– মোশারফ হোসেন মুন্না।
সঙ্গীতের সুরে নিজেদের বিমোহিত রাখতে পছন্দ করেন না, এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া সত্যিই বেশ কঠিন। আর এদেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে রক মিউজিক দারুণ এক উন্মাদনার নাম। যদিও পশ্চিমা বিশ্বের মিউজিক ইন্ডাষ্ট্রিতে সেই বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময় থেকেই রক মিউজিক রাজ করে আসছে। তবে পৃথিবীর প্রতিটি কোণায়, প্রতিটি বিষয়ে যেখানে রহস্য লুকিয়ে আছে, রক মিউজিক তা থেকে কেনই বা বাদ যাবে! রক এন্ড রোলের ইতিহাসে সবচেয়ে করুণ এবং কূলকিনারা বিহীন রহস্যের নাম ‘ক্লাব টুয়েন্টি-সেভেন’, যা ‘দ্য ২৭ ক্লাব’ নামেও পরিচিত। ১৯৯৪ সালে মাত্র ২৭ বছর বয়সে আত্মহত্যা করেন তামাম দুনিয়াব্যাপী প্রসিদ্ধ ব্যান্ড নিরভানার গিটারিস্ট কার্ট কোবেইন। এরপর রক মিউজিকের সঙ্গে জড়িত সবার মধ্যে বেশ হইচই পড়ে যায়। এ হইচইয়ের পেছনের কারণ কেবল কোবেইনের মৃত্যুই নয়। ভক্তদের খুঁজে বের করতে দেরি হলো না, কোবেইনের মতোই ২৭ বছর বয়সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন বিখ্যাত ব্যান্ড দ্য ডোরসের ভোকালিস্ট জিম মরিসন, রক মিউজিকের কিংবদন্তি গায়িকা জ্যানিস জপলিন, রোলিং স্টোনের প্রতিষ্ঠাতা ও দলনেতা ব্রায়ান জোনস। এছাড়াও বিংশ শতাব্দীর সবচেয়ে প্রভাবশালী গিটারিস্টদের মধ্যে অন্যতম জিমি হেনড্রিক্সসহ অনেক রকস্টার। এদের মধ্যে রক মিউজিকের উল্লেখিত চারজন দিকপালই সত্তরের দশকের প্রথম দিকে মৃত্যুবরণ করেন। এদিকে একবিংশ শতাব্দীতে এসেও থামেনি ২৭ বছর বয়সী রকস্টারদের মৃত্যুর মিছিল। ২০১১ সালের ২৩ জুলাই ২৭ বছর বয়সে অ্যালকোহলের বিষক্রিয়ার কারণে মৃত্যুবরণ করেন ব্রিটিশ গায়িকা এমি ওয়াইনহাউস। তার এ মৃত্যুতে ক্লাব টুয়েন্টি-সেভেন আরও দলভাড়ী হয় এবং ক্লাব ২৭কে ঘিরে কল্পকাহিনী আরও প্রসিদ্ধ হয়। এতক্ষণে নিশ্চয়ই বলাই বাহুল্য, দ্য ২৭ ক্লাব আসলে ২৭ বছর বয়সে অপ্রত্যাশিতভাবে মৃত্যুবরণকারী জনপ্রিয় মিউজিশিয়ানদের নিয়ে গঠিত। এদের অনেকেরই মৃত্যু হয়েছে মাদকের ওভারডোজের কারণে; আবার অনেকেই মারা গিয়েছেন দুর্ঘটনায়। সব মিলিয়ে ইতিহাসে এ পর্যন্ত মাত্র ২৭ বছর বয়সে খামখেয়ালী স্বভাবের কারণে করুণ মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছেন মিউজিক জগতের মোট ২০ জন তারকা। কেউ কেউ এই ক্লাবটিকে বলে থাকেন অভিশপ্ত। আবার কারো কারো মতে এটি স্রেফ একটি কাকতালীয় ব্যাপার। কিন্তু ক্লাব ২৭ এর সব সদস্যের একটি জায়গায় রয়েছে অদ্ভুত মিল। তাতে করে মনে হয়,
এই কাকতালীয়তার পেছনে রয়েছে কোন অশুভ আধ্যাত্মিক শক্তির হাত! ক্লাব ২৭ এর প্রত্যেক সদস্যের জীবনের সমাপ্তিটা যেন হয়েছিল একই বিন্দুতে। প্রত্যেকের জীবনের গল্পটাও ছিল বেশ করুণ। অসম্ভব খ্যাতিমান সেই একেকজন শিল্পীর জীবনাবসান ঘটেছিল ভয়ানক এক অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে। তাদের জীবনকে ঘিরে ধরেছিল মাদকাসক্তি, হতাশা ও ব্যথার গ্লানি। তাদের প্রত্যেকেই খ্যাতির চূড়ায় উঠে বিগড়ে গিয়েছিলেন।
২৭ কতটা অশুভ ?। ১৯৬৯ থেকে শুরু করে ১৯৭১ সালের মধ্যে বেশ কয়েকজন জনপ্রিয় মিউজিশিয়ান ২৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করায় অনেকের মধ্যেই ধারণা জন্মে গিয়েছিলে যে, খ্যাতিমান সঙ্গীত তারকাদের মধ্যে ২৭ বছর বয়সে মারা যাওয়ার একটা প্রবণতা রয়েছে। এখানে উল্লেখ্য, ক্লাব ২৭ এ কিছু খ্যাতিমান অভিনেতা ও অ্যাথলেটদেরও জায়গা দিয়ে থাকেন অনেকে। তবে যাই হোক, পরিসংখ্যানবিদরা অনেক চেষ্টা করেও খ্যাতিমান তারকাদের ২৭ বছর বয়সে মারা যাওয়ার পেছনে কোনো সুনির্দিষ্ট প্যাটার্ন আবিষ্কার করতে পারেননি। ২০১১ সালে বিএমজে তাদের এক গবেষণায় দেখায়, খ্যাতির চূড়ায় উঠে বিগড়ে গিয়ে খামখেয়ালি স্বভাবে জীবনাবসান হওয়া তারকাদের মধ্যে শুধু ২৭ নয়, ২৫ ও ৩২ বছর বয়সে মারা যাওয়ার হারও অত্যাধিক। বিএমজে’র মতে, খ্যাতি অনেক সময়ই অল্প বয়সে মৃত্যু ডেকে আনে। তবে সেটা যে ২৭ এই হবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। কিন্তু মিউজিক ইন্ডাস্ট্রিতে দ্যা ২৭ ক্লাব আলাদা গুরুত্ব বহন করে আছে। বিশ্বজুড়ে নানা মিউজিক ম্যাগাজিন, জার্নাল ও পত্রিকায় বারবার ক্লাব টুয়েন্টিসেভেনের কথা নানাভাবে এসেছে। এই ক্লাবের স্মরণে অনুষ্ঠিত হয়েছে অনেক শিল্প প্রদর্শন। অনেক উপন্যাস, চলচ্চিত্র ও মঞ্চনাটকের মূল প্রতিপাদ্য রচিত হয়েছে ক্লাব ২৭কে ঘিরে। এত দ্রুত সঙ্গীত তারকাদের মৃত্যু নিয়ে অনেক তত্ত্ব দেয়া হয়েছে। এদের মৃত্যু একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কিত কিনা তাও খতিয়ে দেখতে চেয়েছেন বহু মানুষ। বিএমজের গবেষণাপত্র প্রকাশের চার বছর আগে কার্ট কোবেইন ও জিমি হেনড্রিক্সের জীবনী লেখক চার্লস আর ক্রস বলেন, যেকোনো দিক থেকেই দেখুন না কেন যে পরিমাণ মিউজিশিয়ান ২৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন সে সংখ্যাটি সত্যিই চিন্তা উদ্রেককারী। মানুষ যেকোনো বয়সেই মারা যেতে পারে, তবে মিউজিশিয়ানদের জন্য ২৭ সংখ্যাটির গ্রাফটা অনেক উঁচুতে। সঙ্গীতাঙ্গনের সাথে থাকুন। ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।