‘একুশে ফেব্রুয়ারি,
আমি কি ভুলিতে পারি।
ছেলে হারা শত মায়ের অশ্রু
ঘেরা এ ফেব্রুয়ারি
আমি কি ভুলিতে পারি’
কিছু মানুষ চির অম্লান ; সোনালি স্মৃতিময়।
কিছু মানুষের সৃষ্টি তাকে প্রজম্ম থেকে প্রজন্মের মাঝে বাঁচিয়ে রাখে। শহীদ আলতাফ মাহমুদ তেমনি একজন মানুষ যার নাম এই বাঙ্গালীর হৃদয়ে মিশে আছে। আলতাফ মাহমুদ ১৯৩৩ সালের ২৩শে ডিসেম্বর বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার পাতারচর গ্রামে আলতাফ মাহমুদ জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪৮ সালে বরিশাল জিলা স্কুল থেকে তিনি মেট্রিকুলেশন পরীক্ষা পাশ করে বিএম কলেজে ভর্তি হন। পরে তিনি চিত্রকলা শিখতে ক্যালকাটা আর্টস স্কুলে গমন করেন। বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থাতেই মাহমুদ গান গাইতে শুরু করেন। তিনি প্রথমে প্রসিদ্ধ ভায়োলিনবাদক সুরেন রায়ের কাছে সঙ্গীতে তালিম নেন। এছাড়া তিনি গণসঙ্গীত গাইতে শিখেছিলেন যা সেই সময় তাঁকে অসম্ভব জনপ্রিয়তা ও বিপুল খ্যাতি এনে দেয়।
১৯৭১ সালের ৩০শে আগস্ট বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী আলতাফ মাহমুদকে ঢাকার আউটার সার্কুলার রোডের বাসা থেকে চোখ বাঁধা অবস্থায় কোথাও নিয়ে যায়। পরবর্তীতে তাঁর আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ১৯৫০ সালের দিকে তিনি ভাষা আন্দোলনের পক্ষে সমর্থন আদায়ের জন্য বিভিন্ন জায়গায় গণসঙ্গীত গাইতেন। গান গাওয়ার মাধ্যমে মাহমুদ এই আন্দোলনকে সর্বদাই সমর্থন যুগিয়েছেন। ২৩শে ফেব্রুয়ারি, ১৯৫২ সালে আবদুল গাফফার চৌধুরী রচিত আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো শিরোনামের আলোড়ন সৃষ্টিকারী গানটিতে সুর সংযোজন করে খ্যাতির শীর্ষে আরোহণ করেন। গানটির প্রথম সুরকার আব্দুল লতিফ হলেও পরবর্তীতে আলতাফ মাহমুদের সুরটিই গৃহীত হয়। এই সুরটি ১৯৬৯ সালে জহির রায়হান তাঁর চলচ্চিত্র জীবন থেকে নেয়া-তে ব্যবহার করেন।
১৯৭১ সালে আলতাফ মাহমুদ স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে তাঁর বাসায় গোপন ক্যাম্প স্থাপন করেন। কিন্তু ক্যাম্পের কথা ফাঁস হয়ে গেলে ১৯৭১ সালের ৩০শে আগস্ট পাকিস্তানি বাহিনী তাঁকে আটক করে। তাঁর ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়। তাঁর বাসা থেকে আরো অনেক গেরিলা যোদ্ধা আটক হয়। এদের অনেকের সাথে তিনিও চিরতরে হারিয়ে গেছেন। পরবর্তীকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে তাঁর দেশাত্মবোধক গান প্রচারিত হতে থাকে যা অগণিত মুক্তিযোদ্ধাকে অণুপ্রারিত করেছিল।
সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে শহীদ আলতাফ মাহমুদ এর প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি।