– মোশারফ হোসেন মুন্না।
কিছু মানুষ পৃথিবীতে আসে শুধু তার কৃতিত্ব্যের স্বাক্ষর রেখে যেতে। যা হবে গোটা পৃথিবীর জন্য শিক্ষা অথবা আদর্শ।
এমনই একজন হলো মাইকেল জ্যাকসন। যার গানে ছিল বাস্তবতা। যার গান ছিল আদর্শ। চেতনার অবারিত প্রান্তর সীমানাবিহীন কষ্টের বেড়ী থেকে মুক্তির প্রতিবাদ। কিন্তু প্রতিবাদী রশি যার যেখানে ছিড়ে যায় সেখানেই মানুষ থেমে যায় ঠিক জ্যাকসনের মতো। ২০০৯ সালের ২৫ জুন চলে গেছেন মৃত্যুর ওপারে। তবে তার গানগুলো শ্রোতাদের মনে তাকে চিরজীবী করে রেখেছে। ‘কিং অফ পপ’ – মাইকেল জ্যাকসন এর ৬০তম জন্মবার্ষিকীতে চলুন দেখে নেওয়া যাক বিভিন্ন টপচার্ট এবং ওয়েবসাইট অনুযায়ী তার সেরা ১০ গানের তালিকা।
১. ১৯৮৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘ব্যাড’ এ্যালবামের টাইটেল সং এটি। গানটির পেছনে রয়েছে একটি করুণ ইতিহাস। প্রাইভেট বোর্ডিং স্কুল পড়ুয়া একটি ছেলেকে ঈর্ষার বশে হত্যা করার একটি সত্য ঘটনার উপর গানটি লেখা হয়। ‘ব্যাড’ গানটি মুক্তির পর দুসপ্তাহ ধরে হট হান্ড্রেড তালিকার শীর্ষস্থান দখলে রাখে এবং প্রায় ১৪ সপ্তাহ তালিকায় অবস্থান করে।
২. আর্থ সং এ্যালবাম – হিস্টোরি: পাস্ট, প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার, বুক ওয়ান।
পরিবেশ সচেতনতা এবং প্রাণী অধিকার রক্ষা নিয়ে গাওয়া জ্যাকসনের এই গানটি তুলে ধরে ক্রমাগত জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ভবিষ্যত পৃথিবীর বিপর্যয়। সচেতনতামূলক এই গানটি এখনও ভক্তদের কাছে অনেক জনপ্রিয়। ব্লুজ, গসপেল এবং অপেরা ধারার সমন্বয়ে গাওয়া এই গানটি বিভিন্ন চ্যারিটি শো এবং কনসার্টে অন্য শিল্পীরাও গেয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন আঙ্গিকে।
৩. ম্যান ইন দ্য মিরর –
১৯৮৮ সালে মুক্তি পাওয়া সিঙ্গেল ‘ম্যান ইন দ্য মিরর’ প্রথম দিনেই দখল করে হট হান্ড্রেডের শীর্ষ স্থানটি। জ্যাকসনই ছিলেন তখন একমাত্র শিল্পী যার এ্যালবামের সব কয়টি গান বিলবোর্ডের টপ চার্টে অবস্থান করেছে। জ্যাকসনের মৃত্যুর পর গানটি ২০০৯-এর ইউকে টপ চার্টে ১১ নম্বর স্থান দখল করে এবং কয়েকদিন পরে দ্বিতীয় স্থানে চলে আসে।
৪. হিল দ্য ওয়ার্ল্ড এ্যালবাম – ডেঞ্জারাস।
শিশুদের প্রতি অনাচার এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের দুর্ভোগ তুলে ধরে জ্যাকসনের এই গানটি। ২০০১ সালে ভক্তদের সঙ্গে অনলাইন আড্ডায় জ্যাকসন তার করে যাওয়া কাজগুলোর মধ্যে সেরা হিসেবে উল্লেখ করেন এই গানটিকে। নিজের এই গানটি নিয়ে অনেকবারই গর্ব করেছেন বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে। গানটির মিউজিক ভিডিওটিও বেশ প্রভাব ফেলেছিল বিশ্বজুড়েই।
৫. দ্যা ডোন্ট রিয়েলি কেয়ার অ্যাবাউট আস এ্যালবাম – হিস্টরি: পাস্ট, প্রেজেন্ট অ্যান্ড ফিউচার, বুক ওয়ান। জ্যাকসনের এই গানটির চেয়ে বেশি আলোচিত হয় গানটির মিউজিক ভিডিও। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে ধারণ করা গানটি যেমন জনপ্রিয়তা পেয়েছে তেমনি বিতর্কিতও হয়েছে। জ্যাকসনকে গানের কথা কয়েকবার পরিবর্তনও করতে হয়েছিল। হট হান্ড্রেডে ৩০ নম্বর জায়গা দখল করেছিল গানটি।
৬. ব্ল্যাক অর ওয়াইট –
১৯৯১ সালে সিঙ্গেল হিসেবে মুক্তি পাওয়ার পর গানটি নিয়ে আলোচনা হয়েছে প্রচুর। রকধর্মী এই গানটিতে গিটার বাজিয়েছেন সাবেক ‘গানস অ্যান্ড রোজেস’ সদস্য গিটারিস্ট স্ল্যাশ। মুক্তির পরপরই শীর্ষস্থানে চলে আসার পর প্রায় সাত সপ্তাহ এটি বিলবোর্ড হট হান্ড্রেডে এ অবস্থান করে। এর ভিন্নধর্মী মিউজিক ভিডিওটিও বেশ আলোচিত হয়েছিল।
৭. থ্রিলার এ্যালবাম- থ্রিলার
নাচের ভঙ্গিতেও যে হাঁড়ে ভয়ের কাঁপন ধরিয়ে দেওয়া যায় তার প্রমান এই গানটি। ১৩ মিনিটের মিউজিক ভিডিও ‘থ্রিলার’ জ্যাকসনের সেরা সৃষ্টিগুলোর মধ্যে অন্যতম। গান এবং মিউজিক ভিডিও জনপ্রিয়তা পেয়েছে সমানতালে। হট হান্ড্রেডে ১৪ সপ্তাহ ধরে অবস্থান করা গানটি তুলে আনে রেকর্ড গড়া সাফল্য।
৮. বিট ইট এ্যালবাম- থ্রিলার
‘থ্রিলার’ গানটির জনপ্রিয়তার রেশ কাটতে না কাটতেই বিশ্বজুড়ে টপচার্টগুলোর শীর্ষে আসন গেড়ে বসে এ্যালবামটির রক এন্ড রোল ধাঁচের গান ‘বিট ইট’। দুর্দান্ত কথার সঙ্গে গানটিতে ছিল এডি ভ্যান হ্যালেনের অসাধারণ গিটার মূর্ছনা। পপ ঘরানা থেকে বেরিয়ে এসে রক ধারা নিয়ে কাজ করে হতাশ করেননি জ্যাকসন। পরবর্তীতে বিভিন্ন গিটারিস্ট এবং সঙ্গীতশিল্পীরাও জ্যাকসনকে ট্রিবিউট করে গানটি কভার করেছেন।
৯. স্মুথ ক্রিমিনাল এ্যালবাম – ব্যাড
‘ব্যাড’ এ্যালবামের জনপ্রিয় আরেকটি গান ‘স্মুথ ক্রিমিনাল’-এর মাধ্যমে জ্যাকসন ভক্তরা খুঁজে পান উন্মাদনার আরেকটি উপকরণ। গানটির মিউজিক ভিডিওতে তার সিগনেচার মুনওয়াক নাচের ভঙ্গি মুগ্ধ করে সকলকেই। আর গানটিও দখল করে নেয় হট হান্ড্রেডের সপ্তম স্থানটি।
১০. বিলি জিন এ্যালবাম- থ্রিলার
জ্যাকসনের মুনওয়াকিং এর পারদর্শিতা প্রথম দেখতে পাওয়া যায় এই গানটির মধ্যেই। থ্রিলার এ্যালবামের আরও একটি হিট হিসেবে এটিও জায়গা করে নেয় হট হান্ড্রেডের শীর্ষ স্থানটি। আর সেটি চার্টে অবস্থান করে প্রায় ২৪ সপ্তাহ। পপ, জ্যাজ এবং ফাঙ্ক ঘরানার গানকে আরও জনপ্রিয় করে তোলার প্রয়াস শুরু হয়েছিল এই গানের মাধ্যমেই।
কিন্তু এ কি খবর এলো।
কিংবদন্তি পপ তারকা মাইকেল জ্যাকসনের ৩০ বছরের রেকর্ড ভেঙে দিয়েছে বিশ্ব বিখ্যাত ব্যান্ড ‘ঈগলস’। মার্কিন রেকর্ড কোম্পানি সংস্থার চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী ক্যারি শারম্যান সম্প্রতি এই তথ্য প্রকাশ করে।
বিশ্বের সর্বাধিক বিক্রিত গানের এ্যালবামের মধ্যে ‘ঈগলস’ এর ‘দ্য গ্রেটেস্ট হিটস’ বর্তমানে এক নম্বরে রয়েছে। ১৯৭১ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত ‘ঈগলস’ এর বিখ্যাত গানগুলো নিয়ে সাজানো হয়েছে এ্যালবামটি। ১৯৭৬ সালে প্রকাশিত হওয়া এ্যালবামটি এ পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী ৩৮ মিলিয়ন কপি বিক্রি হয়েছে।
এর আগে এই রেকর্ড ছিল ‘কিং অব পপ’ খ্যাত মাইকেল জ্যাকসনের দখলে। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত হওয়া মাইকেলের ‘থ্রিলার’ বিশ্বব্যাপি বিক্রি হয়েছে ৩৩ মিলিয়ন কপি। থ্রিলারের ঠিক পরেই রয়েছে ‘ঈগলস’ এর আরেক জনপ্রিয় এ্যালবাম ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’। এই এ্যালবামটিও ১৯৭৬ সালে প্রকাশ করে ঈগলস। বিশ্বব্যাপী ২৬ মিলিয়ন কপি বিক্রি হওয়া ‘হোটেল ক্যালিফোর্নিয়া’ সর্বাধিক বিক্রিত এ্যালবামের মধ্যে তিন নম্বরে রয়েছে।
প্রায় ৪৮ বছর ধরে সাফল্যের সঙ্গে গান করছে ‘ঈগলস’। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ব্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও প্রধান গায়ক গ্লেন ফ্রে মৃত্যুবরণ করেন। বর্তমানে দলটির প্রধান গায়ক হিসেবে কনসার্ট ও রেকর্ডিং সেশনে কাজ করছেন আরেক পুরনো সদস্য ডন হ্যানলি।
এছাড়া গ্লেন ফ্রে’র দুই সন্তান ডেকন ফ্রে এবং ভিনিস গিলও ব্যন্ডটির সঙ্গে বিভিন্ন কনসার্টে অংশ নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত ‘ঈগলস’ এর ৭টি এ্যালবাম প্রকাশিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী তাদের এ্যালবাম বিক্রি হয় ১৫০ মিলিয়ন কপি। রক ধাঁচের সঙ্গীতে অসামান্য অবদান স্বরূপ ১৯৯৮ সালে ‘রক অ্যান্ড রোল হল অব ফেম’-এ জায়গা করে নেয় ব্যান্ডটি। সূত্র: ভ্যারাইটি ডট কম।