asd
Wednesday, October 30, 2024

খেয়াল এর পরিচিতি…

– মোঃ মোশারফ হোসেন মুন্না।

খেয়াল এক ধরনের উচ্চাঙ্গসঙ্গীত। এটি উচ্চাঙ্গসঙ্গীতের দ্বিতীয় শাখা; প্রথম শাখা ধ্রুপদের চেয়ে এটি লঘু এবং এতে কল্পনা অনুযায়ী নানাবিধ অলঙ্কার প্রয়োগ ও তানবিস্তার দ্বারা সৌন্দর্য রচনার সুযোগ আছে। খেয়াল ধ্রুপদের মতো কঠোর নিয়মশৃঙ্খলে আবদ্ধ নয়। খেয়ালের উৎপত্তি সম্পর্কে বিভিন্ন মতবাদ প্রচলিত আছে; তবে যে মতবাদটি সর্বাধিক গ্রহণযোগ্য তা হলো: কাওয়ালি থেকে খেয়ালের উৎপত্তি হয়েছে। দিল্লির পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের কাওয়াল নামক একটি যাযাবর সম্প্রদায় সাধারণত ভক্তিমূলক যে গান গাইত তার নাম কাওয়ালি। এ কাওয়ালি থেকেই কালক্রমে খেয়াল গানের উৎপত্তি হয়। বিখ্যাত সঙ্গীতজ্ঞ আমীর খসরু কাওয়ালি গানের সংস্কার করে একে একটি প্রথাবদ্ধ রূপদানের মাধ্যমে খেয়াল গানের সূচনা করেন।

খেয়াল দু’প্রকার – ছোট খেয়াল ও বড় খেয়াল। আমীর খসরু প্রবর্তিত খেয়ালই ছোট খেয়াল এবং পনেরো শতকে জৌনপুরের সুলতান হুসেন শাহ্ শর্কী যে খেয়াল প্রবর্তন করেন তা বড় খেয়াল নামে পরিচিত। উপরিউক্ত দুপ্রকার খেয়ালেই দুটি বিভাগ থাকে–স্থায়ী ও অন্তরা; আবার প্রতিটি বিভাগে থাকে দুটি বা তিনটি করে চরণ। ছোট খেয়াল চপল গতির, তাই এর রচনা খুব সংক্ষিপ্ত। এর স্থায়ী ও অন্তরা সাধারণত দুচরণে রচিত। এ গানের বন্দিশ সাধারণত ত্রিতাল বা দ্রুত একতালে বাঁধা হয়। ছোট খেয়ালে বিস্তারের সুযোগ নেই। প্রথমে মধ্যলয়ে, পরে দ্রুতলয়ে গান শেষ করা হয়। গানকে ছোট-বড় তান, বোলতান, সরগম ইত্যাদির মাধ্যমে অলঙ্কৃত করা হয়। বড় খেয়াল বিলম্বিত লয়ের। এতে বিলম্বিত লয়ে বিশেষ প্রণালীতে আলাপ করা হয়, যাকে বলা হয় বিস্তার। বড় খেয়ালের সঙ্গে আ-কার বা বাণী যোগ করে মন্থর গতিতে এর বিস্তার ঘটানো হয়। এতে স্থায়ী ও অন্তরা উভয়েরই বিস্তার হয়। বিস্তার হওয়ার পর চারগুণ বা আটগুণ লয়ে অধিকাংশ তান করা হয়। এতে বিভিন্ন প্রকার তান ও বোলতান করারও নিয়ম আছে। বড় খেয়ালে কণ্ বা স্পর্শস্বরের প্রয়োগ দ্বারা সৌন্দর্য বৃদ্ধি করা হয়। খেয়াল গানের চরম উৎকর্ষ সাধিত হয় আঠারো শতকে সম্রাট মোহাম্মদ শাহের দরবারের প্রসিদ্ধ বীণকার নেয়ামৎ খাঁর (সদারঙ্গ) হাতে। তিনি অজস্র খেয়াল গান রচনা করেন এবং খেয়ালে নানা প্রকার বিস্তার ও বোলতান প্রয়োগ করে নতুনরূপে খেয়ালের প্রচলন করেন। তিনি তাঁর শিষ্যদের যে খেয়ালরীতি শিক্ষা দেন, শিষ্যপরম্পরায় তা-ই পরবর্তীকালে বিস্তার লাভ করে। খেয়াল গানের উন্নতির ক্ষেত্রে তাঁর পুত্র ফিরোজ খাঁর (অদারঙ্গ) অবদানও অসামান্য। খেয়াল এক চমৎকার সঙ্গীতশৈলী। এর বিষয় সাধারণত শৃঙ্গাররসাত্মক এবং এর প্রকাশ ঘটে সঙ্গীতের শিল্পসৌন্দর্যের মাধ্যমে। খেয়ালে ভক্তিরসেরও প্রাধান্য থাকে। হিন্দি ও উর্দু ভাষায় খেয়ালগুলি রচিত। খেয়াল গানের সঙ্গে তালযন্ত্র হিসেবে তবলা সঙ্গত করা হয়। একতাল, ত্রিতাল, আড়াচৌতাল, ঝুমরা ইত্যাদি তাল খেয়ালের সঙ্গে বাজানো হয়। সুন্দর তাল ও সঠিক নিয়ম অনুযায়ী গীত হলে খেয়াল শ্রোতার মনে অপূর্ব আনন্দ সঞ্চার করে। তাই সঙ্গীতজগতে খেয়াল বেশ জনপ্রিয় এবং অধিক প্রচলিত একটি গায়ন পদ্ধতি। বর্তমানে রাগসঙ্গীতের শাখাসমূহের মধ্যে খেয়ালের স্থান সর্বাগ্রে। বাংলায় যেসব সঙ্গীত-ঘরানার প্রচলন আছে, সেসবের মধ্যে খেয়াল-ঘরানা অন্যতম।

Related Articles

Leave a reply

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

18,780FansLike
700SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles