– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।
আমাকে দিয়ে এই আট পুরুষ চলছে আমাদের সঙ্গীতের পরিবার। আসলে পরিবারটাই সঙ্গীত এর পরিবার। আমার পূর্বপুরুষ যারা ছিলেন, বাবা-কাকা সবাই আসলে তবলার সাথে জড়িত ছিলেন। এই আমিই ব্যতিক্রমধর্মী এক পুরুষ যে নাকি আমাদের পরিবারের এই প্রথম সেতারে মনোনিবেশ করি।
যখন আমি ছোট ছিলাম শ্রদ্ধেয় স্বপন দত্তের কাছে সারগাম-এর মাধ্যমে রবীন্দ্র সঙ্গীত শেখা শুরু করি এবং ৫/৬ বছর তার কাছেই গান শিখি। হঠাৎ করে আমার কন্ঠের পরিবর্তন দেখা দেয়, তখন বসে থাকলাম বেশ কিছুদিন এবং ভাবতে লাগলাম কী করা যায় কী হবে ? তারপর একদিন শ্রদ্ধেয় জ্যাঠামশাই সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তী বাবার কাছে আমাকে সেতার শেখানোর কথা বলেন। তখন সেতার এর অনেক দাম এবং অনেকেই কিনতে পারে না আবার অনেকেই শিখতেও চায় না। তখন আমার বাবাকে গুরুজি বললেন আমার মায়ের কেনা সেতার দিয়ে আমি ওকে সেতার বাজানো শেখাবো। আর শেখালেনও তাই। শুরু হয় আমার সেতারে হাতে খড়ি। সেই ছোটবেলা থেকে ১২/১৩ বছর সেতারে সাধনা চলে শ্রদ্ধেয় সত্যজিৎ চক্রবর্ত্তীর কাছে। সম্পূর্ণ বিনা খরচে তিনি আমাকে সেতার বাজানো শেখালেন। এ এক জীবনের বড় পাওয়া।
কথাগুলো বলছেন তরুণ সেতার বাদক জ্যোতি ব্যানার্জি।
আমরা আরো তার জীবনের গল্প জানব চলুন দেখা যাক এরপরের জীবন…
বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের যে মহাপরিচালক লুবানা নাহিদ তিনি আমার বাবার খুব কাছের মানুষ হিসেবে পরিচিত। যখন সে জানতে পারল যে, আমি সেতার বাজানো শিখছি তখন তিনি আমার বাবাকে বললেন- তাহলে ও আসুক এবং আমার এখানে সেতারের উপর স্কলার্শিপ দিচ্ছি। এবং সেখান থেকে স্কলার্শিপ নিই।
পরপর সেখানে দুইবার প্রথম হই। তারপর বেঙ্গল ক্লাসিক্যাল মিউজিকে সেতার বাজাই দুইবার। আমার বেঙ্গলের সাথে ২০১৫-১৭ এই তিন বছর কাটে। এইভাবে চলতে থাকে আমার দিনগুলো…- বলেন জ্যোতি ব্যানার্জি।
ওখান থেকে বের হবার পর প্রথম যখন তিনি বাংলাদেশ বেতারে পরীক্ষা দেন এবং প্রথমবারেই ‘এ’ গ্রেডে উত্তীর্ণ হন তিনি। তাকে আবিষ্কার করলেন শাহিন সরদার। তিনিই তাকে প্রথম এই মিডিয়া জগতে নিয়ে আসলেন এবং সেটা কমার্শিয়াল ভাবে।
২০১৮ সালের শেষের দিকে রেডিওতে ওস্তাদ শেখ সাদী খান এর সাথে প্রথম কাজ করেন। তারপর ‘বাংলাদেশ বেতারে’ ‘ট্রানস্ক্রিপশনে’ চাকরি করেন একজন কাছের মানুষ, একজন ভালোবাসার মানুষ তবলা বাদক অনির্বাণ সরকার। অনির্বাণ সরকার, জ্যোতি ব্যানার্জিকে নিয়ে যান শিল্পকলার সঙ্গীত বিভাগের পরিচালক চন্দন দত্তের কাছে এবং তার সাথে পরিচয় করিয়ে দেন। এবং তার মাধ্যমেই সাবিনা ইয়াসমিন, রুনা লায়লা, ফেরদৌস ওয়াহিদ প্রমুখদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ লাভ হয়। এর পরপরই তিনি বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে সেতার বাদক হিসেবে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছেন এই ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’র মাধ্যমেই।
তারপর আরও কিছু জানতে চাইলে তিনি জানান,
টেলিভিশনে আমার প্রথম কাজ, ওস্তাদ শেখ সাদী খান এবং তবলা বাদক দেবু চৌধুরী এই দুইজনের মাধ্যমে স্মৃতিময় গানগুলি নিয়ে অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে। বাংলাদেশ টেলিভিশনে আমার যাত্রা শুরু হয় ২০১৮ শেষের দিকে সেই থেকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় নি।
এরপর ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত প্রোগ্রাম করলাম তারপর তো খুবই খারাপ অবস্থা, দেশের পরিস্থিতি! এপ্রিল থেকে একেবারে ঘরে বসে কাটানো।
সম্প্রতি তিনি বিটিভিতে দোলনচাঁপা অনুষ্ঠানের কাজ করছেন এবং শীঘ্রই তিনি আরও বেশ কিছু গানের কাজে হাত দেবেন বলে জানিয়েছেন। পরিশেষে, তিনি আরো বলেন, নিজ জেলা খুলনাতে শীঘ্রই বেশ কিছু কাজ করবেন বলে কথা চলছে।
সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে তরুণ সেতার বাদক জ্যোতি ব্যানার্জির জন্য রইলো শুভ কামনা। তার সেতারে বেঁজে উঠুক সঙ্গীতের জয়ধ্বনি!