– সুব্রত মণ্ডল সৃজন।
গানের শিল্পী সঞ্জয় কবিরাজ। আজ কথা হবে তাকে নিয়ে। শিল্পী সঞ্জয় কবিরাজ একজন আদর্শ কণ্ঠশিল্পী। চলুন তাহলে তাকে নিয়ে কিছু জেনে নেয়া যাক। মূলত তিনি নজরুল সংগীত ও আধুনিক গানের সঙ্গীতশিল্পী। নজরুল ও আধুনিক গান নিয়েই তার সাধনা।
সঞ্জয় কবিরাজের সাথে কথা হলে জানা যায় – সঙ্গীত জগতে হাতে খড়ি হয়েছিল তার দাদা প্রবীর কবিরাজের কাছ থেকে। সেই সময়টা ছিল, যখন তিনি প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। অর্থাৎ সেই ছোটবেলা থেকেই তাঁর গানের প্রতি ঝোঁক।
অনুপ্রেরণায় কে ছিলেন ? জিজ্ঞাসার জবাবে তিনি যে উত্তর দেন তা হলো, আসলে আমাদের পরিবারটাই গানের পরিবার, আমার দাদু থেকে গানের সঙ্গে জড়িত ছিলো! পরিবারের সবাই কমবেশি গান করতো এবং গানের সাথে জড়িত ছিল, এখনো আছে…সেই সূত্রে বলা যায় আমার পরিবারই আমার অনুপ্রেরণা! একটা ঘটনা মনে পড়ে যায়, আমাদের বাড়ির পাশেই ছিল ফসলি মাঠ। মাঠে ফড়িং ধরতে গিয়ে গলা ছেড়ে গান গাইতাম হঠাৎ একদিন আমার মায়ের চোখে পরলো, মা আবার সেই কথা বাবার কাছে বলল যে, তুমিওতো গান করো, দেখো না তোমার ছেলের কত সুন্দর গলা! কত সুন্দর গান গাইতে পারে! একটা হারমোনিয়াম কিনো। তারপরে বাবা মাত্র পাঁচশত টাকা দিয়ে একটা হারমোনিয়াম কিনে দেয়। সেই থেকেই আমি গানটা যেন আরো বেশি ভালোবেসে ফেললাম। আর সেই আমার পথ চলা আজও চলছে সৃষ্টিকর্তা চাইলে যতদিন তিনি বাঁচিয়ে রাখবেন, সুস্থ-সবল রাখবেন গান নিয়ে যেন বেঁচে থাকতে পারি। তারপরেও বলতে হয় মা আমাকে সব সময় একটু সবার থেকে বেশিই অনুপ্রেরণা দিত।
তিনি আরও জানান, তারপর আমি ধারাবাহিকভাবে যার কাছে গান শিখি তিনি হলেন পূণ্য চন্দ্র মন্ডল। আমাদের এলাকাতে তিনটি গ্রাম মিলে ‘ত্রিবেণী’ নামে একটি গানের সংগঠন ছিল। সেই সংগঠনের অনুষ্ঠানে মাঝে মাঝে আমি গান করতাম। একদিন অনুষ্ঠানে দেখি শ্রদ্ধেয় পূণ্য চন্দ্র মন্ডল গান করতে এসেছেন। তাকে দেখে তার গান শুনে আমার মনে ধরে যায়। বাড়ি এসে আমি মাকে বললাম, আমি তার কাছে গান শিখতে চাই। মা দাদাকে বলে আমাকে তার কাছে গান শেখানোর জন্য ভর্তি করে দিল এবং সেই থেকেই গানের প্রতি ভালোবাসা আরো বেড়ে গেল। সময়টা ছিল ১৯৯৪ সাল।
তিনি আরো বলেন, ২০০০ সালে খুলনা থেকে প্রথম ঢাকায় এসে ‘সরকারি সঙ্গীত কলেজ’ থেকে সংগীতে এমমিউজ সম্পন্ন করি। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবারও মাস্টার্স সম্পন্ন করি। তারপর ২০০৯ সালে ‘জাতীয় শিক্ষা সপ্তাহ’ উপলক্ষে আয়োজিত সারা বাংলাদেশ থেকে সঙ্গীত প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করি এবং আমি স্বর্ণপদক লাভ করি। এরপর ২০১১ সালে কলকাতার কবিতীর্থ চুরুলিয়া থেকে নজরুল সংগীতের উপর ‘নজরুল সম্মাননা পদক’ লাভ করি।
দেশের বাইরেও বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন এবং নজরুল ইনিস্টিটিউট ও রামকৃষ্ণ মিশন থেকে তার কয়েকটি গানের সিডি বেরিয়েছে। আর বাংলাদেশ টেলিভিশনে ২০০০ সালে এবং বাংলাদেশ বেতারে ২০০১ সালে সংযুক্ত হন।
নজরুল সঙ্গীতকে বেছে নেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তখনও আমি ছোট! আমার গানের গুরু পূণ্য চন্দ্র মন্ডল। তাকে আমি বললাম, আমি কিভাবে আরো ভালো করতে পারি ? তিনি আমাকে বললেন প্রচুর পরিমাণে ভালো গান শুনতে হবে। ভালো গান শুনলে কান ভালো হয়। তখন আমি তাকে দিয়ে দুটো ক্যাসেট কেনাই। যার ভিতরে যেটা আমার সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে সেটা হল অনুপ জালোটার ‘মন জপো নাম’। এই ক্যাসেটের গান গুলো আমার এত ভালো লেগেছে যা আসলে বলে বোঝানো সম্ভব না। তখনও আমি জানতাম না যে এই গানগুলো নজরুল সঙ্গীত। গানের গুরু একদিন আমাকে বললেন যে এইগুলো হল নজরুল সঙ্গীত। তখন আমি জানলাম এবং নজরুলের প্রতি আরও অনেক বেশি ভালোবাসা জন্মে গেল। সেই থেকেই নজরুলের প্রতি আমার এত টান।
আধুনিক গান সম্পর্কে তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় তখন পূজা পার্বনে বেশ কিছু পুরোনো দিনের গান বাজাতো। সেই গানগুলো মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করতাম… শুনতে শুনতে আমার ভিতর আধুনিক গানের প্রতিও আলাদা এক রকম ভালোবাসা সৃষ্টি হয়ে যায়! আর সেই থেকেই আধুনিক গান শুরু করি এবং আধুনিক গানেও আমি আমার জীবনের অংশ হিসেবে বেছে নেই।
ভক্ত-শ্রোতা সম্পর্কে তিনি জানান, আসলে ভক্ত-শ্রোতাদের ভালোবাসাতেই একজন সঙ্গীতশিল্পী ভালো গায়কে পরিণত হতে পারে। তিনি বলেন, যখন কোন শ্রোতা ভক্ত আমাকে বলেন যে, আপনার গান অনেক ভালো লেগেছে, অনেক আনন্দ পেয়েছি…তখন নিজের কাছেও ভালো লাগে এবং তাদের প্রতিও আমার ভালোবাসা এবং আমার যে একটা শুধরানোর জায়গা থেকে যায় সেটার প্রতিও দায়িত্ব বেড়ে যায়, যেন আমাকে আরও ভালো করতে হবে।
বর্তমানে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে’ শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। পাশাপাশি ‘ছায়ানটে’ তিনি ক্লাস নিয়ে থাকেন এবং ‘ সকল ভক্ত-শ্রোতার প্রতি ভালোবাসা জানান এবং তিনিও যেন সকলের ভালোবাসায় জীবন অতিবাহিত করতে পারেন সবার প্রতি এই তার শুভবাণী।
সঞ্জয় কবিরাজের ভক্ত-শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে আজ রাত ৯টায় সঙ্গীতাঙ্গন কর্তৃক একক সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। সবাইকে আহ্বান ও আমন্ত্রণ জানিয়ে শিল্পী সঞ্জয় কবিরাজের জন্য ও তার ভক্ত-শ্রোতাদের জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে। ভিডিওটি লাইভ দেখতে এই পেইজের সাথে থাকুন, এখানে লাইভ প্রচারিত হবে অথবা আপনার ফেইসবুকে Shangeetangon সার্চ করে আমাদের পেইজের সাথে থাকুন অথবা নীচের লিংকটিতে কপি করুন। ধন্যবাদ