– কবি ও কথাসাহিত্যিক রহমান ফাহমিদা।
আদিযুগ থেকেই বিভিন্ন উৎস নিয়ে সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক ও সংস্কৃতি অঙ্গনে নানাবিধ দাবি দাওয়া পেশ হয়ে আসছে কারণ এই সকল দাবি দাওয়ার মূলে আছে -অরাজকতা, বিশৃঙ্খলা এবং জোর যার মুল্লুক তার পদ্ধতির মত কারণগুলো। কিছু ভণ্ড মানুষ সৎ এবং সৃষ্টিশীল মানুষদের অহরহ ঠকিয়ে যাচ্ছে বা গেছে। অথচ এই সকল সৃষ্টিশীল মানুষ দিনের পর দিন, রাতের পর রাত তাঁদের সৃষ্টিশীল কাজের জন্য নিজের দিকে না তাকিয়ে, সংসারের ভালোমন্দের খোঁজ না নিয়ে পৃথিবীর মানুষের জন্য নিজের মেধা ও মননশীলতাকে কাছে লাগিয়ে যাচ্ছে, তাঁর কাজকে ভালোবেসে। অথচ তাঁর কাজের কোনো মূল্যায়ন বা সম্মানী পাচ্ছে না! এখানেই মানুষে মানুষে ভেদাভেদ। একজন শুধু দিয়েই যাচ্ছেন এবং আরেকজন চোখ কান বুঝে তা নিয়েই যাচ্ছেন। অবাক পৃথিবীর, অবাক সব মানুষ! তবে এর ব্যতিক্রমও আছে। সমাজের কিছু কিছু বিবেকবান মানুষ এইসকল বিবেকহীন মানুষের কার্যকলাপের প্রতিবাদে একসময় সোচ্চার হয়ে উঠে এবং মননশীল চিন্তাধারার সৃষ্টিশীল মানুষগুলোকে তাঁদের ন্যায্য সম্মানী ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বিভিন্ন সংগঠন গঠন করে যথাযথ জায়গায় দাবি-দাওয়া পেশ করে তা আদায় করার জন্য সচেষ্ট হন। বর্তমান প্রেক্ষাপটে সঙ্গীতাঙ্গনের দিকে তাকালে দেখা যায়, সঙ্গীতের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ভয়াবহ অরাজকতা এবং দুর্নীতি বিরাজ করছে। অথচ এই অরাজকতার বিরুদ্ধে স্বাধীনতার পরবর্তী ঊনচল্লিশ বছরেও গড়ে উঠেনি কোনো সংগঠন। সঙ্গীতাঙ্গনের এই অরাজকতা ও দুর্নীতি বন্ধ করার জন্য আজ সোচ্চার হয়েছেন সঙ্গীতাঙ্গনেরই কতিপয় সিনিয়র জুনিয়র গীতিকবি, সুরকার ও শিল্পীবৃন্দ এবং গড়ে তুলছেন ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সংগঠন। সেই রকমই একটি সংগঠন করে তুলেছেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট গীতিকবিগণ। সংগঠনটির নাম – গীতিকবি সংঘ, বাংলাদেশ।
‘গীতিকবি সংঘ, বাংলাদেশ’ -সংগঠনটির সমন্বয় কমিটির প্রধান জনপ্রিয় গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গি ভাইয়ের কাছে এই সংগঠনটির সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন –
এই সংগঠনটির সাথে সিনিয়র জুনিয়র অনেকেই জড়িত আছেন। সিনিয়রদের মধ্যে গীতিকার গাজী মাজহারুল আনোয়ার এবং গীতিকার রফিকুজ্জামানসহ আমার সাথে আরও কয়েকজন আছেন। আমাকে এই সমন্বয় কমিটির প্রধান করে মোট ১২জন মিলে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়, এখানে আগের কোরামেরও কয়েকজন আছেন। এই কমিটি কয়েকদফা আলোচনার পর ‘গীতিকবি সংঘ,বাংলাদেশ’ গঠন করা হয়। আমাদের গঠনতন্ত্র পাশ হয়ে গেছে। তিনমাসের মধ্যে সদস্য সংগ্রহ করে, সদস্যদের ফরম পূরন করবো। সবকিছু করে আমরা তিনমাসের মধ্যে একটি কার্যনির্বাহ কমিটি গঠন করব। ইতিমধ্যে আমরা কিছু কাজ করেছি। অনলাইনে মতবিনিময় সভা হয়েছে, সেখানে গীতিকারদের পক্ষে দাবি-দাওয়া নিয়ে কথা হয়েছে। সে মতবিনিময় সভায় গীতিকার মাজহারুল আনোয়ার, গীতিকার রফিকুজ্জামান, গীতিকার বদিউজ্জামান এবং আমিসহ আরও ১১জন সদস্য উপস্থিত ছিলেন। এ মাসের ১৯ তারিখে আমাদের সবার আলোচনার প্রেক্ষিতে দাবি-দাওয়াগুলো পেশ করেছি। তারপর ২৩ আগস্ট দাবি-দাওয়াগুলো নিয়ে আমাদের প্রতিনিধি পাঠিয়েছি, কপিরাইট আইন সংশোধন বাংলাদেশ কপিরাইট অফিসে। ১০টি প্রস্তাব দিয়ে চিঠি পাঠানো হয়েছে ‘গীতিকবি সংঘ, বাংলাদেশ’ -এর পক্ষ হতে। গত রবিবার ২৩ আগস্ট সন্ধায় কপিরাইট রেজিস্ট্রার জাফর রাজা চৌধুরীর সঙ্গে গীতিকবি সংঘ সমন্বয় কমিটির চার সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল সৌজন্য সাক্ষাৎ করে এই চিঠি হস্তান্তর করেন। প্রতিনিধিদলে ছিলেন গীতিকবি হাসান মতিউর রহমান, আসিফ ইকবাল, কবির বকুল ও জুলফিকার রাসেল।
জনপ্রিয় গীতিকবি শহীদ মাহমুদ জঙ্গি ভাই আরও বলেন –
আমাদের ‘গীতিকবি সংঘ, বাংলাদেশ’ গীতিকবিদের নৈতিক ও আর্থিক অধিকারের ন্যায্য দাবিকে সামনে রেখে বাংলা সঙ্গীতের সৃজনশীল উৎকর্ষের জন্যই এই সংগঠন নিরলসভাবে কাজ করে যাবে। এতদিন তো সঙ্গীতাঙ্গনে কোনো সংগঠন ছিল না! এই প্রথম গানের লোকদের সংগঠন হচ্ছে। আমাদের গীতিকবি সংগঠনের মত সুরকারদেরও সংগঠন তৈরি হচ্ছে এমনকি কণ্ঠশিল্পীদেরও সংগঠন হচ্ছে। এই তিনটি সংগঠন যখন একত্রিত হবে তখন সঙ্গীতাঙ্গনের গুণগতমানের এক বিরাট পরিবর্তন আসবে। বাকী সংগঠনগুলো হয়ে গেলে আমরা একত্রিত হয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করব। আমি আশা করছি যে, আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সঙ্গীতাঙ্গনের যে অরাজকতা আছে,সেটা দুর করার পদক্ষেপ নিতে পারবো।
ভাইয়া, দোয়া করছি আপনারা যে মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তা যেন সফলকাম হয়। সঙ্গীত জগতের সবাই যেন, তাদের ন্যায্য অধিকার ও সম্মানীটুকু পায় আপনাদের মাধ্যমে।
ভাইয়া, সঙ্গীতের বাইরে আরেকটি প্রসঙ্গ জানতে চাইছি তা হল, এই করোনাকালীন সময়ে আপনি কি ধরণের সাবধানতা অবলম্বন করছেন ?
এই সময়ে যে ধরণের সাবধানতা অবলম্বন করা দরকার সবইতো করছি। তারপরেও মাঝে মাঝে ভুল হয়ে যায়! যেমন আজকে মাস্ক ছাড়াই ছাদে গিয়েছিলাম একটু ফ্রেস বাতাসে হাঁটাহাঁটি করার জন্য, কিন্তু ছাদে গিয়ে দেখলাম একজন লোক অনবরত কাশছে! তা দেখে তাড়াতাড়ি ছাদ থেকে চলে এলাম। হা হা হা।
হা হা হা সাবধানে থাকবেন ভাইয়া, ভুল হলে চলবে না! সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, এই শুভকামনা করছি। সঙ্গীতাঙ্গন এর পক্ষ থেকে আপনার এবং আপনাদের সংগঠনের জন্য রইল, অনেক অনেক শুভকামনা।