– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।
দেশের একজন জনপ্রিয় রক সঙ্গীত শিল্পী, যিনি জেমস নামেই পরিচিত। তিনি তার ভক্তদের কাছে ‘গুরু’, ‘নগর-বাউল’ নামেও পরিচিত। জেমস বর্তমানে নগর বাউল ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট এবং ভোকালিষ্ট, যা পূর্বে ফিলিংস নামে পরিচিত ছিল। তিনি তার স্বতন্ত্র কন্ঠ এবং স্টাইলের জন্য বাংলাদেশ এবং ভারতের মানুষের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়। তিনি বলিউডের কিছু চলচ্চিত্রে প্লেব্যাকও করেছেন। জেমসের জন্ম ১৯৬৪ সালের ২ অক্টোবর নওগাঁয়। তবে তিনি বেড়ে ওঠেন চট্টগ্রামে। তার বাবা ছিলেন একজন সরকারি কর্মচারি, যিনি পরবর্তীতে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সঙ্গীত জেমসের পছন্দের হলেও তার পরিবার তা পছন্দ করত না।
গানের জন্য বাবার সাথে অভিমান করে ঘড় ছাড়েন তিনি কিশোর বয়সে। চট্টগ্রামের আজিজ বোর্ডিং নামক একটি বোর্ডিং-এ তিনি থাকতে শুরু করেন। সেখানে থেকেই তার সঙ্গীতের ক্যারিয়ার শুরু হয়। কিছু বন্ধুদের নিয়ে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ফিলিংস নামক একটি ব্যান্ড এবং ব্যান্ডের প্রধান গিটারিস্ট ও কন্ঠদাতা হিসেবে নিজের ক্যারিয়ার শুরু করেন। চট্টগ্রাম থেকে শুরু হওয়া ব্যান্ড দল ফিলিংস এর মাধ্যমে তিনি প্রথমে খ্যাতি অর্জন করেন। পরবর্তীতে তিনি নগর বাউল নামে ব্যান্ড দল গঠন করেন। তিনি নগর বাউল এর প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। বাংলা ভাষায় তিনিই প্রথম সাইকিডেলিক রক শুরু করেন। গিটার বাজানোতেও তিনি দারুণ পটু। তিনি নগরবাউল ব্যান্ডের মূল ভোকাল ও গিটারিষ্ট হলেও তিনি মূলত তার সলো ক্যারিয়ারকেই বেশি গুরত্ব দেন। অনেক গীতিকার তার জন্য সঙ্গীত রচনা করেছেন। যাদের মধ্যে কবি শামসুর রহমান, প্রিন্স মাহমুদ, লতিফুল ইসলাম শিবলি উল্লেখযোগ্য। কর্মজীবনের প্রথম দিকে তিনি জিম মরিসন, মার্ক নফলার এবং এরিক ক্লাপটনের মত সঙ্গীত শিল্পীদের দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। ১৯৮৭ সালে ফিলিংস ব্যান্ডের সাথে তার প্রথম এ্যালবাম ‘স্টেশন রোড’ মুক্তি পায়। ১৯৮৮ সালে মুক্তি পায় তার প্রথম একক এ্যালবাম অনন্যা। পরবর্তীতে তিনি ফিলিংস ব্যান্ডের নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম দেন ‘নগর বাউল’।
বাংলা ব্যান্ড সঙ্গীতে কাজ করার কারণে পশ্চিম বঙ্গেও খুব জনপ্রিয় ছিলেন জেমস। সেই সূত্রে ২০০৪ সালে বাঙালি সঙ্গীত পরিচালক প্রিতমের সাথে মিলিত হন তিনি। ২০০৫ সালে বলিউডের গ্যাংস্টার নামক একটি চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া ‘ভিগি ভিগি’ গানটি ব্যপক জনপ্রিয়তা পায় এবং এক মাসেরও বেশি সময় তা বলিউড টপচার্টের শীর্ষে ছিল। ২০০৬ সালে তিনি ও লামহে নামক চলচ্চিত্রে ‘চেল চলে’ গানে কন্ঠ দেন। ২০০৭ সালে তিনি লাইফ ইন এ মেট্রো চলচ্চিত্রে আবারও প্লেব্যাক করেন। চলচ্চিত্রে তার গাওয়া গান দুইটি হল রিশতে এবং আলবিদা (রিপ্রাইস)। সর্বশেষ হিন্দি চলচ্চিত্রে তিনি প্লেব্যাক করেছেন ওয়ার্নিং নামক চলচ্চিত্রে। তার গাওয়া বেবাসি গানটি মুক্তি পায় ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বরে।
২০০০ সালের প্রথম দিকে জেমস পেপসির একটি বিজ্ঞাপন চিত্রে অংশগ্রহন করেন। এটিই ছিল তার কাজ করা প্রথম বিজ্ঞাপন চিত্র। এই বিজ্ঞাপনটি বাংলাদেশ এবং পশ্চিম বঙ্গে প্রচার করা হয়। এরপর তিনি ২০১১ সালে এনার্জি ড্রিংক ব্ল্যাক হর্সের বিজ্ঞাপনে কাজ করেন। বলিউড চলচ্চিত্র লাইফ ইন এ মেট্রোর কিছু অংশে জেমসকে দেখা যায়। যেখানে তিনি একটি ব্যান্ডের সদস্য চরিত্র কিছু অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে ওয়ার্নিং চলচ্চিত্রের বেবাসি গানের ভিডিও চিত্রেও কাজ করেন জেমস। সেখানে তিনি নিজের গাওয়া গানের সাথে ঠোঁট মিলিয়েছেন।
জেমসের প্রথম স্ত্রীর নাম রথি। ২০০২ সালে তারা আলাদা হয়ে যান এবং জেমস বিয়ে করেন বেনজির সাজ্জাদকে। যার সাথে ১৯৯৯ সালে একটি কনসার্টে তার প্রথম সাক্ষাত হয়। জেমসের দুইটি কন্যা সন্তান (জান্নাত এবং জাহান) ও একটি পুত্র সন্তান (দানেশ) আছে।
জেমস গাজী আহমেদ শুভ্রর সাথে রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট নামক একটি প্রডাকশন হাউস পরিচালনা করেন। এই প্রডাকশন হাউস ২০১১ আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপের জন্য বিউটিফুল বাংলাদেশ নামে একটি ভিডিও বিজ্ঞাপন চিত্র তৈরি করে। রেড ডট এন্টারটেইনমেন্ট প্রচুর রিয়ালিটি শো প্রযোজনা করেছে। এর মধ্যে দ্য রকস্টার ২, লাক্স চ্যানেল-আই সুপারস্টার, কে হতে চায় কোটিপতি উল্লেখযোগ্য। এছাড়া রেড ডট টেলিভিশন বিজ্ঞাপন চিত্রও নির্মাণ করেন।
ফিলিংস এর কিছু প্রয়াস হলোঃ
স্টেশন রোড (১৯৮৭)
জেল থেকে বলছি (১৯৯৩)
নগর বাউল (১৯৯৬)
লেইস ফিতা লেইস (১৯৯৮)
কালেকশন অফ ফিলিংস (১৯৯৯)
নগর বাউল ব্যান্ড প্রয়াসঃ
দুষ্টু ছেলের দল (২০০১)
দুষ্টু ছেলের দল (২০০১)
একক সম্পাদনা
অনন্যা (১৯৮৮)
পালাবে কোথায় (১৯৯৫)
দুঃখিনী দুঃখ করোনা (১৯৯৭)
ঠিক আছে বন্ধু (১৯৯৯)
আমি তোমাদেরই লোক (২০০৩)
জনতা এক্সপ্রেস (২০০৫)
তুফান (২০০৬)
কাল যমুনা (২০০৮)
হিন্দি চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক
ভিগি ভিগি (২০০৫, গ্যাংস্টার)
চল চলে (২০০৬, ও লামহে)
আলবিদা (রিপ্রাইস),
রিশতে (২০০৭, লাইফ ইন এ… মেট্রো)
বেবাসি (২০১৩, ওয়ার্নিং ৩ডি)
বাংলা চলচ্চিত্রে প্লে-ব্যাক সম্পাদনা
আসবার কালে আসলাম একা
মাটির ঠিকানা ( মাটির ঠিকানা )
আসছে দেশা আসছে ( দেশা দ্যা লিডার ) ২০১৪।
বিধাতা (২০১৫, সুইট হার্ট,পরিচালনা: ওয়াজেদ আলী সুমন।)
এতো কষ্ট কষ্ট লাগে ( ওয়ার্নিং ) ২০১৬
তোর প্রেমে তে অন্ধ হলাম ( সত্তা ) ২০১৭
প্রেম ও ঘৃণা (জিরো ডিগ্রী)
পুরস্কার ও মনোনয়ন সম্পাদনা –
জাতীয় চলচ্চিত্র পুরষ্কার – ২০১৪ দেশা।
মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার সম্পাদনা :-
সাল-নাম-বিভাগ-ফলাফল :-
২০০১ পেপসি শ্রেষ্ঠ মডেল (পুরুষ) – মনোনীত
২০১৪ দেশা আসছে শ্রেষ্ঠ কণ্ঠশিল্পী (পুরুষ) – বিজয়ী
তোর প্রেমেতে অন্ধ হলাম – (চলচ্চিত্র/সত্তা) – বিজয়ী
সিটিসেল/চ্যানেল আই মিউজিক অ্যাওয়ার্ডস – ২০১৬ – শ্রেষ্ঠ ছায়াছবির গান – বিধাতা, (চলচ্চিত্র/সুইটহার্ট)
জেমস এর নামে গঠিত হয়েছে জেমস ফ্যান ক্লাব। ২৭ জুন ২০১৬ সালে আনুষ্ঠানিক ভাবে যাত্রা শুরু হয় এই ক্লাবের। অনুষ্ঠানে নগরবাউল এর সদস্যরা ছাড়াও ছিলেন ব্যান্ডের বিজনেস ম্যানেজার রুবাইয়াত ঠাকুর রবিন, সঙ্গীতশিল্পী বাপ্পা মজুমদার, গীতিকার কবির বকুল, শফিক তুহিন, দিনাত জাহান মুন্নী, কনা এবং জনপ্রিয় ব্যান্ড শিল্পী হাসান সহ আরো অনেকেই। গুরু-জেমস দেশে বাইরে অবস্থান করায় তিনি শ-শরীরে উপস্থিত হতে পারেন নি। ক্লাব সদস্য সূত্রে জানানো হয়, আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করবে জেমস ফ্যান ক্লাব। এসব কার্যক্রমের মধ্যে থাকছে বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে দেশের পরিবেশ রক্ষায় সবুজায়নের পক্ষে কাজ করা, শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক উন্নয়ন, অটিজম শিশু ও সুবিধাবঞ্চিত ছিন্নমূল পথশিশুদের সার্বিক উন্নয়ন, নারী নির্যাতন, ইভটিজিং ও সামাজিক অবক্ষয় প্রতিরোধের জন্য প্রচারণামূলক কার্যক্রম পরিচালনা, সুবিধাবঞ্চিত সহায়সম্বলহীন বয়োবৃদ্ধদের জীবনযাত্রার মানোন্নয়ন এবং দেশে ও বহির্বিশ্বে বাংলা গানের সম্মানজনক প্রচার-প্রসারে কাজ করা। সেই সাথে সারা দেশের জেমস ভক্তকে একত্রিত করবে জেমস ফ্যান ক্লাব। নগর বাউল জেমস এর জন্মদিনে
তার এসব মহৎ কাজের জন্য জানাই প্রিতি ও ভালোবাসা। সেই সাথে আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। শুভ জন্মদিন।