রহমান গানটিতে কন্ঠ দিয়েছিলেন, প্রয়াত ফিরোজা বেগম এবং দেশের জীবন্ত কিংবদন্তী কণ্ঠশিল্পী, সাবিনা ইয়াসমিন। এবং সাবিনা ইয়াসমিন এর গাওয়া, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’ আর সমবেত কন্ঠে গাওয়া ‘নোঙর তোলো তোলো’।
আমাদের স্বাধীন দেশের ২১শে ফেব্রুয়ারি, ২৫শে মার্চ, ২৬শে মার্চ, ১৫ই আগস্ট, ১৬ই ডিসেম্বরসহ বিদ্যালয় -বিশ্ববিদ্যালয় সব জায়গায় শ্রদ্ধার সাথে শোনা যায়, ‘জন্ম আমার ধন্য হলো মাগো’। আমাদের পূর্ব প্রজন্ম, বর্তমান প্রজন্ম, ভবিষ্যৎ প্রজন্ম, প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম কেউ ভুলতে পারবে না নয়ীম গহরের এই অমর গান। এ গান যুগ যুগান্তরের। তিনি সকল মায়ার বাঁধন ছেড়ে চলে গেছেন, কিন্তু রেখে গেছেন ওনার অমর স্মৃতিগীতি। কালের পর কাল সারা দেশে বেজে উঠবে ওনার গানগুলো। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা পুরুষ। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন তিনি গানের মাধ্যমে সবাইকে অনুপ্রেরণা দিতেন। এবং তিনি ছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য সংগ্রাহক। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন, গীতিকার, ঔপন্যাসিক, অভিনেতা, রচয়িতা এবং গায়ক। বঙ্গবন্ধু, শেখ মুজিবুর রহমান ওনাকে অনেক ভালবাসতেন।
২০১২ সালে তিনি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মানী স্বাধীনতা পদক পান। আজ মৃত্যুবার্ষিকীতে আমরা সবাই শ্রদ্ধেয় নয়ীম গহরকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি।
মহান আল্লাহ্ যেন উনাকে কবুল করে নেন।