– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।
লাবু রহমান শুধু একটি নাম নয় এর সাথে জড়িয়ে আছে বাংলা পপ সঙ্গীত জগতের আরো অনেক ছোঁয়া। যার হাতের ছোঁয়ায় বেজে ওঠে ব্লুজ গিটারের সুর। মূলত তিনি একজন গিটারবাদক এবং গীতিকবি, সুরকার ও কণ্ঠশিল্পীও।
‘ব্লুজ সিঙ্গার’ও বলা হয় তাকে। সর্বোপরি তিনি একজন জীবন্ত কিংবদন্তি গিটার বাদক।
আজ জানবো এই কিংবদন্তির জীবনের কিছু অজানা কথা।
১৯৫৮ সালে জন্ম নিয়ে স্বাধীনতার পর ১৯৭৩ সালেই হাতে তুলে নেন গিটার নামের একটি বাদ্যযন্ত্র। আর সেই গিটার নিয়েই আজো বেঁচে আছেন তিনি। সত্তরের দশকেই বাংলাদেশে ব্যান্ডদলের জয়যাত্রার একটি সময়। আর সেই সময় থেকেই লাবু রহমান আছেন ব্যান্ডের সাথে জড়িত।
১৯৭৩ সালে রাজধানীর ‘জোনাকি সিনেমা হলে’ একটি ব্যান্ড শো এর আয়োজন হয়, সেখানে ‘স্পন্দন’, ‘উচ্চারণ’সহ বেশ কয়েকটি মিউজিক ব্যান্ড অংশগ্রহণ করে। সেখানে আমি উপস্থিত থাকি এবং সেসব ব্যান্ডের শো দেখি।
শো দেখার পরে আমার মনে হয়েছে যে, ‘আমি গিটার বাজাবো’! ওইদিনই আমি একটা গিটার সংগ্রহ করি এবং বাজানো শুরু করি। সেই থেকে চলছে আমার আর আমার গিটারের জীবন। আমি যখন গিটার বাজানো শুরু করি, টাকা রোজগার করতে হবে, নাম হবে এমন কোনো চিন্তা চেতনা আমার ভিতরে ছিল না। আমার উদ্দেশ্য ছিল গিটার বাজানো। তারপর বিভিন্ন ব্যান্ডের সাথে সংযুক্ত হলাম বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করি। অর্থ ও সম্মান দুটোই আসতে থাকে। আমার ইচ্ছা ছিল গিটারবাদক হব সেটাই হয়েছি। হয়তো এখনো পুরোপুরি হতে পারেনি। কারণ শেখারতো কোনো শেষ নেই, আমি এখনো শিখি।
হ্যাঁ, এভাবেই কথাগুলো বলছেন একজন কিংবদন্তি গিটারবাদক লাবু রহমান। তিনি আরো একটি মজার বিষয় জানান যে, সত্যিকার অর্থে আমি এখনো অর্থের জন্য গিটার বাজাই না। আমাকে এত পরিমান টাকা দিতে হবে, এ দিতে হবে, ও দিতে হবে এসব চিন্তা কখনো ছিল না এখনো নাই। তবে আরো মজার বিষয় হলো- মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি, মানে হল- টাকা পয়সা আসবে এই ভেবে গিটার না বাজালেও টাকা-পয়সা আসে! হয়তো এটাও এক প্রকার ভালোবাসা।
বর্তমানে আসলে এমন কোন শিল্পী পাওয়া যাবে কিনা জানা নেই যে, তারা টাকা ও নামের জন্য সঙ্গীত জগতে আসে না! বলা চলে প্রায় প্রত্যেকেই এই বিষয়ে কিছু না কিছু চাহিদা থাকে। কিন্তু শুনলেনতো এই কিংবদন্তির কথা!
আর এনারাই হলো সত্যিকারের শিল্পী।
বাংলা পপ সম্রাট গুরু আজম খানের সাথে সঙ্গীত জীবনে কাজ করেছেন তিনি টানা দুই বছর। আজম খানের সাথে ছিল তার অন্তরের ভালোবাসা এবং আজম খানের থেকেও তিনি শিক্ষা গ্রহণ করেছেন। বাংলা রক মিউজিক তাঁর সাথে থেকে বাজিয়ে বাজিয়েই শেখা। ১৯৭৭-৭৮ এই দুই বছর তিনি আজম খানের সাথে গিটার বাদক হিসেবে যুক্ত থাকেন। এর মাঝেই তার লেখা ও সুর করা ২টি গানে আজম খান কন্ঠ দেন। গান দু’টি আমাদের পরিচিত ও প্রিয়। প্রথমটি ‘আমি যারে চাইরে সে থাকে মোরই অন্তরে’ এই গানটি অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি গান। দ্বিতীয়টি হল ‘সুখ তুমি কত দূরে ?’।
আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো আজম খানের প্রায় ৮০ শতাংশ গানের গিটার কম্পোজ এই লাবু রহমানের নিজের করা।
কন্ঠশিল্পী হিসেবে লাবু রহমানের করা ২৭টি গানের মধ্যে জনপ্রিয় কয়েকটি হল-
বিদ্রোহী
ছোট পাখি
ফিরে এসো
সুখী মানুষের ভিড়ে
সময় হয়েছে তার ফিরে আসবার’ প্রভৃতি।
বর্তমানের কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বর্তমানে বেশ কিছু গানের কাজ করছি, যে গানগুলো অনেকদিনের জমানো গান। প্রায় বিশ পঁচিশটা গানের সবগুলোর সুর ও কম্পোজ করা আমারই কিন্তু সব গানের কথা আমার নয়। সেই গানগুলো রিলিজ করার চিন্তা আছে এবং কাজ করে যাচ্ছি।
১৯৮৭ সাল থেকে বর্তমানে তিনি জনপ্রিয় বাংলা রক ব্যান্ড ‘ফিডব্যাক’-এর’ সঙ্গেই তিনি সংযুক্ত আছেন। এবং সেই ১৯৮৭ সাল থেকেই ফিডব্যাক পুরো দমে বাংলা রক মিউজিক নিয়ে কাজ শুরু করে। বাংলা পপ সঙ্গীত জগতে যার অবদান অপরিসীম। ‘ফিডব্যাক’ সম্পর্কে তিনি আরও একটি তথ্য দেন যে ফিডব্যাকের প্রথম দুইটি এ্যালবাম বাদে সবগুলো এ্যালবামেই তার হাতের গিটারের মিউজিক রয়েছে।
লাবু রহমান ভক্তদের জন্য বাংলাদেশের প্রথম সঙ্গীত বিষয়ক পত্রিকা ‘সঙ্গীতাঙ্গন’ এর পক্ষ থেকে আজ রাত ৯টায় ‘সঙ্গীতাঙ্গন’ পত্রিকার ফেসবুক পেইজে লাইভে আসবেন এই কিংবদন্তি শিল্পী। মিউজিক নিয়ে, গিটার নিয়ে আর কথা বলতে। আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে লাইভে যুক্ত হয়ে প্রশ্ন করে জেনে নিতে পারবেন কাঙ্খিত প্রশ্নের উত্তর।
সবাইকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শিল্পীর সুস্থতা ও দীর্ঘ জীবন কামনা করে শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইলো সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে।
‘লাবু রহমান এর একক সঙ্গীত সন্ধ্যা” উপভোগ করতে চোখ রাখুন ‘সঙ্গীতাঙ্গন’ পত্রিকার ফেসবুক পেজ facebook.com/shangeetangon এই ঠিকানায়। অথবা এখানেই যুক্ত থাকুন। লাইভ শুরু হতেই লিংকটি এখানে সংযুক্ত করা হবে।